بسم الله الرحمن الرحيم
::
:: লিখেছেন : ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড।
:: অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।
—
প্রশ্ন:
কয়েকদিন আগে আমি “ইসলামিক পোশাক” বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। এটি পড়ার পর, কুরআনের বিখ্যাত স্কলার নোমান আলী খান আমাকে পাগড়ি এবং টুপি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। এই প্রশ্ন আমাকে বারবার করা হয়েছে। যেহেতু আমি ইতিমধ্যে আমার ইংরেজি বই (আল-ফিকহুল ইসলামী, )প্রথম খণ্ডে এর ফিকহি হুকুম সহ প্রমাণ প্রদান করেছি, আমি বিস্তারিতভাবে এই বিষয়ে লিখতে বিরত ছিলাম।”হঠাৎ শ্রদ্ধেয় হাফিজ মাহমুদ করীম সাহেব এলাহাবাদি (তার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি হোক), আমার গ্রামের এক ব্যক্তির বার্তা পাঠালেন।
বার্তাটি ছিল:
“আসসালামু আলাইকুম, আমি আবু হুযাইফা বিন নাসিম আহমদ, ড. আকরাম সাহেবের জন্মভূমি জমধাঁ, জৌনপুর থেকে। আশা করি আপনি ভালো আছেন। আজকাল মানুষ অপ্রয়োজনীয় চরমপন্থার কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমি নিজেও এই চরমপন্থা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি এবং ড. আকরামের উত্তর থেকে উপকৃত হই এবং আমার ছোট্ট পরিসরে এই বিষয়ে আলোচনা করি। বর্তমানে আমার প্রশ্ন টুপির বিষয়ে। প্রশ্নটি হলো: ইসলামে টুপির গুরুত্ব কী? কিছু লোক দাড়িকে আরবদের অভ্যাস ও সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করে এর গুরুত্ব কমিয়ে দেয়, যদিও আমার জ্ঞানের পরিধি অনুযায়ী হাদিসে দাড়ি সম্পর্কে স্পষ্ট হুকুম রয়েছে। কিন্তু টুপির বিষয়টি কি আসলেই এরকম যে এটি শরিয়াহের কোনো বিষয় নয়, বরং এটি আরব সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত? কারণ নবী (সা.)-কে প্রায়ই পাগড়ি এবং টুপি পরতে দেখা গেছে। এই ভিত্তিতে আলেমগণ (বিশেষত হিন্দ ও পাকিস্তানের আলেমগণ) এটিকে সুন্নাতে আদত এবং মুস্তাহাব বলে মেনে নিয়ে বাস্তবে শরিয়তের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। টুপির ফিকহি দৃষ্টিকোণ কী এবং শরিয়াতি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এর গুরুত্ব কী? দয়া করে হাদিস ও বর্ণনার আলোকে শরিয়াহর দিকনির্দেশনা প্রদান করুন।”
—
উত্তর:
গত প্রবন্ধে (ইসলামী পোশাক) এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে শরিয়তের পোশাকের দুটি শর্ত রয়েছে: এক, তা আউরাহ ঢেকে রাখতে হবে, এবং দুই, তা বৈধ হতে হবে। এই প্রবন্ধ পড়ার পর এটা কারো কাছেই অস্পষ্ট থাকতে পারে না যে টুপি পরা বা না পরা, পাগড়ি বাঁধা বা না বাঁধা, রুমাল ঝুলানো বা না ঝুলানো—এসবই বিভিন্ন সমাজ ও সময়ের সংস্কৃতি এবং রীতিনীতির অংশ। যে কেউ ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারে, এতে কোনো সওয়াবও নেই এবং কোনো গুনাহও নেই। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে এই স্পষ্ট বিষয়টি স্পষ্ট নয়, এবং অসংখ্য ব্যস্ততার মধ্যেও এই স্পষ্ট বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে।
প্রথমে “আউরাহ” শব্দের অর্থ বুঝে নিন। এটি একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো দেহের সেই অংশ যা ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। সাধারণ ফুকাহাদের মতে, পুরুষদের আউরাহ হলো গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত। হানাফি মাযহাবের মতে, গলা আউরাহর অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে হাঁটু আউরাহর অন্তর্ভুক্ত।
