AkramNadwi

সূরাসমূহের ফজিলত

https://t.me/DrAkramNadwi/6063

بسم الله الرحمن الرحيم

———-

প্রশ্ন:
আমার বোন সায়মা (জামিআতুল ফালাহ-এর একজন আলিমা) কোনো উর্দু বই থেকে কুরআনের সূরাগুলোর বিভিন্ন ফজিলত সংকলন করার পর এই প্রশ্ন করেছেন:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,
আমি জানতে চাই, আদৌ কি কুরআনের কিছু আয়াত ও সূরাকে অন্য সূরাগুলোর উপর বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে ? কিছু নির্দিষ্ট সময়ে এসব সূরা তিলাওয়াত করলে কি অন্য সূরাগুলোর তুলনায় বেশি সওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তর:
কুরআনের সূরা ও আয়াতসমূহের ফজিলত সম্পর্কে ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে দুটি মৌলিক বিষয় বুঝে নেওয়া জরুরি। এরপর আমি ব্যাখ্যা করব, কুরআন কীভাবে পড়া উচিত।

|| প্রথম বিষয়:

কুরআনের সূরা ও আয়াতগুলোর ফজিলত নিয়ে যে হাদিসগুলো বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে খুব অল্প কয়েকটি হাদিসই সহিহ (বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য)। বাকি সব হাদিস জাল (মিথ্যা) বা অস্বীকৃত। তাই এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে এবং এসব বিষয়ে লেখা অপ্রমাণিত উর্দু বইগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।

হাফেজ ইবনে কাইয়্যিম আল-মানার আল-মুনীফ গ্রন্থে লেখেন:

“যেসব হাদিস কুরআনের সূরাগুলোর ফজিলত সম্পর্কে সহিহ এসেছে, সেগুলো হলো—

= সূরা ফাতিহার হাদিস, যাতে বলা হয়েছে, তাওরাত, ইনজিল ও যবূরে এমন কোনো সূরা নাযিল হয়নি যা এর সমান।

= সূরা বাকারাহ ও আলে ইমরানের হাদিস, যাতে বলা হয়েছে এ দুই সূরাকে ‘আয-যাহরাওয়ান’ (দুটি জ্যোতির্ময় সূরা) বলা হয়।

= আয়াতুল কুরসির হাদিস, যাতে একে কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাবান আয়াত বলা হয়েছে।

= সূরা বাকারাহর শেষ দুই আয়াতের হাদিস, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় এগুলো পড়ে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।

= সূরা বাকারার হাদিস, যে ঘরে এটি পড়া হয়, সেখানে শয়তান আসে না।

= সূরা কাহফের শুরু থেকে ১০ আয়াত পড়লে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে—এমন হাদিস।

= সূরা ইখলাস-এর হাদিস, যাতে বলা হয়েছে, এটি কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।

আর সূরার ফজিলত নিয়ে এর চেয়ে বেশি সহিহ কিছু নেই।

= সূরা ফালাক ও সূরা নাস (মু‘আউওয়াযাতাইন)-এর হাদিস, যাতে বলা হয়েছে—এর চেয়ে উত্তম আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত কেউ কখনো পড়ে নি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার উপর এমন আয়াত নাযিল হয়েছে, যা আগে কখনো কারো ওপর নাযিল হয়নি।” এরপর তিনি তা পড়েন।

| এই হাদিসগুলোর পর যে হাদিসটি রয়েছে, তবে তা আগেরগুলোর তুলনায় কম মানের:

“সূরা যিলযাল – কুরআনের অর্ধেকের সমান।”

“ সূরা কাফিরুন – কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান।”

“(সূরা মুলক) কবরের আযাব থেকে মুক্তির মাধ্যম।”

| এরপর আরও যেসব হাদিস আছে, যেমন:
“যে এই সূরা পড়বে, তাকে এই পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে”—এসব হাদিস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে বানানো হয়েছে (অর্থাৎ জাল)।

|| দ্বিতীয় বিষয়:

সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ফজিলতের মানে এই নয় যে, অন্য সূরাগুলোর বা আয়াতগুলোর তেমন কোনো ফজিলত নেই। সাধারণভাবে ফজিলতগুলো সবার মাঝে অংশীদারভাবে থাকে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বিষয় কিছু মানুষের উপর গভীর প্রভাব ফেলে, আবার অন্যদের উপর অন্য কিছু।

মাংসের ফজিলত প্রমাণিত, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে শাকসবজি বা অন্যান্য খাদ্যে কোনো উপকারিতা নেই। ঠিক তেমনি, অনেক সময় এমন হয়—কাউকে শাকসবজি বেশি মানিয়ে যায়, কাউকে মাংস, কাউকে মাছ, কাউকে দুধ, আবার কাউকে অন্য কোনো খাবার। এমনকি, কিছু মানুষ ডাল বা চাটনি আর রুটি থেকেই এমন পুষ্টি পায়, যা অনেকেই সবচেয়ে উন্নত খাবার থেকেও পায় না।

এই ফজিলতের এমন ভাগাভাগির কারণেই, আলেমদের মতে, কোনো প্রমাণ ছাড়া নামাজে নির্দিষ্ট সূরা পড়ার উপর জোর দেওয়া অপছন্দনীয়। যারা সারা জীবন পাঁচটি সূরা ইত্যাদি পড়েই সীমাবদ্ধ থাকে, তারা আল্লাহর কিতাবের বহু বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।

কুরআন কীভাবে পড়া উচিত?

পুরো কুরআন আল্লাহর হিদায়াতের কিতাব। এর প্রতিটি বাণী দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে উত্তম। এই হিদায়াত সে-ই লাভ করবে, যে কুরআনকে বুঝে পড়বে এবং আল্লাহর কিতাবে চিন্তা করবে।

তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন বোঝার জন্য। যদি আরবি ভাষা জানা না থাকে, তাহলে আপনার নিজের ভাষায় কুরআনের কোনো নির্ভরযোগ্য অনুবাদ পড়ুন। তাফসীরের বইগুলো থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকুন।

সবচেয়ে উত্তম হলো কুরআন শুরু থেকে পড়া। যখনই পড়ুন, অল্প অল্প করে পড়ুন। কোনো জায়গায় কোনো কথা সংক্ষেপে বলা হলে, সেটার বিস্তারিত অন্য জায়গায় থাকবে। কোনো কাহিনির একটি দিক এক জায়গায় আছে, তার অন্য দিক থাকবে অন্যত্র।

একবার পড়লে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। আবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়বার পড়লে নতুন নতুন হিদায়াতের অর্থ উদ্ঘাটিত হবে। এইভাবে সারাজীবন কুরআন পড়ে যান, কখনো বিরক্ত হবেন না।

নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হলো—কুরআন বুঝে পড়া।

———— ——–

,শিক্ষা।
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *