AkramNadwi

সুপারিশ বা শাফায়াত ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/5560

بسم الله الرحمن الرحيم

লেখক: ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভী,
অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা :
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

আমার সম্মানিত শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া সাম্ভলী (দা:বা:) এর সন্তান মাওলানা ইলিয়াস নুমানি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে, শাফায়াত সম্পর্কিত একটি জিজ্ঞাসার জন্য ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। এই নিবন্ধটি তার জিজ্ঞাসার উত্তরে প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে শাফায়াতের প্রয়োজনীয় বিশদ বিবরণ এবং নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আরবিতে শাফায়াত শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো:- কোনো জিনিসকে অন্য আরেকটি জিনিসের সাথে যোগ করা বা জোড়া লাগানো। সময়ের সাথে সাথে এর অর্থ প্রসারিত হয়েছে এবং এটি এমন এক ধরনের সুপারিশ বা মধ্যস্থতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে একজন ব্যক্তি অন্যের জন্য অনুরোধ করেন। ধর্মীয় অর্থে, শাফায়াত এমন একটি প্রার্থনা বা সুপারিশ যা একজন বিশ্বাসী অপরের জন্য আল্লাহর কাছে করেন।

সময়ের সাথে সাথে শাফায়াত শব্দটি মধ্যস্থতা বা সুপারিশের জন্য এতটাই সাধারণ হয়ে উঠেছে যে এটি প্রায় একমাত্র এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। সাধারণ অর্থে, মধ্যস্থতা বলতে বোঝানো হয় যে, উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন বাদশাহ যোগ্য কাউকে উপেক্ষা করেন, তবে তার কোনও নিকটস্থ মন্ত্রী বা সহচর সেই ব্যক্তির যোগ্যতার কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দেন। তেমনি, কেউ হয়তো নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে পুরস্কারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, যা মধ্যস্থতার সাধারণ ধারণা।

আল্লাহ তায়ালা তার পুরস্কারের যোগ্যদের বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন—এমন ব্যক্তিদের জন্য যাদের মধ্যে ঈমান ও সৎকর্ম আছে। এমন ব্যক্তিদের শাফায়াতের প্রয়োজন নেই, কারণ আল্লাহ সবকিছুই জানেন। এজন্য কারো বিশ্বাস করা উচিত নয় যে আল্লাহর আদালতে এরূপ সুপারিশ হবে। বরং এমন বিশ্বাস তাওহীদের বিপরীত। এজন্য কুরআনে বারবার শাফায়াতের ধারণাটির বিরোধিতা করা হয়েছে এবং সুস্পষ্ট ভাষায় এর অস্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেমন: “কোনও সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না” (সূরা আল-বাকারা, ৪৮), এবং “সুপারিশ তাদের কোনও কাজে আসবে না” (সূরা আল-মুদ্দাসসির, ৪৮)।

কিন্তু কুরআন ও হাদিস থেকে জানা যায় যে কিয়ামতের দিনে এক ধরণের শাফায়াত হবে। কিন্তু এর প্রকৃতি কী? এটি বোঝার জন্য দুটি উদাহরণ ভেবে দেখা যাক:

১. যখন কোনো বাদশাহ পুরস্কার বিতরণের জন্য আগমন করেন, তখন তার একজন বিশেষ প্রতিনিধি তার আগমনের ঘোষণা দেন। এটি তাঁর আগমনের কারণ নয়; বরং বাদশাহ স্বয়ং পুরস্কার বিতরণ করবেন। এই ঘোষণা দেওয়ার অর্থ হলো সেই প্রতিনিধিকে সম্মান জানানো এবং প্রক্রিয়াটি শুরু করা। কিয়ামতের দিনের শাফায়াতের এই বিশেষ ধরণকে শাফায়াত কুবরা বা মহা-শাফায়াত বলা হয়, যাকে কুরআনে মাকাম মাহমুদ বা প্রশংসিত স্থান বলা হয়েছে।

২. অপরদিকে, কলেজে পুরস্কার বিতরণের সময় আমন্ত্রিত অতিথির মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অথচ অতিথিরা ঠিক করেন না কে পুরস্কার পাবেন। কিয়ামতের দিনও এমন হবে—যারা সৎকর্মে সমৃদ্ধ তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। কিন্তু পাপী মুসলিমরা তাদের পাপের কারণে কিছু সময়ের জন্য শাস্তি ভোগ করবেন, পরবর্তীতে আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা, নবী এবং সৎ ব্যক্তিরা তাঁদের জন্য সুপারিশ করবেন। এই সুপারিশকারী ব্যক্তিদের বলা হবে কাদের জন্য সুপারিশ করতে হবে, এবং এর মাধ্যমে তাদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে এবং পাপীরা মুক্তি লাভ করবেন।

শাফায়াতের জন্য দোয়া করা ইসলামে সুন্নাত হিসেবে গণ্য। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আবেদন করা হয় যেন মহানবী (সা.) প্রশংসিত স্থান (মাকামে মাহমুদ) লাভ করেন। কিন্তু শাফায়াতের ছোট রূপের জন্য দোয়া করা অনুচিত, যেমন, বিশেষভাবে কাউকে সুপারিশকারী হিসেবে চাওয়া। একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া ও তাঁর করুণা কামনা করা। কেননা, জাহান্নামের কষ্ট সহ্য করার মতো নয়। এজন্য জাহান্নামে প্রবেশের কোনও ইঙ্গিত দেয় এমন দোয়া এড়ানো উচিত।

কিছু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, নবী (সা.) কিছু বিশেষ অবস্থায় সুপারিশের দোয়া করেছিলেন। এই দোয়ার মানে মূলত দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আবেদন করা, যা পরবর্তীকালে সুপারিশ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

এমনিভাবে, শিশুর জানাযার দোয়ায় “সুপারিশকারী” শব্দ ব্যবহৃত হয়। যদিও এটি নবী (সা.) থেকে সরাসরি প্রমাণিত নয়, কিন্তু পূর্বসূরি কিছু আলেমদের থেকে এটি বর্ণিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো ধৈর্যের মাধ্যমে আখিরাতের জন্য সান্ত্বনা লাভ করা, এবং আল্লাহ এই ধৈর্যকে পুরস্কৃত করবেন, এবং এটি শাফায়াতের লৌকিক অর্থের মধ্যেই পড়ে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *