https://t.me/DrAkramNadwi/2339
بسم الله الرحمن الرحيم.
——————–
ভারতে ঈদুল আজহাকে “বকরি ঈদ” বলা হয়। সাধারণত গ্রামাঞ্চলের ভাষায় “قاف” (ক্বাফ) উচ্চারণ হয় “کاف” (কাফ)-এর মতো। শৈশবে আমরা ভাবতাম, যেহেতু এই ঈদে কোরবানি দেওয়া হয়, তাই বকরার কোরবানির উপযোগিতায় একে “বকর-ঈদ” বলা হয়।
কিন্তু যখন আমরা আরবি ভাষা পড়া শুরু করলাম এবং জানতে পারলাম যে এর সঠিক উচ্চারণ “বাক্র ঈদ” (بقر عيد), তখন বিষয়টি স্পষ্ট হলো—এই নামের অর্থ হলো, এমন ঈদ যাতে “গরু” কোরবানি দেওয়া হয়। যেহেতু গরু একটি বড় প্রাণী, তাই ঈদের নামকরণেও সেটার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মাঝেমধ্যে মনে হয়—হিন্দুরা গরুকে পবিত্র মনে করে, এমনকি তার পূজা পর্যন্ত করে। হয়তো এই চিন্তা থেকেও এই ঈদের নাম “বকর-ঈদ” রাখা হয়েছে, যাতে গরুকে পবিত্র মনে করার মতো কোনো ধারণা মুসলমানদের মধ্যে ঢুকে না পড়ে।
আর শিরক (অংশীদারিত্বের বিশ্বাস)-এর স্পষ্ট বিরোধিতা প্রকাশের জন্য এই দিনের চেয়ে উপযুক্ত সময় আর কী হতে পারে—যে দিন হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর একমাত্র পুত্রকে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন!
আজকাল ভারতে যে ধরণের ধর্মীয় উগ্রবাদকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার যেভাবে একে একে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে—এই পরিবেশে “গরু কোরবানি” একটি বড় অপরাধে পরিণত হয়েছে।
ফলে কিছু মুসলমান এমন ভাবনায় পড়ে গেছেন যেন দূর থেকেই কোনো অভিযোগ না আসে। এ কারণেই তারা এখন “বকর-ঈদ” না লিখে “বকরা-ঈদ” লেখা শুরু করেছেন।
প্রশ্ন হলো—যদি আমরা ঈদুল ফিতরকে “ঈদুল ফিতর” বলি, তাহলে ঈদুল আজহাকে “ঈদুল আজহা” বলা হয় না কেন?
আর যদি এটা উর্দু ভাষায় কিছুটা কঠিন মনে হয়, তাহলে অন্তত ফারসি শব্দ “ঈদ-ই কুরবান” প্রচলিত হওয়া উচিত ছিল। অবশ্য কিছু মানুষ কখনো কখনো একে “ঈদ কুরবান” বলেও থাকেন।
“বকরি ঈদ” শব্দের উৎপত্তি বা কারণ সম্পর্কে কোনো গবেষণা আমার চোখে পড়েনি। তাই এই প্রবন্ধে কিছুটা অনুমানের ভিত্তিতে আলোচনা করা হচ্ছে।
এই অনুমান অনুযায়ী বলা যেতে পারে—”বকর ঈদ” শব্দটি সম্ভবত শিয়াদের একটি রীতি বা উৎসবের জবাবে এসেছে।
শিয়া মতবাদ অনেকাংশেই বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে। তাদের বহু উৎসব-অনুষ্ঠানও ঈর্ষা ও ঘৃণার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
তারা ৯ রবিউল আউয়াল তারিখটিকে “ঈদুল বাক্র” (عيد البقر) হিসেবে উদযাপন করে। “বক্র” শব্দের অর্থ—পেট চিরে ফেলা।
শিয়ারা সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, খলিফা রাশেদীন ও আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.)-এর প্রতি বিশেষ বিদ্বেষ পোষণ করে। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, আবু লু’লু ফেইরুজ নামক একজন ৯ রবিউল আউয়াল তারিখে হযরত উমর (রাযি.)-কে শহীদ করে, এবং এই অভিশপ্ত ব্যক্তি তাঁর পবিত্র উদর (পেট) ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
এই দিনটিকে তারা আনন্দের দিন মনে করে এবং “ঈদুল বাক্র”—অর্থাৎ “পেট চিরে ফেলার ঈদ” নামে উদযাপন করে।
হতে পারে কেউ এই প্রশ্ন তুলবে—হযরত উমর (রাযি.)-এর শাহাদাত তো রবিউল আউয়ালে হয়নি, বরং তা হয়েছিল যিলহজ্জ মাসে। তাহলে শিয়ারা কেন রবিউল আউয়ালে “ঈদুল বাক্র” পালন করে?
এই প্রশ্নটি আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। খ্রিস্টানরাও তো ডিসেম্বর মাসে ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন পালন করে, যদিও সঠিক দিন তা নয়।
ঠিক তেমনি, অন্য ভ্রান্ত ধর্ম ও গোষ্ঠীগুলোও ভুল তারিখে তাদের উৎসব পালন করে থাকে। কারণ হলো—অনেক সময় কোনো পুরনো উৎসব চলছিল, আর সেটাকে ধর্মীয় বা লোকজ রূপ দেওয়ার জন্য নতুন একটি নাম দিয়ে দেওয়া হয়। যেমন: ক্রিসমাস আসলে পৌত্তলিকদের উৎসব ছিল, পরে তাকে নতুন নাম দেওয়া হয়।
ঠিক তেমনভাবেই ৯ রবিউল আউয়াল তারিখে কোনো উৎসব আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, আর হযরত উমর (রাযি.)-এর প্রতি শত্রুতা প্রকাশের জন্য শিয়া আলেম ও মুজতাহিদরা সেটার নাম দিয়ে দেয় “ঈদুল বাক্র”।
এটা স্পষ্ট যে “ঈদুল বাক্র” নামের এই পটভূমি সুন্নি আলেমদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক ছিল। তাই হয়তো তাঁরা এই “ঈদুল বাক্র” নামটির ব্যাখ্যা পাল্টাতে গিয়ে এটিকে “বকর-ঈদ” বলতে শুরু করেন, যেন “বকর” অর্থ হয় “গরু”—পেট চিরে ফেলার অর্থে নয়।
জেনে রাখা উচিত যে, “বকর-ঈদ” শব্দটি কেবল ভারতীয় উপমহাদেশেই ব্যবহার হয়।
সত্যি কথা হলো—শিয়াদের সংশোধন সম্ভব নয়। তাদের কত ভুলের প্রতিবাদ করা যাবে?
ঈদুল আজহার মতো মহান একটি উপলক্ষকে ভ্রান্ত চিন্তা বা বিভ্রান্ত গোষ্ঠীর পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য এইরকম আজব ও ভুল নামে স্মরণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আমাদের উচিত ইসলামি নামকরণই প্রচলন করা—
আর তা হলো: ঈদুল আজহা।
এর অনুবাদ বা অর্থ: কোরবানির ঈদ।
——————–
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।