AkramNadwi

সুরা আহযাব নিয়ে একটি প্রশ্ন ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/6082

بسم الله الرحمن الرحيم.


——————–

প্রশ্ন:
খ্যাতনামা কুরআন গবেষক উস্তাদ নোমান আলী খান আমাকে সুরা আহযাবে আল্লাহ তাআলার এই বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন:

হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার সেই স্ত্রীগণকে, যাদেরকে তুমি তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়েছ।  তাছাড়া আল্লাহ গনীমতের যে সম্পদ তোমাকে দান করেছেন তার মধ্যে যে দাসীগণ তোমার মালিকানায় এসেছে তাদেরকেও (তোমার জন্য হালাল করেছি) এবং তোমার চাচার কন্যাগণ, ফুফুর কন্যাগণ, মামার কন্যাগণ ও খালার কন্যাগণকেও, যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে। তাছাড়া কোন মুমিন নারী বিনা মোহরানায় নিজেকে নবীর নিকট (বিবাহের জন্য) পেশ করলে, নবী যদি তাকে বিবাহ করতে চায়, তাকেও (হালাল করেছি)। বিশেষভাবে তোমারই জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়। মুমিনদের স্ত্রীগণ ও তাদের দাসীদের সম্পর্কে তাদের প্রতি যে বিধান আমি আরোপ করেছি, তা আমার ভালোভাবেই জানা আছে। (আমি তা থেকে তোমাকে ব্যতিক্রম রেখেছি এজন্য), যাতে তোমার কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
– স্ত্রীদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার পালা তুমি পিছিয়ে দিতে পার, যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পার; যাকে তুমি সরিয়ে রেখেছ তাকে যদি কামনা কর তাতে তোমার কোন অপরাধ নেই; এটা নিকটতর যে, তাদের চক্ষু শীতল হবে, তারা কষ্ট পাবে না এবং তুমি তাদের যা দিয়েছ তাতে তারা সবাই সন্তুষ্ট হবে। আর তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, পরম সহনশীল।

(সুরা আহযাব ৫০-৫১)

এই আয়াতদ্বয়ের উদ্দেশ্য কী?

আর এই আয়াতের পরপরই এসেছে:

“অতঃপর আর কোন নারী তোমার জন্য বৈধ নয়। আর তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে চমৎকৃত করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সব বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখেন। 
(সুরা আহযাব ৫২)

আর এখানে “وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ” (যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে) — এই বাক্যাংশের অর্থ কী?

উত্তর:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের

পঞ্চম বছরে, যেদিন খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেদিনই তিনি জয়নব বিনতে জাহাশকে বিবাহ করেছিলেন। সুরা আহযাবে যেমন খন্দকের যুদ্ধের কথা এসেছে, তেমনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জয়নব রা. এর সঙ্গে বিবাহের ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি প্রথমে বিবাহ করেন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে। তাঁর মৃত্যুর পর বিবাহ করেন সাওদাহ বিনতে যামআহ ও আয়েশা বিনতে আবু বকরকে। এরপর হাফসা বিনতে উমরকে, তারপর জয়নব বিনতে খুজাইমাকে, যিনি কয়েক মাসের মধ্যেই ইন্তিকাল করেন। এরপর উম্মু সালামা রা.-কে বিবাহ করেন। সুতরাং যখন আয়াত নাজিল হয়:

“তোমরা চাইলে নারীদের মধ্যে থেকে দুই, তিন বা চারজন করে বিবাহ করো।”
(সুরা নিসা ৩)

তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের বলেছিলেন: “যার চারজনের বেশি স্ত্রী আছে, সে চারজন বেছে রাখুক এবং বাকিদেরকে ছেড়ে দিক।” আর তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অধীনে চারজনই ছিলেন, তাই তাঁকে কাউকে ছেড়ে দিতে হয়নি।

সুরা আহযাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ নবুয়তের কাজে তাঁর সাথে অংশগ্রহণ করতেন। যেমন বলা হয়েছে:

“আর তোমাদের ঘরে যা কিছু আল্লাহর আয়াত ও হিকমত থেকে তেলাওয়াত করা হয়, তা স্মরণ করো।”
(সুরা আহযাব ৩৪)

এই অংশগ্রহণের কারণে তাঁর স্ত্রীদের সংখ্যা চারজনের বেশি হওয়া যুক্তিযুক্ত ছিল। তাই আল্লাহ তাঁকে চারজনের বেশি বিবাহ করার অনুমতি দেন, কিন্তু এই বিধান মুমিনদের জন্য প্রযোজ্য করেননি, কারণ তাদের জন্য এমন প্রয়োজন ছিল না। ইনশাআল্লাহ, আমি এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলাদা একটি প্রবন্ধে আলোচনা করব।

সুরা আহযাবের ৫০ নম্বর আয়াতে যেসব নারীদের তাঁর জন্য হালাল করা হয়েছে, তাদের বিভিন্ন শ্রেণি উল্লেখ করা হয়েছে — যেমন তাঁর ফুফাতো বোনেরা। জয়নব বিনতে জাহশ ছিলেন তাঁর ফুফু উমাইমা বিনতে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা — তিনিই প্রথম স্ত্রী যিনি আগের চারজনের সংখ্যা অতিক্রম করে যোগ হন।

আর ৫২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

“তোমার জন্য এরপর আর কোনো নারী হালাল নয়।”

অর্থাৎ এই অনুমতি কেবলমাত্র উপরোক্ত শ্রেণিভুক্ত নারীদের জন্য সীমিত ছিল। অন্য কাউকে বিবাহ করা বা তাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে গ্রহণ করা বৈধ নয়।

এমনকি যদি তাদের সৌন্দর্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুগ্ধও করে, তবুও তিনি তাঁদের বিবাহ করতে পারবেন না। কারণ, নবীর জন্য বিবাহের অনুমতি ছিল একটি দ্বীনি হিকমতের কারণে — যেন স্ত্রীগণ শিক্ষাদান ও দাওয়াতের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অন্য কেউ, যিনি রূপে, বংশে বা ধনে শ্রেষ্ঠ হলেও, এই দায়িত্ব পালনের যোগ্য না হলে, নবীর জন্য তাঁর সঙ্গে বিবাহ বৈধ নয়।

——————–

✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *