https://t.me/DrAkramNadwi/5786
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
ইউরোপীয় ছাত্র: সবচেয়ে বড় বোকামি কী?
হিন্দি শিক্ষক: আল্লাহর সঙ্গে শিরক করাই সবচেয়ে বড় বোকামি। মুশরিকদের অনেক ধরণ রয়েছে। তারা মূল শিরকে ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু শিরকের প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন। কেউ কেউ মূর্তি ও প্রতিমা বানায়, সেগুলো স্থাপন করে এবং সেগুলোর সামনে সেজদা করে। কেউ সূর্য, চাঁদ, তারকা, পৃথিবী, পাহাড়, সমুদ্র, নদী, গাছপালা ইত্যাদির উপাসনা করে। কেউ পশু, চতুষ্পদ প্রাণী, পোকামাকড়ের সামনে মাথা নত করে। আবার কেউ ফেরেশতা, শয়তান, তাগুত এবং সৎ ব্যক্তিদের (জীবিত বা মৃত) ডাকে।
ইউরোপীয় ছাত্র: আপনি কীভাবে শিরককে সবচেয়ে বড় বোকামি বললেন? এর ব্যাখ্যা দিন।
হিন্দি শিক্ষক: ধরো, একজন রাজা কাউকে তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন, তাকে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ালেন, সুস্বাদু পানীয় পান করালেন, মূল্যবান পোশাক উপহার দিলেন এবং বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত করলেন। এর বদলে সেই ব্যক্তি উপকারদাতাকে অস্বীকার করল, রাজার কোনো তোয়াক্কা করল না এবং পাত্র, চামচ, কাঁটা চামচ, এবং বাটি ধন্যবাদ দিল। খাবারের টেবিলগুলোর সামনে সেজদা করল এবং পোশাক ও অন্যান্য পুরস্কারের প্রশংসা ও উপাসনা শুরু করল। তুমি ঐ ব্যক্তিকে কী বলবে?
ইউরোপীয় ছাত্র: আমরা কখনো কাউকে পাত্র বা পোশাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শুনিনি। এটা অদ্ভুত এবং নির্বোধ উদাহরণ!
হিন্দি শিক্ষক: নির্বুদ্ধিতাকে অদ্ভুতই মনে হয়, আর সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা সবচেয়ে অদ্ভুত মনে হয়। মুশরিক কি এমন জিনিসের উপাসনা করে না, যা কোনো ক্ষতি ও উপকারও করতে পারে না, শুনতে ও দেখতে পারে না, জ্ঞান রাখে না, ক্ষমতাবান নয়, জীবন-মৃত্যু নেই? সেই উদাহরণ কি মুশরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়? মুশরিকদের বোকামি এতটাই স্পষ্ট যে তা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। তারা পশুর মতো, বরং তার চেয়েও বেশি বিভ্রান্ত।
ইউরোপীয় ছাত্র: আপনি তাদেরকে পশুর চেয়েও বেশি বিভ্রান্ত কেন বললেন?
হিন্দি শিক্ষক: ধরো, আমি একটি কুকুরকে পাত্রে খাবার দিই, তাহলে কুকুরটা কি আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, না পাত্রের প্রতি?
ইউরোপীয় ছাত্র: সে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এবং আপনার প্রতি অনুগত থাকবে।
হিন্দি শিক্ষক: তুমি কি কখনো এমন কুকুর দেখেছ, যা সেই নদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যেখান থেকে সে পানি পান করে?
ইউরোপীয় ছাত্র: না।
হিন্দি শিক্ষক: যদি তুমি কুকুরকে একটি পাথর দিয়ে আঘাত করো, তাহলে কি সে পাথরটিকে তাড়া করে কামড় দেবে?
ইউরোপীয় ছাত্র: না।
হিন্দি শিক্ষক: দেখো, কুকুর উপকার ও ক্ষতির মাধ্যম এবং তাদের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। অথচ তার সেই বুদ্ধি নেই, যা মানুষকে দেওয়া হয়েছে। বলো তো, মুশরিক কি কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীর চেয়েও বেশি বিভ্রান্ত নয়?
হিন্দি শিক্ষক: মুশরিকরা তাদের জীবনের ব্যাপারে কঠোর বৈপরীত্যে থাকে।
ইউরোপীয় ছাত্র: আপনার কথার অর্থ কী?
হিন্দি শিক্ষক: একজন হিন্দু বলে, মূর্তি ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাতে ঈশ্বরের আবির্ভাব হয়েছে। যদি তার ছেলে মারা যায় এবং তুমি তার ছেলের একটি মূর্তি বানিয়ে বলো: এটি তোমার ছেলে, তাহলে কি সে সন্তুষ্ট হয়ে সেই মূর্তিকে তার প্রকৃত ছেলে হিসেবে মেনে নেবে?
ইউরোপীয় ছাত্র: না।
হিন্দি শিক্ষক: হিন্দুরা তাদের মন্দিরে গরুর মূর্তির পূজা করে, কিন্তু যখন তাদের দুধের প্রয়োজন হয়, তখন কি তারা গরুর মূর্তির কাছে যায়, নাকি আসল গরুর কাছে?
ইউরোপীয় ছাত্র: আমরা কখনো কোনো হিন্দুকে গরুর মূর্তির দুধ দোহাতে দেখিনি।
হিন্দি শিক্ষক: যদি কেউ সোনার মূর্তি চুরি করে, তাহলে কি সেই মূর্তি নিজের সুরক্ষা করবে, অথবা তাদের উপাসকদের চোরের খবর দেবে?
ইউরোপীয় ছাত্র: না।
হিন্দি শিক্ষক: শিরকের সব প্রকারকেই এর মাধ্যমে অনুমান করো। মুশরিকরা কাল্পনিক ও ধারণাভিত্তিক জিনিসের উপাসনা করে। ফেরেশতা, জিন, হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম, তার মা এবং অন্যান্য মানুষকে ডাকে। তাদের উদাহরণ সেই ব্যক্তির মতো, যে মরীচিকাকে পানি ভাবে।
হিন্দি শিক্ষক: জেনে রাখো, আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টিকে তাদের অস্তিত্ব, জন্ম ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে নিজের ওপর নির্ভরশীল বানিয়েছেন। প্রত্যেক ছোট ও বড় জিনিস তাঁর অনুগ্রহ ও নিয়ামতের মাধ্যমে বিকশিত হয়। কেউ যদি তাঁর থেকে বেপরোয়া হয়ে অহংকার করে, তাহলে সে নিজেরই ওপর জুলুম করে। আর এর পরিণতি হয় খোলামেলা বিশৃঙ্খলা ও স্পষ্ট ক্ষতি।
————
# আলোচনা পর্যালোচনা # শিক্ষা
লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।