AkramNadwi

ড. সাইয়্যেদ ইকবাল আহমদ নদভীর ইন্তেকাল ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/2868

بسم الله الرحمن الرحيم


——————–

গতকাল (১৪৪২ হিজরির রমজান মাসের ৮ম দিবস, মঙ্গলবার) আমাদের সম্মানিত উস্তাদ, মুহাদ্দিস, ড. সাইয়্যেদ ইকবাল আহমদ নদভী লখনউতে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি নিজের মাটির নিচে চিরশান্তিতে শায়িত হয়েছেন, দুনিয়ার মানুষ থেকে একান্তে বিদায় নিয়েছেন। আহ্, আমাদের হৃদয় হাহাকার করে! আমরা প্রতি রাতে এমন মানুষদের জন্য শোক করি, যারা মহান আমলের মাধ্যমে নিজেদের সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন, যাদের রয়েছে প্রশংসনীয় গুণাবলি ও অগণিত সওয়াবের কাজ। তাঁদের পরে আসা মানুষরা তাঁদের স্থান পূরণ করতে পারে না এবং তাঁদের উচ্চতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।

তিনি ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি সম্পূর্ণ কুরআন হেফজ করেন। তিনি আমাদের উস্তাদ এবং ফকীহ শাইখ মুহাম্মদ জহুর মুফতির (রহ.) সহপাঠী ছিলেন।

তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন আমাদের শাইখ, ইমাম আবুল হাসান আলী নাদভী (রহ.), বিখ্যাত মুফাসসির মুহাম্মদ আওয়াইস নাজরামী নাদভী, এবং মুহাদ্দিস শাইখ হালিম আতা আস-সালূনী। তিনি তাঁদের কাছ থেকে সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদিসের কিতাব শুনেছেন। তবে তাঁর দ্বারা কতটুকু পাঠ শোনা হয়েছিল তা নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি দারুল উলুমে অবস্থানকালে শাইখ সুলাইমান নাদভী (রহ.), শাইখ হায়দার হাসান খান আত-তুঙ্কী (রহ.), আবুল কালাম আজাদ, এবং আবুল আ’লা মওদূদী (রহ.) প্রমুখ ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎ লাভ করেন।

১৯৫৭ সালে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ১৯৬৪ সালে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। অসাধারণ মেধার জন্য তিনি সোনার মেডেল লাভ করেন।

তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৭ সালে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ পান এবং ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন।

দারুল উলুমে তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন আমাদের উস্তাদ নাসির আলী নাদভী (রহ.), উস্তাদ নযরুল হাফীজ নাদভী, এবং উস্তাদ শামসুল হক নাদভী (হাফি.).

আমি তাঁকে বহুবার তাঁর বাসভবনে, দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা এবং লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি। তাঁর পুত্র সাইয়্যেদ জাওয়েদ ইকবাল নাদভী দারুল উলুমে আমার প্রিয় বন্ধু ছিলেন। তিনি আমাকে তাঁর বাসায় বহুবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমাদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা গভীর ছিল। আমরা একসঙ্গে বহু আনন্দময় দিন কাটিয়েছি।

একবার সাইয়্যেদ জাওয়েদ ইকবাল আমাকে তাঁর বোনের (ড. ইকবাল নাদভীর কন্যার) বিবাহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। তাঁর বোনের বিয়ে হয়েছিল শাইখ নঈম আখতার নাদভীর সঙ্গে। তিনি তখন দারুল উলুমে শিক্ষক ছিলেন। অনুষ্ঠানে আমাদের শাইখ ইমাম আবুল হাসান আলী নাদভী (রহ.) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেন এবং একটি হৃদয়স্পর্শী বক্তৃতা দেন।

পরে শাইখ নঈম আখতার তাঁর পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং দিওসবুরির দাওয়াহ ও তাবলিগ কেন্দ্রের একটি মাদরাসায় দীর্ঘ সময় ধরে পড়িয়েছেন। তাঁর সন্তানদের মধ্যে সাইয়্যেদ হুজাইফা নাদভী উল্লেখযোগ্য।

আমি ড. ইকবাল নাদভী থেকে একাধিকবার ইজাজত (শিক্ষার অনুমতি) গ্রহণ করি। তাঁর নাতি সাইয়্যেদ হুজাইফা একটি সভা আয়োজন করেন, যেখানে জুম অ্যাপের মাধ্যমে আমরা তাঁর কাছ থেকে ‘আওয়াইলুস সানবুলিয়া’ শুনি। আমার কন্যারা এবং তাঁদের সন্তানরাও এতে অংশ নেয়। তিনি তাঁদের সবাইকে ইজাজত প্রদান করেন।

ড. ইকবাল নাদভী ছিলেন একজন সৎ, উদার, নম্র ও মার্জিত ব্যক্তি। আল্লাহ তাঁকে অশেষ রহমত দান করুন এবং জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করুন।

——-
# জীবনী

লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *