AkramNadwi

“দোয়ার সীমারেখা”

بسم الله الرحمن الرحيم.

✍️ লেখক: ড. মোহাম্মদ আকরাম নদভী
অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা :
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

প্রশ্ন :
লাহোরের প্রখ্যাত আলেম, মাওলানা ফজলুর রহমান মাহমুদ একটি প্রশ্ন পাঠিয়েছেন:

> “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, সম্মানিত শায়খ। আশা করি ভালো আছেন।
আমার একটি প্রশ্ন :
আল্লাহ তাআলা দোয়ার মাধ্যমে অসুখ-বিসুখ দূর করেন, এবং বড় অসুখও দোয়ার মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু যদি কারো হাত বা পা কেটে যায়, তবে কেন তা দোয়ার মাধ্যমে ঠিক হয় না?”

উত্তর :

আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখছি, যাতে দোয়ার ব্যাপারে ভুল ধারণাগুলি দূর হয়। আমি এ বিষয়ে পূর্বে আরবি ও উর্দুতে কয়েকটি নিবন্ধ লিখেছি; পুনরায় সেগুলি পড়ে দেখুন, কারণ এখানে নতুন কিছু বিষয় আলোচনা করা হবে যা আপনার প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত।

:: আল্লাহর ক্ষমতা :
এটি মনের মধ্যে গভীরভাবে বসিয়ে নিতে হবে যে আল্লাহর সকল গুণাবলির মতই তাঁর ক্ষমতা অসীম। কোনো সৃষ্টির ক্ষমতার সাথে এটি তুলনা করা যায় না। তিনি যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করতে পারেন, যা ইচ্ছা তা প্রদান করতে পারেন এবং যা ইচ্ছা তা রোধ করতে পারেন। পবিত্র কুরআনে বারবার তাঁর ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন:

> “আল্লাহ এমন নন যে, আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবীর কোন কিছুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে; তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। ” (সূরা ফাতির: ৪৪)

আল্লাহর প্রজ্ঞা:
যেমন আল্লাহর ক্ষমতা অসীম এবং সৃষ্টির দ্বারা বোধগম্য নয়, তেমনি তাঁর প্রজ্ঞাও অসীম। আল্লাহর প্রজ্ঞার গুরুত্ব বুঝে আমরা উপলব্ধি করতে পারি কেন তিনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছু জিনিস করেন না। প্রজ্ঞার কিছু অংশ আল্লাহর পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্বের সাথে সম্পর্কিত, যেমন “আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ” এবং অনুরূপ আয়াত। এই প্রজ্ঞাকে না বুঝতে পারার কারণে কিছু মতবাদের অনুসারীরা ভুল পথে গিয়েছেন।

প্রজ্ঞার আরেকটি অংশ সৃষ্টির নির্ধারিত সীমা থেকে এসেছে। তিনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এমন কিছু করেন না যা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। আল্লাহ তাঁর দয়া ও করুণার কারণে মানুষকে এ ধরনের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেন।

আল্লাহর নিয়ম (সুন্নাহ) :
সুন্নাহ হল সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর সৃষ্ট ও নির্দেশিত পছন্দের পন্থা। এই divine বা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মের ধারাবাহিকতা তাঁর রহমত ও ন্যায়ের প্রতিফলন। মাঝে মাঝে, আল্লাহ নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কারণে কিছু divine নিয়ম স্থগিত করেন, যা তাঁর নবি-রাসুলদের অলৌকিকতার মধ্যে দেখা যায়।

দোয়া :
দোয়া ইবাদতের অংশ। একজন মুমিন তার প্রয়োজন কেবল আল্লাহর কাছে নিবেদন করে, যিনি কল্যাণ প্রদানকারী এবং অনিষ্টকে প্রতিহতকারী। এক মুমিনের জন্য প্রয়োজন তার সীমার মধ্যে থাকা এবং অহংকার না করা, যেন সে আল্লাহর থেকে এমন কিছু দাবি না করে যা তাঁর নির্ধারিত নিয়মের বাইরে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যেন আল্লাহর কাছে নবি হওয়ার দোয়া না করে, কিংবা কোনো পুরুষ যেন নারী হওয়ার দোয়া না করে। এ প্রসঙ্গে আবু দাউদ হাদিসে এসেছে:

> “এই উম্মতের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা পবিত্রতা ও দোয়ায় সীমা লঙ্ঘন করবে।”

তবে কেউ এই দোয়া করতে পারে, যেমন: “হে আল্লাহ, আমার হাত কেটে গেছে, আমাকে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে দিও না। আমাকে কৃত্রিম হাত ব্যবহারে সহায়তা কর।”

শেষ কথা :
সীমা লঙ্ঘন না করে, যা চাওয়া হোক তা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে, তা যত ছোট বা বড়ই হোক। দোয়ার অগণিত উপকার রয়েছে, যা আমি আমার বিভিন্ন লেখায় আলোচনা করেছি, এবং আলেমদের কিতাবেও এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে।

আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর ভয় দান করুন, আমাদের নেক বানান, এবং ঈমানের উপর আমাদের পরিসমাপ্তি দিন।

https://t.me/DrAkramNadwi/5569

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *