https://t.me/DrAkramNadwi/5856
بسم الله الرحمن الرحيم.
————————–
|| প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহি ও বারাকাতুহু। সম্মানিত ডক্টর শাইখ মুহাম্মাদ আকরাম নদভী (আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন ও বরকত দান করুন)।
আল্লাহ তায়া’লা কেন কুরআন মাজীদের সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬-এ বলেছেন:
“إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ”?
“বাক্কাহ” শব্দের অর্থ কী? “মাক্কাহ” ও “বাক্কাহ” শব্দদ্বয়ের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?
বারাকাল্লাহু ফীকুম।
আপনার ভাই,
মুফতি নূরুর রহমান উসমানি
ডীন, উচ্চতর শিক্ষা বিভাগ
জামিয়া দারুল উলূম খোস্ত, আফগানিস্তান
|| উত্তর:
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়, যা তাবারির তাফসির ও অন্যান্য তাফসির গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। উলামাদের মধ্যে বিভ্রান্তির কারণ হলো, এটি পৃথিবীতে স্থাপিত প্রথম ঘর হতে পারে না, কারণ এর আগে অনেক ঘর ছিল। একইভাবে এটি প্রথম উপাসনালয়ও হতে পারে না, কারণ ইব্রাহিম (আ.)-এর পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলদেরও অবশ্যই মসজিদ ও উপাসনালয় ছিল।
আমি বলি: “وُضِعَ لِلنَّاسِ” (মানুষের জন্য স্থাপিত হয়েছে)-এর অর্থ হলো মানুষের হজের জন্য স্থাপিত হয়েছে। এই ব্যাখ্যা দিলে সমস্যা দূর হয়ে যায়। অর্থাৎ, এটি মানুষের হজের জন্য স্থাপিত প্রথম ঘর। এই অর্থটি আরও পরিষ্কার হয় যদি আমরা এই আয়াতকে পরবর্তী আয়াতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি:
“নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য । তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।
(সূরা আলে ইমরান ৯৬-৯৭)
এখানে হজের ফরজিয়াতের উল্লেখ এই ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে।
এটি আরও সমর্থিত হয় সূরা হাজ্জের নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা:
নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথ থেকে ও মসজিদে হারাম থেকে বাধা দেয়, যাকে আমি স্থানীয় ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান করেছি। আর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে সেখানে পাপকাজ করতে চায়, তাকে আমি যন্ত্রণাদায়ক আযাব আস্বাদন করাব। আর স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহীমকে সে ঘরের (বায়তুল্লাহ্র) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং আমার ঘরকে পাক সাফ রাখবে তাওয়াফকারী, রুকূ-সিজদা ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর জন্য’। আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে।”
(সূরা হাজ্জ ২৫-২৭)
এখানে “المسجد الحرام الذي جعلناه للناس” (আমরা মসজিদে হারামকে মানুষের জন্য নির্ধারিত করেছি) বাক্যাংশটি “وُضِعَ لِلنَّاسِ” (মানুষের জন্য স্থাপিত হয়েছে) বাক্যাংশের মতোই। তারপর সূরা হাজ্জের “سَوَاءً الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ” (এতে বসবাসকারী ও বাইরের আগন্তুক সমান) বাক্যাংশটি হজের প্রতি ইঙ্গিত দেয়। এরপর ঘরটি পবিত্র রাখার নির্দেশ ও মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ হজের বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
“বাক্কাহ” ও “মাক্কাহ” এর পার্থক্য:
“বাক্কাহ” ও “মাক্কাহ” একই শহর। “বাক্কাহ” ও “মাক্কাহ” শব্দের মধ্যে শুধু “ব” ও “ম”-এর পার্থক্য রয়েছে, যা আরবি ভাষায় অনেক সময় একটির পরিবর্তে অন্যটি ব্যবহৃত হয়।
যেমন, জমখশারী তার তাফসিরে বলেন:
“মাক্কাহ ও বাক্কাহ এই শহরের দুটি ভাষাগত রূপ। ঠিক যেমন ‘النبيط’ ও ‘النميط’ বলে দেহনার একটি স্থানের নাম বলা হয়। আরবি ভাষায় এমন পরিবর্তন স্বাভাবিক ব্যাপার, যেমন ‘راتب’ ও ‘راتم’, ‘مغمطة’ ও ‘مغبطة’।”
আর “বাক্কাহ” শব্দের অর্থ শহর। এটি ইবরাহিম (আ.)-এর ভাষায় “শহর” বোঝায়। যেমন, “বাআ’লবাক” শব্দের অর্থ “বাআ’লের শহর” – যেখানে “বাআ’ল” একটি মূর্তির নাম ছিল।
যখন ইবরাহিম (আ.) চাষযোগ্য জমি ছাড়া এক উপত্যকায় এসে ঘর নির্মাণ করেন ও তার সন্তানদের সেখানে বসবাস করান, তখন তিনি এর নাম রাখেন “বাক্কাহ”, যার অর্থ “শহর”। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে “ব” থেকে “ম” হয়ে যায়।
সূরা আলে ইমরানে “বাক্কাহ” শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে মূল শহরের উৎপত্তি ও ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে এর সম্পর্ককে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যিনি এই ঘর নির্মাণ করেছিলেন।
—————–
# তাফসির
লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।