AkramNadwi

শিরোনাম : নবী করীম ﷺ–এর জন্য কি আবু বকর সিদ্দীক রা

শিরোনাম : নবী করীম ﷺ–এর জন্য কি আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর অনুসরণ করা ফরজ ছিল?
——————–

গতবার মুফতি সাহেব আমার কাছে এসেছিলেন, যখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন—
“বল তো, বুদ্ধির কোন্ কথাটি তোমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়?”

আমি তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিলে তিনি এতটাই রাগান্বিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন যে, আমি ভাবতেও পারিনি তিনি এত দ্রুত সেই রাগ ভুলে যাবেন।

মুফতি সাহেব নিঃসন্দেহে আন্তরিক ও ধার্মিক মানুষ, কিন্তু রাগের সময় যেন তিনি আল্লাহর নাম আল-ক্বাহ্‌হার (القهّار)-এর গজবের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠেন।

সম্ভবত তাঁর এই তেজস্বী স্বভাবের কারণেই আজ ভোরে হঠাৎই তিনি আমার দরজায় উপস্থিত হলেন। তাঁকে দেখে আমার আনন্দের সীমা রইল না, কিন্তু সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।

অভিযোগের সূচনা

এসেই তিনি বললেন:
“ভাই! তোমার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ আছে।”

আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম:
“হুজুর! আপনার সব অভিযোগই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। দয়া করে রাগ করবেন না। আমাদের জন্য সর্বোচ্চ সৌভাগ্য তো এটাই যে, আপনি সন্তুষ্ট থাকেন।”

তিনি বললেন:
“তুমি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগা, তা নির্ভর করবে তুমি আমার প্রশ্নের কী জবাব দাও তার ওপর।”

আমি বললাম:
“বলুন হুজুর, প্রশ্নটা কী?”

তিনি বললেন:
“তুমি সাহাবায়ে কেরামের যথাযথ সম্মান করো না।”

আমি বললাম:
“মুফতি সাহেব! এটা কী বলছেন! সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা রক্ষা থেকে আমি কখনোই বিরত হইনি।”

তিনি বললেন:
“এই দাবির প্রমাণ তখনই গ্রহণযোগ্য হবে, যখন তুমি ‘ইয়ামীন মুগাল্‌যাহ্’ (কঠিন শপথ) করবে।”

আমি বললাম:
“কাবার প্রভু, আর ইবরাহিম ও মুহাম্মদ ﷺ–এর প্রভুর শপথ! আমি হৃদয় থেকে সাহাবায়ে কেরামের মহত্ত্ব ও মর্যাদায় বিশ্বাস করি।”

কঠিন শপথ

এতে তিনি কিছুটা খুশি হলেন। তারপর বললেন:
“তুমি খুবই সরল। শোনো, আমাদের ফিকহি পরিভাষায় ‘ইয়ামীন মুগাল্‌যাহ্’ মানে হলো—তালাকের সঙ্গে শর্তযুক্ত শপথ। এখন এভাবে বলো:
‘যদি আমি সাহাবায়ে কেরামের সম্মানকারী না হই, তবে আমার স্ত্রীকে তিন তালাক।’”

আমি বললাম:
“হুজুর! এতে আমার স্ত্রীর কী দোষ?”

তিনি বললেন:
“এটা দোষের প্রশ্ন নয়। আমাদের পাঠ্যসূচিতে প্রতিটি শপথের পরিণতি তালাকেই গিয়ে মেশে। আমরা এমনই পড়েছি, বুঝেছি এবং আজ তা-ই তোমার ওপর প্রয়োগ করব।”

আমি বললাম:
“মুফতি সাহেব! আমি এই ধরনের শপথ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।”

তিনি বললেন:
“দেখলে! প্রমাণ হয়ে গেল তুমি প্রকৃত অর্থে সাহাবায়ে কেরামের সম্মান করো না। যদি করতে, তবে একটি নয়, চারটি স্ত্রীও ত্যাগ করতে দ্বিধা করতে না।”

করুণ সিদ্ধান্ত

শেষমেশ আমি মনে মনে স্থির করলাম—এই বিষাক্ত পেয়ালাও পান করতে হবে, অন্তত ঝামেলাটা শেষ হবে।

অতএব আমি বললাম:
“যদি আমি সাহাবায়ে কেরামের সম্মানকারী না হই, তবে আমার স্ত্রীকে তিন তালাক।”

এই শপথ আমার কাছে কতটা বিরক্তিকর ও ঘৃণিত ছিল, তা পাঠক কল্পনাও করতে পারবেন না।

যাহোক, ভেবেছিলাম এবার হয়তো বিপদ কেটে গেল। কিন্তু না, ভাগ্যের লিখন তো অন্যরকম!

আমি অনেকবারই বলেছি—যে ব্যক্তি সরাসরি মুফতির প্রশ্নের উত্তর দেয়, সে অবশ্যই বিপদে পড়ে। হায়! আমার সরলতা—আমি উত্তর দিলাম আর ফেঁসে গেলাম।

তালাকের ফতোয়া

তিনি বললেন:
“তোমার স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পড়েছে। এখন সে তোমার জন্য চিরতরে হারাম।”

আমি হতভম্ব হয়ে বললাম:
“মুফতি সাহেব! এটা কী হলো! আমি তো সাহাবায়ে কেরামের সম্মান করি, তবে তালাক কার্যকর হলো কীভাবে?”

তিনি বললেন:
“তুমি সাহাবায়ে কেরামকে ‘মানদণ্ডে হক’ মনে করো না। আর তাদের মানদণ্ড না মানাই হলো অসম্মান। তাই তোমার শপথ ভেঙে গেছে।”

সত্য ও মাপকাঠি নিয়ে বিতর্ক

তখন আমি বাধ্য হলাম যুক্তি দিয়ে উত্তর দিতে।

আমি বললাম:
“মুফতি সাহেব! আপনার সমস্যাটা হলো, আপনি অন্যের কথা শোনেন না। যদি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, আপনার ভুল ভেঙে যাবে।”

তিনি বললেন:
“বলো, তোমার প্রমাণ কী?”

আমি বললাম:
“আমাকে অন্তত নিজের পক্ষে কিছু বলার অধিকার দিন।”

তিনি বললেন:
“আচ্ছা, সেটাও দিচ্ছি।”

আমি বললাম:
“হুজুর! বলুন তো, ‘মানদণ্ড’ বলতে কী বোঝায়?”

তিনি বললেন:
“তুমিই বলো।”

আমি বললাম:
“মানদণ্ড হলো নির্ধারিত এক স্কেল, স্বীকৃত নীতি বা প্রামাণ্য কেন্দ্র—যার আলোকে অন্য কিছুকে যাচাই, মাপা বা বিচার করা হয়।”

তিনি বললেন:
“একেবারে ঠিক! অন্তত একটি কথায় সঠিক বলেছো।”

এরপর আমি বললাম:
“আল্লাহ তাআলা নবী করীম ﷺ–কে এই দুনিয়ায় মানদণ্ড, মাপকাঠি ও পরিমাপক করে পাঠিয়েছেন। আর সব মানুষকে ফরজ করেছেন যেন তারা নিজেদের কথা, কাজ ও অবস্থা এই মানদণ্ডের সঙ্গে খাপ খাওয়ায়।

সবার আগে যারা এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন, তারা ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। তারা শুধু এই মানদণ্ডকে স্বীকারই করেননি, বরং নিজেদের জীবনে এমনভাবে রূপ দিয়েছিলেন যে, তাদের পরে আর কোনো দল—হোক তা তাবেঈন, চার ইমাম, মুহাদ্দিস বা বুযুর্গানে দ্বীন—তাদের মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি।”

মুফতি সাহেবের সাড়া

এতে মুফতি সাহেব কিছুটা নরম হলেন এবং বললেন:
“তাহলে সমস্যা কী, যদি নবী করীম ﷺ–কেও মানদণ্ড ধরা হয় আর সাহাবায়ে কেরামকেও?”

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *