https://t.me/DrAkramNadwi/5762
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
মানুষ বৈজ্ঞানিক প্রমাণের শব্দ ব্যবহার করে, কিন্তু এর অর্থ তাদের কাছে অস্পষ্ট থাকে, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি না বুঝেই বলা হয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তি হল পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এসব পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ধারণা ও তত্ত্ব সর্বদা সমালোচনা ও বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই চ্যালেঞ্জ ও পাল্টা চ্যালেঞ্জ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিজ্ঞান এমন কোনো ধারণাকে গুরুত্ব দেয় না যার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না এবং যার সমর্থন বা প্রতিবাদ করা সম্ভব নয়। এটাই সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, একজন বিজ্ঞানী কখনোই এমন কোনো কথা বলতে পারেন না যা তিনি নিজে বুঝতে পারেননি এবং যা তিনি অন্য বিজ্ঞানীদেরও বোঝাতে পারেন না।
বিজ্ঞানীরা একে অপরের প্রমাণের দুর্বলতা এবং সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করেন, যাতে শেষ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও পরীক্ষার নকশাগুলো আরও উন্নত এবং কার্যকর করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে “প্রমাণ-নির্ভর যুক্তি” (Evidence-Based Argumentation) বলা হয়।
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কেবলমাত্র সেসব বিষয়েই কার্যকর যা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা যায়। এর বাইরে বিজ্ঞানীদের এবং গায়রে-বিজ্ঞানীদের কথাগুলো বৈজ্ঞানিক নয়। যেমন, মানব বিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞানের দাবি বৈজ্ঞানিক নয় এবং প্রমাণও বৈজ্ঞানিক নয়, কারণ বিবর্তনকে কোনো পরীক্ষাগারে দেখানো সম্ভব নয়।
কোনো প্রমাণের গায়রে-বৈজ্ঞানিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে তা ভুল। কারণ প্রমাণের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। প্রতিটি দাবির প্রমাণ তার নিজস্ব নীতির উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। কোনো সাহিত্যিক প্রমাণের পদ্ধতি ডিএনএ পরীক্ষার পদ্ধতি থেকে ভিন্ন হবে। এসব প্রমাণ হবে অসংবদ্ধ (subjective), সংবদ্ধ (objective) নয়। পৃথিবীর অধিকাংশ জ্ঞান ও বিদ্যা, তা পূর্বের হোক বা পশ্চিমের, সবই অসংবদ্ধ প্রমাণের উপর ভিত্তি করে।
আমরা বলি যে একটি হাদিস সহিহ। প্রশ্ন হল, আমরা কি একে সংবদ্ধ পদ্ধতিতে প্রমাণ করতে পারি? উত্তর অবশ্যই না। ফিকহি বিষয়ের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। যখন আমরা বলি যে অজুতে চারটি ফরজ, বা গোসলের তিনটি ফরজ, অথবা নামাজে এতগুলো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত রয়েছে, এ ধরনের কোনো দাবিকেই কেউ সংবদ্ধ পদ্ধতিতে উপস্থাপন করতে পারে না। এবং কোনো ফকিহ অপর কোনো ফকিহকে তার ইজতিহাদের উপর চূড়ান্তভাবে সন্তুষ্ট করতে পারে না।
অন্যদিকে, যখন আমরা বলি যে দুটি শহরের মধ্যে এতটা দূরত্ব রয়েছে, তখন এটি সংবদ্ধভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব এবং এতে কারো কোনো মতপার্থক্য থাকবে না।
অ-সংবদ্ধ প্রমাণের উপর ভিত্তি করে কীভাবে কোনো কথা বলা সম্ভব? এর পদ্ধতি হল যে এসব প্রমাণ বহু বাস্তব উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। তারপর এসব উপাদান এবং এ থেকে গঠিত সামগ্রিক বিষয়গুলো সমালোচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতপার্থক্যকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে, এগুলো উপেক্ষা করা হবে না বা তাদের হেয়ও করা হবে না। মতপার্থক্য যত বেশি হবে এবং সেগুলো নিয়ে যত উদারতার সঙ্গে চিন্তাভাবনা করা হবে, ততই আমরা প্রমাণের সঠিকতা বুঝতে সক্ষম হব।
যদি কোনো এক ব্যক্তির মতামতকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে এটি প্রমাণকে রুদ্ধ করার সমতুল্য হবে এবং এটি সম্ভাব্য করে তুলবে যে বুদ্ধিবৃত্তিক ভুলগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্থানান্তরিত হতে থাকবে এবং মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে সঠিক জ্ঞানের থেকে বঞ্চিত থাকবে।
এটি অনেক উদাহরণের মাধ্যমে বোঝানো যেতে পারে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে সেগুলো থেকে বিরত থাকা হয়েছে। কারণ কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক ভুলের উপর এমন বিশ্বাসের স্তর জমে যায় যে সেগুলো ভুল হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বাসের অংশ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ এগুলোর পুনর্বিবেচনার আমন্ত্রণকে অপছন্দ করে।
———
# আলোচনা
মূল: ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য।
অনুবাদ, সম্পাদনা :
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।