https://t.me/DrAkramNadwi/6073
بسم الله الرحمن الرحيم.
প্রশ্ন: আমার কিছু ছাত্র আমাকে বলেছে: আমি ইজাযাতের প্রেমে পড়ে গেছি, এতে আমি এমনভাবে মুগ্ধ হয়েছি যে, এগুলো সংগ্রহ করাই আমার একমাত্র ব্যস্ততা ও প্রিয় শখে পরিণত হয়েছে। এর ব্যতীত আমার মনে কোনো প্রশান্তি নেই, এবং আমার মন স্থির হয় না। অতএব আপনি আমাকে এমন কিছু উপদেশ দিন, যা আমার উপকারে আসবে, আমার জ্ঞান বাড়াবে এবং আমাকে হিদায়াত ও অন্তর্দৃষ্টি দান করবে।
উত্তর: প্রিয় ভাই! তুমি ভালো করেছ যে, তুমি ইজাযাত সংগ্রহকে অন্য শখগুলোর মত একটি শখ বলে আখ্যায়িত করেছো—যেমন ডাকটিকিট সংগ্রহ, খেলা দেখা, বাগান বা বাজারে ঘোরাফেরা করা। যদিও তোমার শখ অন্যান্য সব শখ থেকে উচ্চতর, কারণ তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস নিয়ে ব্যস্ত হচ্ছো, শাইখদের সংস্পর্শে যাচ্ছো এবং সৎ লোকদের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছো—যা সবই চিরস্থায়ী সৎকর্ম এবং মূল্যবান সম্পদ।
তবে আমি তোমাকে সতর্ক করছি যেন তুমি কোনো এক স্তরে সন্তুষ্ট না হও, যদি তুমি তার চেয়ে উচ্চ স্তর অর্জন করতে সক্ষম হও। তুমি যখন আমাকে উপদেশ চেয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে কথা বলেছো, তখন আমার জন্য উচিত নয় যে আমি তোমাকে কোনো অসততা প্রদর্শন করি। যে ব্যক্তি খিয়ানত করে, কিয়ামতের দিনে সে তার খিয়ানতের বোঝা বহন করেই হাজির হবে। অতএব আমি তোমাকে দুটি কথা উপহার দিচ্ছি, যেগুলো তুমি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে ইনশাআল্লাহ সফলতা লাভ করবে।
প্রথম কথা: তোমার ওপর দুটি দায়িত্ব রয়েছে: একটি তোমার নিজের প্রতি, অপরটি তোমার উম্মত ও দ্বীনের প্রতি।
তোমার ব্যক্তিগত দায়িত্ব হলো—জ্ঞান, নেক আমল ও আল্লাহর নৈকট্যে ক্রমাগত অগ্রসর হওয়া।
তোমার সামাজিক দায়িত্ব হলো—মানুষকে দ্বীনের শিক্ষা দেওয়া, ইসলামের পক্ষে প্রতিরক্ষা করা, সন্দেহ ও বিভ্রান্তি থেকে অন্তরকে পরিশোধন করা, ইসলামবিদ্বেষী ও তাদের অনুসারীদের (যেমন কিছু প্রাচ্যবিদ) বিরুদ্ধে শক্তিশালী জ্ঞানভিত্তিক জবাব প্রদান করা, যাতে কুরআন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়।
এই দুই দায়িত্ব পালনের একমাত্র উপায় হচ্ছে, কঠোরভাবে জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করা। এর মধ্যে রয়েছে:
আরবি ভাষা, তার শাস্ত্র ও সাহিত্য দক্ষতার সঙ্গে শেখা,
লেখালেখি ও বক্তৃতার যোগ্যতা বৃদ্ধি করা,
কুরআনের গভীরভাবে চিন্তা করা,
“আল-মুয়াত্তা”, সহীহাইন এবং অন্যান্য হাদীস সংকলন অধ্যয়ন করা,
হাদীস বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের পদ্ধতি বোঝা,
ফিকহ, উসূল, কাওয়ায়েদ বিভিন্ন মাযহাব অনুযায়ী পড়া,
তত্ত্বীয় বিজ্ঞান, দর্শন, কালাম, সিরাহ, ইতিহাস ও জীবনী সম্পর্কিত বই অধ্যয়ন করা।
এই সমস্ত বিষয়ই তোমার একমাত্র ব্যস্ততা হওয়া উচিত, তুমি নিজেকে এতে বাধ্য করো, কষ্ট ও ক্লান্তিকে উপেক্ষা করো। সাহাবা, তাবেয়ীন, ফুকাহা, মুহাদ্দিসীন এবং মুজতাহিদ ও গবেষক আলেমদের (যেমন: বায়হাকি, ইবনু আবদিল বার, খাতীব বাগদাদী, ইবনু হাযম, গাজালী, রাজী, ইবনু তাইমিয়া, মিযযী, বারযালী, যাহাবী, ইরাকি, ইবনু হজর এবং সর্বশেষ শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী) পদাঙ্ক অনুসরণ করো।
দ্বিতীয় কথা: তোমার অবসর সময় ও সুযোগগুলোকে কাজে লাগাও।
সৎ লোকদের সাক্ষাতে যাও, যাতে তাদের আদব ও শিষ্টাচার শিখতে পারো। হাদীসের শ্রবণ ও পাঠের মজলিসে অংশগ্রহণ করো, সনদ ও মতন মুখস্থ রাখো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম শুনলে দরূদ পাঠ করো, সাহাবাদের জন্য দোয়া করো, সকল আলেমদের জন্য রহমত কামনা করো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে ইজাযাহ চাও, কিন্তু কখনো কাউকে প্রদর্শন বা গর্বের উদ্দেশ্যে নয়।
জেনে রেখো, আসল বিষয় হলো আমি যা প্রথম কথায় বলেছি, ইজাযাহ তো কেবল জ্ঞানার্জনের মাধ্যম মাত্র। যে কেবল এটাকেই উদ্দেশ্য বানায়, সে প্রকৃত জ্ঞানের স্তরে পৌঁছাতে পারে না। আমি আশঙ্কা করছি, যে ব্যক্তি ইজাযাহকে উদ্দেশ্য বানায় কিন্তু জ্ঞান ও শিল্প অর্জন করে না, সে যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়, যারা এমন কিছু দাবি করে যা তাদেরকে দেওয়া হয়নি।
——————
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।