AkramNadwi

বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টার আগমন ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/5723

بسم الله الرحمن الرحيم.

আজ (মঙ্গলবার, ৯ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি) বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী জনাব মাওলানা ড. আবুল ফয়জ সাহেব একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অক্সফোর্ডে আমার সাধারণ বাসভবনে আগমন করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়, শিক্ষা এবং ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

জনাব আবুল ফয়জ মুহাম্মাদ খালিদ হুসাইন সাহেব (যিনি সাধারণত ড. এ এফ এম খালিদ হুসাইন নামে পরিচিত, জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯) একজন আলেম। তিনি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শিক্ষা লাভ করেছেন। ৮ আগস্ট ২০২৪ থেকে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস সাহেবের অন্তর্বর্তী সরকারে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলাদেশে তাঁর কর্মকাণ্ডের পরিধি বেশ বিস্তৃত।

মুহরাতাম আবুল ফয়জ সাহেব বললেন, আমার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি আমার ইংরেজি গ্রন্থ আল-মুহাদ্দিসাত পড়েছেন এবং এর প্রশংসা করেছেন। এরপর তিনি আমার গ্রন্থাগারে আল-ওফা বি আসমাইন-নিসা এর ৪৩ খণ্ড, আল-জামি আল-মু’ইন এর ৭ খণ্ড এবং অন্যান্য গ্রন্থ পরিদর্শন করেন। আমার ছাত্র মিজানুল হক উক্ত দুই গ্রন্থের এক একটি সেট উপহারস্বরূপ মন্ত্রীর কাছে পেশ করেন, যা তিনি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেন। তিনি আল-মুহাদ্দিসাত-এর বাংলা অনুবাদ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কিন্তু খোঁজ করার পরেও সেই গ্রন্থটি গ্রন্থাগারে পাওয়া যায়নি।
মর্যাদাবান মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষা এবং ধর্মীয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আমি আরজ করলাম যে, দুই বছর আগে বাংলাদেশ সফরের সময় আমি অনুভব করেছি যে, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে জ্ঞান অর্জনের প্রতি অস্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাঁদের মধ্যে কিছু অনলাইনে আমার ছাত্রও আছেন। বাংলাদেশের মধ্যে অসংখ্য গোপন প্রতিভা রয়েছে, যেগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানোর প্রয়োজন।

বাংলাদেশে ইসলামী ঐক্য কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি আরজ করলাম যে, কোনো জাতির জন্য দলীয় বিভাজন বিষাক্ত। এখানে ইংল্যান্ডে সমস্ত মুসলিম দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে, কারণ এখানে মুসলিম শাসন নেই। যদি এখানে মুসলিমদের কোনো গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকত, তবে সেই গোষ্ঠী ছাড়া অন্য সমস্ত দল স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হতো। প্রত্যেকেই অন্যকে বিভ্রান্ত বলে অভিহিত করতো এবং সম্পূর্ণ পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে যেতো।

মুঘল শাসনের শেষ সময় পর্যন্ত উপমহাদেশের সমস্ত মুসলিম ঐক্যবদ্ধ ছিল। মাদ্রাসায়ে রাহিমিয়া এবং ফারাঙ্গি মহলে বিভিন্ন মত ও চিন্তার লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করতো। এমনকি শিয়া ও সুন্নি একসঙ্গে পড়াশোনা করতো। এরপর এই দেশে কিছু সংকীর্ণমনা লোক প্রভাবশালী হয়ে ওঠে, যাঁদের দৃষ্টিতে তাঁদের ছাড়া সমস্ত মুসলিমের ধর্ম সন্দেহজনক ছিল। বিতর্কের উত্তাপ এবং ফতোয়ার চর্চা পরিবেশকে যতটা খারাপ করেছিল, তা কারও অজানা নয়। এই লোকেরা কাফের ও মুশরিকদের থেকে বিরত থাকলেও, কালেমা পাঠকারী মুসলিমরা সর্বদা তাঁদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

প্রয়োজন এই যে, মত ও প্রবণতাকে ধর্মের অধীন করা হোক, শাখাগত মতপার্থক্যগুলোকে বিভাজনের কারণ না বানানো হোক এবং মুসলমানদের এক উম্মত হিসেবে গণ্য করা হোক। সহনশীলতা ও উদারতার মাধ্যমেই আমরা উন্নতি করতে পারি। পাকিস্তানে যে গোষ্ঠীভিত্তিক বিভাজনের পরিবেশ রয়েছে, তা দেশের অখণ্ডতার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এই দেশের সাধারণ আলেমরা কেবল নিজেদের মত ও গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করছেন। এটা তো স্পষ্ট যে, যখনই গোষ্ঠী শক্তিশালী হবে, তখনই ধর্ম দুর্বল হয়ে পড়বে।

অতিথি মহোদয় আমার কাছ থেকে আমার রচনাগুলোর সংখ্যা জানতে চাইলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন আমার দৈনন্দিন রুটিন কী। আমি এই প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলাম এবং আরজ করলাম যে পড়া-লেখার বাইরে আমার আর কোনো কাজ নেই। আমি কোনো সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি না। বাড়ি থেকে বের হলে হয় মসজিদে যাই, নয়তো শরীরচর্চা করতে যাই। আমার ওপর “মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত” প্রবচনটি প্রযোজ্য। মন্ত্রী মহোদয় আমাকে বারবার দোয়া করলেন।

মাওলানা আবুল ফয়জ সাহেবের সঙ্গে আলোচনা উর্দু ভাষায় হয়েছিল। তিনি উর্দু বলতে ও বুঝতে পারেন। তিনি অন্যান্য ভাষাও জানেন, কিন্তু উর্দু ভাষায় কথা বলাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি আমার সম্মান আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর বিনয় ও শালীনতা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। আল্লাহ তাআলা বাংলাদেশ এবং সকল মুসলিম দেশকে উন্নতি দান করুন এবং তাঁদের সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে রক্ষা করুন।

———–

মূল : > ড. মুহাম্মাদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা :
|| মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *