AkramNadwi

কুরআন মজীদের তিনটি প্রশ্ন :

بسم الله الرحمن الرحيم

::

✍️ লিখেছেন: ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

নয়া দিল্লির মাওলানা আবু ফাহাদ নদভী তিনটি প্রশ্ন করেছেন, যার উত্তর নিচে প্রদান করা হলো:

❓ প্রশ্ন ১:
কুরআনের দুটি বিন্যাস রয়েছে:
নাযিলের ক্রমানুসারে (نزولی ترتیب)
এবং লিখিত ক্রমানুসারে (تدوینی ترتیب)।
তাহলে কি কুরআনকে নাযিলের ক্রমানুসারে রাখাই তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সঠিক হতো না? আপনার মতামত ও বোঝার ভিত্তিতে এই ক্রমানুসারে পরিবর্তনের হিকমত ও কারণগুলো কী হতে পারে?

✅ উত্তর ১:
কুরআনুল কারিম একটি “কিতাব” , এই কথা স্বয়ং কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে:
“আলিফ, লাম, মীম। এই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত।” (সূরা আল-বাকারা ১-২)
“আর তিনি তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন।” (সূরা আল-বাকারা ১২৯)

প্রতিটি কিতাবের একটি মূল বিষয় থাকে এবং এই বিষয়টি বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গঠিত যা ক্রমান্বয়ে উপস্থাপন করা হয়। কুরআনও এই কাঠামো অনুসরণ করে:
1️⃣ ভূমিকা: সূরা আল-ফাতিহা
2️⃣ গ্রুপ: বিভিন্ন সূরার বিভাগ
3️⃣ আয়াত: প্রতিটি সূরা আয়াত নিয়ে গঠিত

বর্তমান বিন্যাস কেন ?
কুরআন আল্লাহর সাথে একটি সুসংগঠিত রূপে বিদ্যমান, এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশনা অনুযায়ী মহানবী (সাঃ) এই আসমানি বিন্যাস অনুসারে কোরআন নামাজে তিলাওয়াত করেছেন এবং এটি লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেছেন। এই বিন্যাসের সুবিধা হলো, কোরআনের অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপট অক্ষুণ্ণ থাকে এবং এই অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটের সাহায্যে কোরআনকে বুঝা সহজ হয়।

⏳ নাযিলের ক্রম বিন্যাস :
নবী মুহাম্মদ ﷺ এর পরিস্থিতি অনুযায়ী আয়াত নাযিল হতো এবং এতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হতো। এই বিষয়টিকে শানে নুজুল (নাযিলের কারণ) বলা হয়।

বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই নাযিলের ক্রম ধরে রাখার প্রয়োজন নেই। স্কলারগণ শ্রোতার প্রয়োজন অনুসারে আয়াত নির্বাচন করেন। নাযিলের ক্রম জানা কুরআন বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক, তবে বর্তমান বিন্যাস অভ্যন্তরীণ সামঞ্জস্য বজায় রাখে।

উপসংহার:
কুরআন একটি সুসংগঠিত কিতাব, এবং এই ক্রমে এটিকে সংরক্ষণ করাই সঠিক। অন্যথায়, পুরো সিস্টেম বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রসঙ্গ দুটোই কুরআন বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক।

❓ প্রশ্ন ২:
আমার শিক্ষক ইসলামী ফিকহে (فقہ) বিশেষজ্ঞ ছিলেন। যখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তখন তিনি আমাকে ফিকহে মনোযোগ দিতে বললেন। কেন তিনি কুরআনের কথা উল্লেখ করলেন না? সাধারণভাবে, কেন আমাদের প্রতিষ্ঠানে কুরআনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় না? এর কারণ কী, ক্ষতি কী, এবং এর প্রতিকার কী হতে পারে?

✅ উত্তর ২:

ইসলামে কুরআন একমাত্র হেদায়েতের বই, এবং সুন্নাহ এর ব্যাখ্যা। প্রাথমিক যুগে এই দুটি উৎসই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফিকহ হলো কিভাবে বিভিন্ন সময়ে উলামায়ে কেরাম কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। মানুষের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়, তাই উলামায়ে কেরামের সমাধানও পরিবর্তিত হয়।

পাঠ্যক্রমের সঠিক বিন্যাস:
কুরআন মূল উৎস, সুন্নাহ এটি ব্যাখ্যা করে, এবং ফিকহের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের শিক্ষাক্রমেও এই অনুক্রম অনুসরণ করা উচিত। ফিকহ মানব চিন্তার ফল এবং এটি সময় ও প্রেক্ষাপট দ্বারা সীমাবদ্ধ।

বর্তমান অবস্থা:
আপনার শিক্ষকের পরামর্শ একটি ঐতিহ্যগত মনোভাবকে প্রতিফলিত করে, যা মুসলমানদের কুরআন ও সুন্নাহ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। কুরআনকে কেবল তারাবির বই (কিতাব) হিসেবে দেখা হয়েছে। এটি কোনো সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দেয় না। নবী মুহাম্মদ ﷺ এর সুন্নাহর গুরুত্বও হ্রাস পেয়েছে, এবং হাদিসকেও ফিকহের অধীন করা হয়েছে, যা নবুওতের কদর করা হয় না।

❓ প্রশ্ন ৩:
কুরআনের বর্ণনায় উপমা ব্যবহার করা হয়েছে (امثال), যেমন বলা হয়েছে: “আর আল্লাহ মানুষের জন্য উদাহরণ দেন।” (ইব্রাহিম -25)
তবে কি কোরআনের বর্ণনা কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতীকী অর্থে হতে পারে?

✅ উত্তর ৩:
কুরআন আল্লাহর ওহী, এবং ওহীর অর্থ হলো পরিষ্কার করা। আল্লাহ তাঁর আদেশ ও নিষেধাবলী পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। কুরআনকে বারবার “আল-কিতাব, আল-মুবীন” (পরিষ্কার কিতাব) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাথমিক বোঝাপড়া:
নবী ﷺ এবং সাহাবীগণ কুরআনকে একটি পরিষ্কার কিতাব হিসেবে বুঝতেন। কিন্তু শিয়া ও কিছু সুফি কুরআনকে একটি সাংকেতিক বই হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এতে কুরআনের স্পষ্ট ভাষা রহস্যময় ও জটিল হয়ে গেছে।

❌ উপসংহার:
কুরআনকে প্রতীকী মনে করা আল্লাহর রহমতকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয় এবং গোমরাহির দরজা খুলে দেয়। আল্লাহ আমাদের সকল ফিতনা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

https://t.me/DrAkramNadwi/5520

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *