AkramNadwi

ভূমিকা ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/6215


————–
بسم الله الرحمن الرحيم.

সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তাআলার, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলদের শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি।

আল্লাহ তাআলা মানবজীবনকে বিভিন্ন সম্পর্ক ও সংযোগের এক অপরূপ চিত্ররূপে সাজিয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র, মহান ও তুলনাহীন সম্পর্ক হলো—পিতা-মাতার। তাঁরাই এমন সত্তা, যাঁদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও সীমাহীন ত্যাগের ছায়াতলে মানুষ লালিত-পালিত হয়, সচেতনতা ও জ্ঞানের পথ অতিক্রম করে এবং জীবনের পথে এগিয়ে চলে।

ইসলাম ধর্ম পিতা-মাতার অধিকারের বিষয়ে অসাধারণ গুরুত্ব প্রদান করেছে এবং তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার, আনুগত্য ও শ্রদ্ধা, এবং খেদমত ও বিশ্বস্ততাকে ঈমানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে গণ্য করেছে।

পবিত্র কুরআনে বহুবার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও তাওহীদের পরই পিতা-মাতার অধিকার বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন:
“তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো…” (সূরা বনী ইসরাইল: ২৩)

তেমনিভাবে হাদীস শরীফেও পিতা-মাতার অধিকারসমূহকে বারবার এবং বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজকের এই অস্থির ও অবক্ষয়গ্রস্ত যুগে—যেখানে ভোগবাদী প্রতিযোগিতা মানবিক মূল্যবোধকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে—পিতা-মাতার মর্যাদা ও সম্মান ক্রমশ ভুলে যাওয়া হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম পশ্চিমা সংস্কৃতির ঝলমলে প্রভাবের মাঝে নিজেদের নৈতিক ও পারিবারিক দায়িত্বগুলো থেকে উদাসীন হয়ে পড়ছে।

এমত পরিস্থিতিতে একান্ত প্রয়োজন ছিল পিতা-মাতার মর্যাদা, অধিকার এবং তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার সংক্রান্ত শরঈ বিধানসমূহকে কিতাব ও সুন্নাহর আলোকে জনসমক্ষে তুলে ধরা, যাতে মুসলিম সমাজ এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সমাজে এক জাগরণমূলক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

সামনে উপস্থিত এই গ্রন্থ “পিতা-মাতার অধিকার—কুরআন ও হাদীসের আলোকে” এই প্রয়োজন মেটানোর একটি আশাব্যঞ্জক প্রয়াস, যা লিখেছেন আমাদের বিদ্বান, চিন্তাশীল ও মেধাবী আলিম, প্রিয়ভাই মুহাম্মদ সালমান বজনৌরী নাদভী (হাফিযাহুল্লাহ), যিনি দারুল উলূম নাদওয়াতুল উলামার একজন সম্মানিত শিক্ষক।

মাওলানা সাহেব পিতা-মাতার অধিকার বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে একটি সংক্ষিপ্ত, যুক্তিপূর্ণ ও গভীর ভাবনার যোগ্য রচনা উপস্থাপন করেছেন, যেখানে শুধু ফিকহী ও শরঈ দিকগুলোই নয়, বরং নৈতিক, প্রশিক্ষণমূলক ও সামাজিক দিকগুলোকেও চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর লেখনী সহজ, প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী শৈলীতে পাঠকের অন্তর ও মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে এবং পিতা-মাতার খেদমত, আনুগত্য ও তাঁদের দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রকৃত সচেতনতা জাগায়।

এই গ্রন্থটি কেবল একটি বিদ্বেষমূলক রচনা নয়, বরং এটি একটি সংস্কারমূলক বার্তা, একটি চিন্তামূলক আহ্বান এবং একটি নৈতিক আন্দোলন, যা প্রতিটি ব্যক্তি, পরিবার ও শ্রেণির কাছে পৌঁছানো উচিত। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের উচিত এ গ্রন্থ থেকে দিকনির্দেশনা গ্রহণ করা, যাতে তারা পিতা-মাতার মর্যাদা উপলব্ধি করে, তাঁদের খেদমতকে নিজের গৌরব মনে করে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভের সেই ধাপগুলো অতিক্রম করতে পারে, যা পিতা-মাতার সন্তুষ্টি ও দোয়া ছাড়া অসম্ভব।

আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি, তিনি যেন এ গ্রন্থকে কবুল করেন, একে পাঠকদের জন্য হেদায়াত ও পথনির্দেশনার মাধ্যম বানান, এবং সম্মানিত মাওলানা মুহাম্মদ সালমান নাদভী (হাফিযাহুল্লাহ)-এর এ প্রয়াসকে তাঁর দরবারে কবুল করে নেন।

আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত তাঁর এই জ্ঞানচর্চাকে আরও দীর্ঘস্থায়ী ও ফলপ্রসূ করুন এবং তাঁকে দীনের ও জাতির খেদমতের জন্য আরও বেশি অবিচলতা, আন্তরিকতা ও সফলতা দান করুন।

وَاللهُ وَلِيُّ التَّوْفِيق، وَهُوَ الْهَادِي إِلَى سَوَاءِ السَّبِيل۔

——————–

✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *