AkramNadwi

হে মৃত্যুর ফেরেশতা! ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/5727

بسم الله الرحمن الرحيم.

হে মৃত্যুর ফেরেশতা! প্রতিটি সৃষ্টি তার নিজস্ব পরিচয়কে প্রিয় মনে করে, প্রতিটি মানুষ তার নিজের নামকে ভালোবাসে। নিঃসন্দেহে তোমার কাছেও তোমার নাম প্রিয় হবে। আর কেনই বা হবে না? এ নাম তো বিশ্বজগতের প্রতিপালক দান করেছেন। তুমি কি জানো, আমাদের মানুষের কাছে তোমার নামের প্রকৃত অর্থ কী?
তোমার নাম দুই শব্দের সমন্বয়ে গঠিত: প্রথম শব্দটি ফেরেশতা, যা আমাদের অভিধান ও শব্দকোষে কতই না সুন্দর! আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারে এ শব্দ কত আকর্ষণীয়! এই শব্দ থেকে যে পবিত্রতা ও নৈকট্যের সুবাস আসে, তা মানুষের মধ্যে নেই; বরং এই জাগতিক জগতের কোনো কিছুর মধ্যেও নেই।
কিন্তু তোমার নামের দ্বিতীয় অংশটি কতই না ভয়ঙ্কর! কতই না আতঙ্কজনক! পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম কিংবা উত্তর-দক্ষিণে তোমার নামের মতো এমন বৈপরীত্য অন্য কোথাও নেই।
হায়! “মৃত্যুর ফেরেশতা” শব্দটি কম্পন সৃষ্টি করে দেয়, কঠোর হৃদয়কেও গলিয়ে দেয়, এবং অহংকার ও হঠকারিতাকে ছাইভস্মে পরিণত করে। কোনো দিন যদি মহান আল্লাহর দরবারে তোমার বিশেষ উপস্থিতির সুযোগ হয়, তাহলে নিজের নাম পরিবর্তনের আবেদন করো। অথবা জিবরাইল আমীনের সুপারিশ চেয়ে নাও। যে দিন তোমার নাম পরিবর্তিত হবে, সে দিন তোমার ভয়াবহতা ভালোবাসা ও সান্নিধ্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।

হে পরকালের বার্তাবাহক!
প্রতিটি প্রাণের জন্য তুমি এক পরীক্ষাস্বরূপ। তোমার আগমনের সময় আকস্মিক। তোমার আগমন নিশ্চিত। সে সময়টি না পিছানো যায়, না বদলানো যায়। তুমি ফানার (ধ্বংসের) চূড়ান্ত বাস্তবতাকে নিশ্চিত করো এবং দুনিয়ার অস্থায়িত্বের অনুভূতি জাগিয়ে তোলো। কী হবে, যখন তুমি হঠাৎ এসে যাবে! তুমি আমাদের বাগানগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করবে, এই প্রিয় পৃথিবী থেকে আমাদেরকে নিঃস্ব করে দেবে। এখানে কুঁড়ি ও কলি রয়েছে, ভেজা ভেজা বর্ষার দিন রয়েছে, রয়েছে সূর্য ও চাঁদ , এবং উজ্জ্বল রাত্রিগুলো রয়েছে।
এখানে প্রিয়জনদের কাহিনি জন্ম নেয়, সুরেলা কণ্ঠে গান গাওয়া হয়। এখানে মজনূ-লাইলী ও শিরীন-ফরহাদের প্রেমের গল্পগুলি স্মরণ করা হয়। এখানে গজল লেখা হয় এবং নতুন নতুন ঢঙে লেখা হয়।

হে হৃদয়বিদারক ও ভয়ংকর চেহারাধারী!
কত হৃদয় আছে, যাদের উপস্থিতি আমাদের জন্য কষ্টদায়ক, এবং যাদের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে আমরা সফল হই। যদি তুমি চাটুকারতার প্রতি আগ্রহী না হও, এবং যদি সত্য কথা শুনতে সক্ষম হও, তবে শোন এবং মনোযোগ দিয়ে শোন। তুমি আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বোঝা। তোমার চেহারার দিকে তাকানো আত্মার জন্য ক্লান্তিকর। বলো, কীভাবে আমরা তোমার থেকে মুক্তি পাব? যদি তুমি এই দয়া করো, তবে আমরা কখনো তোমার এ উপকার ভুলব না।

হে চিরস্থায়ী সত্তার ছায়ায় বাস করা অদৃশ্য দূত!
তুমি জীবনের সূক্ষ্ম পরিসমাপ্তির অপরিহার্য মাধ্যম। তোমার স্পর্শে আত্মা শারীরিক আবরণ ত্যাগ করে এবং দৃশ্যমান ও অদৃশ্য জগতের মধ্যে থাকা পর্দা উঠে যায়। বলা হয়, তুমি কারও বন্ধু নও, শত্রুও নও। বলো, তুমি এই বিচ্ছিন্নতা কোথা থেকে শিখলে? কী, কোনো রূপসী ও চাঁদ-চেহারাদের সাহচর্য তুমি পেয়েছ? কোনো লাইলী-সুলভ বা শিরীন-চরিত্র নাজুক সুন্দরীদের প্রভাব কি তোমার উপর পড়েছে?
হায়, যদি তুমি কাইস ও ফরহাদের সঙ্গী হতে! তবে এই নিরাসক্তি তোমার মধ্যে আসত না। বলো তো, এটা কেমন ন্যায় যে তুমি আমাদের গলিতে আসো এবং আমাদেরকে আমাদের শহর থেকে বহিষ্কৃত করে দাও? আমাদের পর্বতের সজীব ও প্রাণবন্ত উপত্যকা থেকে বের করে দাও এবং সুন্দর পাঙ্গাট (জলঘাটগুলো ) থেকে দূরে সরিয়ে দাও। চাঁদ-তারা ও ফুলের প্রদীপ নিভিয়ে দাও, আমাদের পরিবেশের আলো নিভিয়ে দাও, আমাদের পথ অন্ধকার করে দাও, এবং সর্বত্র চোখের জল দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে দাও।

হে সেই সত্তা, যে কর্তব্য পালন করতে একদম অবিচল!
মানি যে তোমার দায়িত্ব পালনের অভ্যাস সত্য ও ন্যায়ের পরিপূর্ণ। মেনে নিচ্ছি, তোমার উপস্থিতি, যদিও তা কতই না ভয়ঙ্কর ও ভীতিজনক হোক, একটি মহান পরিকল্পনার স্মারক। কারণ তুমি তো কেবল সর্বোচ্চ সত্তার আদেশের সেবক। তুমি সম্পূর্ণ শিষ্টাচার ও মর্যাদার সঙ্গে তাঁর আদেশ পালন করো। কিন্তু তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছো যে এই আনুগত্যের আবেগ আমাদের কাছে কতটা অপ্রীতিকর ও ঘৃণ্য ? তুমি জানো না, তোমার সামান্য কল্পনাও গর্বিত ও অহংকারী ব্যক্তিদের হিলিয়ে দেয়, এবং ফেরাউন ও নমরুদদের ঘুম কেড়ে নেয়।

হে জীবনের কোলাহলকে হরণকারী!
তুমি কি কোনো যাদুকর? সামরীর সঙ্গে কি তোমার কোনো সম্পর্ক আছে? তুমি কী মন্ত্র পড়ো যে তোমার আগমনের পর নীরবতা ছেয়ে যায়, দেহ নিথর হয়ে যায়, জিহ্বা স্তব্ধ হয়ে যায়, দৃষ্টি লুপ্ত হয়ে যায়, শ্রবণশক্তি চিরকালীন বধিরতায় ঢেকে যায়? তুমি কী কর যে পুরো পরিবেশ ভয়ের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে?

হে মৃত্যুর ফেরেশতা!
উত্তর দিও না। তোমার উত্তর আমি জানি। তুমি তোমার পক্ষে বলবে যে, তোমার কারও প্রতি শত্রুতা নেই। তুমি মাথা নিচু করে বলবে যে, তুমি কেবল সৃষ্টিকর্তার আদেশ পালনে বাধ্য। তুমি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঘোষণা। তুমি অজানার দরবারি। তুমি দুনিয়াবি জীবন থেকে চিরস্থায়ী যাত্রার পথপ্রদর্শক। আমাদের কাছে তোমার যুক্তি গ্রহণযোগ্য।

হে মৃত্যুর ফেরেশতা!
আমি কি তোমার কাছে এই অনুরোধ করতে পারি যে, যখন তুমি আমার কাছে আসো, তখন ধীরে এবং কোমলতায় আসো? সন্ধ্যার শীতল বাতাসের মতো আসো, যা ক্লান্ত আত্মাগুলোকে প্রশান্তি দেয় এবং আহত দেহগুলোর সান্ত্বনা হয়ে দাঁড়ায়। এমনভাবে আসো যেন তোমার স্পর্শ মোলায়েম হয়, আর সেই যাত্রা, যার দিকে তুমি আমাকে নিয়ে যাচ্ছ, তা আলোর দিকে, প্রশান্তির দিকে এবং দয়াময় প্রভুর স্নেহের কোলে নিয়ে যায়। তুমি বলবে, এবং অবশ্যই বলবে, যে তুমি সৎ মানুষের সঙ্গে এমনটাই কর। তুমি মুত্তাকীদের সান্ত্বনাদাতা, তুমি নেককারদের সঙ্গী ও দুঃখহরণকারী। তুমি অনন্ত সুখ-সমৃদ্ধ উদ্যানের সুসংবাদ বাহক, তুমি সর্বোচ্চ বেহেশতের আনন্দময় খবরের দূত।

হে পালনকর্তার দাস!
আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব না। যখন তুমি আমার আত্মা গ্রহণ করবে, আমি আল্লাহর ইচ্ছায় তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব না। আমি তোমার আনুগত্য করব। আমি নিশ্চিত যে, তোমার উদ্দেশ্য পবিত্র। তোমার অস্তিত্ব এই সত্যের সাক্ষ্য দেয় যে, আমরা যা কিছু প্রিয় বলে মনে করি, তা ক্ষণস্থায়ী। এই পৃথিবী আমাদের নিজস্ব নয়। এখানে কেউই প্রকৃতপক্ষে আমাদের আপন নয়।
আল্লাহ করুন, যখন সেই সময় আসবে, তুমি আমার সর্বোত্তম সঙ্গী হও। তোমার চেহারা যেন আনন্দদায়ক হয়, হৃদয়কাড়া হয়। তুমি যেন আমার আত্মাকে অভ্যর্থনা জানাও এবং আমাকে জান্নাতের পথে নিয়ে যাও।
হে চিরন্তন ও অসীম রাজত্বের প্রভুর দূত!

———–

মূল : > ড. মুহাম্মাদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা :
|| মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *