বিবাহ ও ইসলামি জ্ঞানার্জনের সমন্বয়।
———-
|| প্রশ্ন :
আসসালামু ʿআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,
আমি আপনার বাংলা ফেসবুক পেজের নিয়মিত পাঠক। আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা দ্বীন শিখা ও প্রকৃত ইসলামী ইলম অর্জন করা। কিন্তু বিয়ের আগে আমি সাধারণ শিক্ষায় পড়াশোনা করেছি, তাই সুযোগ হয়নি। বিয়ের পর স্বামীকে আমার ইচ্ছার কথা জানিয়েছি, কিন্তু তাঁর মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখিনি। চাকরির কারণে তিনি ঢাকায় থাকেন, আর আমি থাকি শ্বশুরবাড়িতে।
এ অবস্থায় আমি কিভাবে দ্বীন শিখতে পারি এবং সঠিক ইলম অর্জন করতে পারি? আর এ পথে স্বামীর ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো—বিয়ের পর যেহেতু শ্বশুর-শাশুড়ির কোনো মেয়ে নেই এবং স্বামীও ঢাকায় থাকেন, তাই তাঁরা চান আমি তাঁদের সাথেই থাকি। স্বামীর কাছে থাকা কতটা জরুরি? আর শ্বশুরবাড়িতে থাকা কতটা যৌক্তিক?
|| উত্তর:
ওয়া ʿআলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,
আপনার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্য জাযাকিল্লাহু খাইরান।
আল্লাহ আপনাকে কল্যাণকর জ্ঞান দান করুন, তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলা সহজ করুন এবং আপনার বিবাহকে শান্তি ও নেকনিয়তে ভরিয়ে দিন। আমি কুরআন, সুন্নাহ ও উলামাদের ব্যাখ্যার আলোকে উত্তর দিচ্ছি।
দ্বীনের ইলম অর্জন প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের উপর ফরজে ʿআইন। এর মধ্যে রয়েছে সালাহ, সাওম, যাকাত, হজ্বের মতো ইবাদতের বিধি-বিধান জানা, এবং দৈনন্দিন জীবনে হালাল-হারামের সীমানা বোঝা। রাসূল ﷺ বলেছেন: “ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ।” (ইবন মাজাহ) অর্থাৎ একজন মুসলিমকে অন্তত এতটুকু ইলম শিখতেই হবে, যাতে সে আল্লাহর ইবাদত সঠিকভাবে করতে পারে এবং তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারে।
তাই আপনার এ ইচ্ছা প্রশংসনীয়। আপনি যতটুকু পদক্ষেপ নেবেন, প্রতিটিই আল্লাহর কাছে সওয়াবের কাজ হবে ইনশাআল্লাহ। শুরু করতে পারেন নির্ভরযোগ্য অনলাইন রিসোর্স ও প্রিন্ট গ্রন্থ থেকে। মৌলিক বই ও যাচাইকৃত বক্তৃতার প্রতি মনোযোগ দিন। সম্ভব হলে বিশ্বস্ত আলিম ও শিক্ষকদের কাছ থেকে শেখাই সর্বোত্তম, যাতে বোঝাপড়া সঠিক হয়।
স্বামীর ব্যাপারে, একজন মুসলিম পুরুষের দায়িত্ব হলো স্ত্রীর দ্বীনি শিক্ষা নিশ্চিত করা। আল্লাহ বলেন: “হে ঈমানদারগণ, নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার জ্বালানি মানুষ ও পাথর।” (সূরা আত-তাহরীম ৬) তাফসীরকারীগণ বলেন—এর অর্থ হলো পুরুষের ওপর ওয়াজিব যে সে পরিবারকে দ্বীন শিখাবে বা অন্তত শিখার সুযোগ করে দেবে। তাই চাকরিতে ব্যস্ত হলেও স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রচেষ্টায় সমর্থন, উৎসাহ এবং সুযোগ করে দেওয়া—তাতে গাফিলতি করা নয়।
বাসস্থানের ব্যাপারে, ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর মিলন, মমতা ও প্রশান্তি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন: “আর তাঁর নিদর্শনসমূহের একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে প্রশান্তি পাও, আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।” (সূরা আর-রূম ২১)
স্ত্রীর মৌলিক অধিকার হলো—সে স্বামীর সাথে এমন ঘরে থাকবে যেখানে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা থাকবে। ফুকাহাগণ বলেন, স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর জন্য পৃথক বাসস্থান নিশ্চিত করা; যেখানে স্বামী-স্ত্রী ব্যতীত পরিবারের অন্য কেউ থাকবে না—যদি না স্ত্রী নিজে রাজি হয়ে অন্যভাবে থাকতে চায়। শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত অবশ্যই সওয়াবের কাজ এবং তা করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান রয়েছে, কিন্তু এটিকে বাধ্যতামূলক করা যায় না।
অতএব স্বামীকে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। যেমন তাঁর পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি স্ত্রীর অধিকার পূর্ণ করাও ফরজ দায়িত্ব। ন্যায়পরায়ণতা দাবি করে যে, তিনি স্ত্রীর প্রাপ্য নিশ্চিত করবেন, একইসাথে পিতামাতার যত্ন ও খেদমতও করবেন।
আল্লাহ আপনাকে ইলমের পথে দৃঢ়তা দান করুন, আপনার স্বামীকে প্রজ্ঞা দিন যেন তিনি স্ত্রী ও পিতামাতার উভয়ের হক যথাযথভাবে আদায় করতে পারেন, এবং আপনাদের ঘরকে রহমত ও বরকতে ভরিয়ে দিন।
———-
ক্যাটাগরি : ফাতাওয়া, পারিবারিক জীবন, শিক্ষা।
✍ মূল: ড. মোহাম্মাদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।
https://WhatsApp.com/channel/0029VbAxp2qGpLHHqQ3LoY0w