নারীদের মাথা আউরাহ, এ বিষয়ে সকল ফুকাহাদের ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু পুরুষদের মাথা কি আউরাহ? দীর্ঘ গবেষণা ও অনুসন্ধানের পরও আমি এমন কোনো ফকীহ বা আলেমকে পাইনি, যিনি পুরুষদের মাথাকে আউরাহ মনে করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, উপমহাদেশে এমন একটি অজ্ঞতার প্রসার ঘটেছে যার কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণ মানুষের মনে এটি গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে নামাজে পুরুষদের মাথা আউরাহ। বারবার দেখা গেছে, কেউ খালি মাথায় নামাজ শুরু করলে কোনো ব্যক্তি এসে হঠাৎ তার মাথায় টুপি রেখে দেবে।
কিছু মানুষের ধারণা আছে যে উলামা এবং ইসলামিক মাদ্রাসার ছাত্রদের মাথা আউরাহ। তারা বলেন, “আলেমের মাথা আউরাহ” অর্থাৎ, আলেমের মাথা ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক । কোনো আলেম বা ছাত্র মাদ্রাসার চত্বরে মাথা খুলে রাখার সাহস করে না। এটি সেই অজ্ঞতার ফল, যা সাম্প্রতিক যুগে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সময় সময় শোনা যায় যে নামাজে টুপি বা পাগড়ি পরা সুন্নত। কিছু মানুষ জানে যে টুপি বা পাগড়িকে সুন্নত হিসেবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তাই তারা এটিকে মুস্তাহাব (প্রত্যাশিত বা পছন্দনীয়) বলে বিবেচনা করে।
কুরআন মজিদে এমন কোনো আয়াত নেই যেখানে মুসলমানদের টুপি পরা বা পাগড়ি পরার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কোনো হাদিসও নেই, যেখানে রাসূল সা. নামাজের সময় টুপি পরা বা পাগড়ি পরার গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে নামাজের সুন্নত ও মুস্তাহাবগুলোর মধ্যে মাথা ঢাকার কোনো অধ্যায় নেই, তেমনি নামাজের মাকরূহগুলোর মধ্যে মাথা খোলা রাখাকে মাকরূহ বলা হয়েছে এমন কিছু নেই।
بسم الله الرحمن الرحيم
::
:: লিখেছেন : ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড।
:: অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।
—
প্রশ্ন:
কয়েকদিন আগে আমি “ইসলামিক পোশাক” বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। এটি পড়ার পর, কুরআনের বিখ্যাত স্কলার নোমান আলী খান আমাকে পাগড়ি এবং টুপি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। এই প্রশ্ন আমাকে বারবার করা হয়েছে। যেহেতু আমি ইতিমধ্যে আমার ইংরেজি বই (আল-ফিকহুল ইসলামী, )প্রথম খণ্ডে এর ফিকহি হুকুম সহ প্রমাণ প্রদান করেছি, আমি বিস্তারিতভাবে এই বিষয়ে লিখতে বিরত ছিলাম।”হঠাৎ শ্রদ্ধেয় হাফিজ মাহমুদ করীম সাহেব এলাহাবাদি (তার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি হোক), আমার গ্রামের এক ব্যক্তির বার্তা পাঠালেন।
বার্তাটি ছিল:
“আসসালামু আলাইকুম, আমি আবু হুযাইফা বিন নাসিম আহমদ, ড. আকরাম সাহেবের জন্মভূমি জমধাঁ, জৌনপুর থেকে। আশা করি আপনি ভালো আছেন। আজকাল মানুষ অপ্রয়োজনীয় চরমপন্থার কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমি নিজেও এই চরমপন্থা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি এবং ড. আকরামের উত্তর থেকে উপকৃত হই এবং আমার ছোট্ট পরিসরে এই বিষয়ে আলোচনা করি। বর্তমানে আমার প্রশ্ন টুপির বিষয়ে। প্রশ্নটি হলো: ইসলামে টুপির গুরুত্ব কী? কিছু লোক দাড়িকে আরবদের অভ্যাস ও সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করে এর গুরুত্ব কমিয়ে দেয়, যদিও আমার জ্ঞানের পরিধি অনুযায়ী হাদিসে দাড়ি সম্পর্কে স্পষ্ট হুকুম রয়েছে। কিন্তু টুপির বিষয়টি কি আসলেই এরকম যে এটি শরিয়াহের কোনো বিষয় নয়, বরং এটি আরব সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত? কারণ নবী (সা.)-কে প্রায়ই পাগড়ি এবং টুপি পরতে দেখা গেছে। এই ভিত্তিতে আলেমগণ (বিশেষত হিন্দ ও পাকিস্তানের আলেমগণ) এটিকে সুন্নাতে আদত এবং মুস্তাহাব বলে মেনে নিয়ে বাস্তবে শরিয়তের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। টুপির ফিকহি দৃষ্টিকোণ কী এবং শরিয়াতি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এর গুরুত্ব কী? দয়া করে হাদিস ও বর্ণনার আলোকে শরিয়াহর দিকনির্দেশনা প্রদান করুন।”
—
উত্তর:
গত প্রবন্ধে (ইসলামী পোশাক) এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে শরিয়তের পোশাকের দুটি শর্ত রয়েছে: এক, তা আউরাহ ঢেকে রাখতে হবে, এবং দুই, তা বৈধ হতে হবে। এই প্রবন্ধ পড়ার পর এটা কারো কাছেই অস্পষ্ট থাকতে পারে না যে টুপি পরা বা না পরা, পাগড়ি বাঁধা বা না বাঁধা, রুমাল ঝুলানো বা না ঝুলানো—এসবই বিভিন্ন সমাজ ও সময়ের সংস্কৃতি এবং রীতিনীতির অংশ। যে কেউ ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারে, এতে কোনো সওয়াবও নেই এবং কোনো গুনাহও নেই। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে এই স্পষ্ট বিষয়টি স্পষ্ট নয়, এবং অসংখ্য ব্যস্ততার মধ্যেও এই স্পষ্ট বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে।
প্রথমে “আউরাহ” শব্দের অর্থ বুঝে নিন। এটি একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো দেহের সেই অংশ যা ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। সাধারণ ফুকাহাদের মতে, পুরুষদের আউরাহ হলো গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত। হানাফি মাযহাবের মতে, গলা আউরাহর অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে হাঁটু আউরাহর অন্তর্ভুক্ত।
নারীদের মাথা আউরাহ, এ বিষয়ে সকল ফুকাহাদের ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু পুরুষদের মাথা কি আউরাহ? দীর্ঘ গবেষণা ও অনুসন্ধানের পরও আমি এমন কোনো ফকীহ বা আলেমকে পাইনি, যিনি পুরুষদের মাথাকে আউরাহ মনে করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, উপমহাদেশে এমন একটি অজ্ঞতার প্রসার ঘটেছে যার কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণ মানুষের মনে এটি গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে নামাজে পুরুষদের মাথা আউরাহ। বারবার দেখা গেছে, কেউ খালি মাথায় নামাজ শুরু করলে কোনো ব্যক্তি এসে হঠাৎ তার মাথায় টুপি রেখে দেবে।
কিছু মানুষের ধারণা আছে যে উলামা এবং ইসলামিক মাদ্রাসার ছাত্রদের মাথা আউরাহ। তারা বলেন, “আলেমের মাথা আউরাহ” অর্থাৎ, আলেমের মাথা ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক । কোনো আলেম বা ছাত্র মাদ্রাসার চত্বরে মাথা খুলে রাখার সাহস করে না। এটি সেই অজ্ঞতার ফল, যা সাম্প্রতিক যুগে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সময় সময় শোনা যায় যে নামাজে টুপি বা পাগড়ি পরা সুন্নত। কিছু মানুষ জানে যে টুপি বা পাগড়িকে সুন্নত হিসেবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তাই তারা এটিকে মুস্তাহাব (প্রত্যাশিত বা পছন্দনীয়) বলে বিবেচনা করে।
কুরআন মজিদে এমন কোনো আয়াত নেই যেখানে মুসলমানদের টুপি পরা বা পাগড়ি পরার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কোনো হাদিসও নেই, যেখানে রাসূল সা. নামাজের সময় টুপি পরা বা পাগড়ি পরার গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে নামাজের সুন্নত ও মুস্তাহাবগুলোর মধ্যে মাথা ঢাকার কোনো অধ্যায় নেই, তেমনি নামাজের মাকরূহগুলোর মধ্যে মাথা খোলা রাখাকে মাকরূহ বলা হয়েছে এমন কিছু নেই।