AkramNadwi

নবী করিম ﷺ-এর পক্ষ থেকে কুরবানি করার বিধান ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/6177

بسم الله الرحمن الرحيم.


——————–

প্রশ্ন:
আজ একটি ভিডিও দেখার সুযোগ হয়, যেখানে এক আলেম ও দ্বীনি মুবাল্লীগ নবী করিম ﷺ-এর পক্ষ থেকে কুরবানি করাকে শিরক, কুফর এবং অবৈধ বলে মন্তব্য করেন। মুহতারাম ও প্রিয় হাফেজ মাহমুদ করিম সাহেব, এলাহাবাদী, উক্ত ভিডিওটি আমার কাছে পাঠিয়ে এর ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চেয়েছেন।

উত্তর:
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য কিছু জিনিস হালাল করেছেন এবং কিছু হারাম করেছেন। এই হালাল জিনিসগুলোর মধ্যে প্রাণীরাও অন্তর্ভুক্ত। সামুদ্রিক প্রাণী এবং পঙ্গপাল (টিড্ডি) ব্যতীত বাকি সব হালাল প্রাণীর জন্য একটি শর্ত রাখা হয়েছে—সেগুলিকে আল্লাহর নামেই জবাই করতে হবে। অর্থাৎ, প্রাণবন্ত জিনিস কেবল তাদের স্রষ্টার নামেই হালাল হবে। পশু জবাই করার সময় কোনো মানুষ বা জিনের নাম নেওয়া হারাম হবে, বরং এটি শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে।

হালাল পশুর মধ্যে কিছু গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী রয়েছে যেগুলিকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে জবাই করা যায়। এই নৈকট্য লাভের একটি রূপ হলো উযহিয়্যাহ, যাকে আমরা কুরবানি বলে থাকি। এটি একটি ইবাদত, এবং অন্যান্য ইবাদতের মতো এটিও শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা হলে তা শিরক হবে।

যদি কেউ পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম না নিয়ে নবী করিম ﷺ-এর নাম নেয়, বা কুরবানির ইবাদত আল্লাহর জন্য না করে নবী করিম ﷺ-এর জন্য করে, তবে নিঃসন্দেহে এটি শিরক হবে।

কিন্তু সাধারণ মুসলিম যখন নবী করিম ﷺ-এর পক্ষ থেকে কুরবানি করেন, তখন এর অর্থ এই নয় যে সে আল্লাহর নাম পরিহার করে নবী করিম ﷺ-এর নাম নিয়ে পশু জবাই করছে, বা সে কুরবানির ইবাদত আল্লাহর পরিবর্তে নবী করিম ﷺ-এর জন্য করছে।

তাহলে তাদের নিয়ত কী থাকে?
সাধারণ ফুকাহার মত হলো, আর্থিক ইবাদত যেমন একজন নিজের পক্ষ থেকে করতে পারেন, তেমনি অন্যের পক্ষ থেকেও করতে পারেন—হোক সে ব্যক্তি জীবিত বা মৃত। আমরা যেমন নিজেদের পক্ষ থেকে সদকা ও খয়রাত করতে পারি, তেমনি অন্যের পক্ষ থেকেও করতে পারি। এবং যখন আমরা অন্যের পক্ষ থেকে সদকা করি, তখন সে তার সাওয়াব লাভ করে, আর আমরা যেহেতু সেই ইবাদতের মাধ্যমে একটি মাধ্যম হচ্ছি, তাই আমরাও সওয়াব লাভ করি। এভাবে হজ ও ওমরাহও অন্যের পক্ষ থেকে করা যায়।

কুরবানি একটি আর্থিক ইবাদত, তাই এটি অন্যের পক্ষ থেকেও করা যায়। যখন সাধারণ মুসলমান নবী করিম ﷺ-এর নামে কুরবানি করে, তখন তার নিয়ত হয় এই যে, এই কুরবানির সওয়াব নবী করিম ﷺ-এর রূহ মোবারক পর্যন্ত পৌঁছুক। এতে নবীর প্রতি ভালোবাসা এবং আনুগত্য প্রকাশ পায়।

এমনকি, নবী করিম ﷺ নিজেও তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন শব্দে হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণনা এসেছে।

একটি বর্ণনায় আছে যে, হযরত আলী (রাযি.) দুটি খাসি কুরবানি করেন—একটি নিজের পক্ষ থেকে এবং আরেকটি নবী করিম ﷺ-এর পক্ষ থেকে। এই হাদিস সুনান আবু দাউদ-এ নিম্নোক্ত শব্দে বর্ণিত হয়েছে:

حدثنا عثمان بن أبي شيبة حدثنا شريك عن أبي الحسناء عن الحكم عن حنش قال رأيت عليا يضحي بكبشين فقلت له ما هذا فقال إن رسول الله صلى الله عليه وسلم أوصاني أن أضحي عنه فأنا أضحي عنه

তাবেঈ হানাশ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আলী (রাঃ)-কে দু’টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কি (দু’টি কেন)? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ওয়াসিয়্যাত করেছেন, আমি যেন তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করি। তাই তাঁর পক্ষ থেকেও কুরবানী করছি।
(আবু দাউদ -২৭৯০)

এই হাদিস অন্যান্য কিতাবেও বর্ণিত হয়েছে। যদিও এর সনদ দুর্বল, তাই এটি হুজ্জত (প্রমাণ) হিসেবে নয়, বরং ইস্তিশহাদ (সমর্থন) হিসেবে গ্রহণযোগ্য। আমরা এটিকে কেবল সমর্থনের জন্য উল্লেখ করেছি।

এ কথা বলা যে, “নবী করিম সা. -এর আমাদের সওয়াবের কী দরকার?”—এটি সঠিক নয়। নবীদের মর্যাদা সর্বদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আজানের দোয়াতেও আমরা তাঁর জন্য নৈকট্য, ফজিলত ও মাকামে মাহমুদের দোয়া করে থাকি। এই দোয়া প্রত্যেক উম্মতীর জন্য সুন্নাত। সহীহ বুখারীতে আছে:

عن جابر بن عبد الله أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: “من قال حين يسمع النداء: اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمدا الوسيلة والفضيلة وابعثه مقاما محمودا الذي وعدته، حلت له شفاعتي يوم القيامة”۔

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে দু‘আ করেঃ ‘হে আল্লাহ্-এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের মালিক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দিন যার অঙ্গীকার আপনি করেছেন’-কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা‘আত লাভের অধিকারী হবে।
(বুখারী – ৬১৪)

এর চেয়েও বড় বিষয় হলো, কুরআন কারীমে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে নবী করিম ﷺ-এর জন্য রহমতের দোয়া করতে:

“يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا”

হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।
(আহজাব: ৫৬)

দরুদ শরীফের ফজিলত সম্পর্কে অগণিত হাদিস রয়েছে।

সারকথা এই যে, নবী করিম ﷺ-এর পক্ষ থেকে কুরবানি করা তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের নিদর্শন, এবং এই কুরবানি প্রদানকারীকেও এর বিরাট সওয়াব প্রদান করা হবে।

——————–

✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *