بسم الله الرحمن الرحيم.
✍️ লেখক: ড. মোহাম্মাদ আকরাম নদভী
অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা :
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।
—
প্রশ্ন:
আমেরিকার বিখ্যাত আলেম ড. আবু যায়েদ এই প্রশ্নটি পাঠিয়েছেন:
> “আসসালামু আলাইকুম, শাইখ আকরাম। আমার বাবা ইবনে মাজাহর একটি হাদিস সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তিনি বৃদ্ধ এবং নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়তে পারেন না। এই হাদিসটি আল্লাহর পবিত্রতা ব্যক্তিগতভাবে লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। এই পবিত্রতাগুলি কী? সুযোগ পেলে দয়া করে ব্যাখ্যা করবেন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।”
—
উত্তর :
যে হাদিসটি আপনার সম্মানিত বাবা জানতে চেয়েছেন, সেটি ইবনে মাজাহ–এর কিতাব আজ-জুহদ অধ্যায়ের গুনাহের আলোচনা
> “প্রকৃতপক্ষে আমার উম্মতের কিছু মানুষ কিয়ামতের দিন এমন সৎকর্ম নিয়ে আসবে যা তিহামার পাহাড়ের মতো বড় হবে, কিন্তু আল্লাহ তা ছাইয়ের মতো করে দেবেন।” তাউবান (বর্ণনাকারী) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের জন্য তাদের বর্ণনা করুন, যাতে আমরা তাদের মধ্যে অজ্ঞাতসারে না পড়ি।’ রাসূল (ﷺ) উত্তরে বললেন, ‘তারা তোমাদের ভাই এবং তোমাদের জাতির লোক, যারা রাতেও ইবাদত করে যেমন তোমরা করো, কিন্তু যখন তারা একান্তে থাকে, তখন তারা আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে।'”
বিশুদ্ধতা এবং বর্ণনাকারী:
এই হাদিসটিকে গরীব (অপরিচিত) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আল-মুজাম আল-সগীর এ ইমাম তাবারানী বলেছেন, “এটি কেবল এই সনদেই বর্ণিত হয়েছে, যেখানে ‘উকবা একমাত্র বর্ণনাকারী।” এর মানে হল এই হাদিসটি চার স্তরে (উকবা, আরতা, আবু আমির এবং তাউবান) গরীব এবং এই স্তরের মধ্যে অন্য কেউ এই হাদিসটি বর্ণনা করেননি।
এই সনদের বেশ কয়েকজন বর্ণনাকারী প্রামাণ্যতার শর্ত পূরণ করেন না:
1️⃣ আবু আমির আল-আহলানি: হাদিসের প্রামাণ্যতায় স্বীকৃত নন, সাহিহ বুখারি বা মুসলিমে তাঁর কোনো বর্ণনা নেই।
2️⃣ আরতা বিন আল-মুনযির: দুই সাহিহের বর্ণনাকারীদের মধ্যে নন, তবে কেউ কেউ তাকে বিশ্বস্ত বলে মনে করেন।
3️⃣ উকবা বিন আলকামা: সাহিহাইনের বর্ণনাকারী নন, এবং তার বর্ণনায় ভুল মিশ্রণের কিছু প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
4️⃣ ঈসা বিন ইউনুস আল-রামলি: তিনি সাহিহাইনের বর্ণনাকারী নন এবং মাঝে মাঝে ভুল করতেন।
এগুলি তাহদিব আল-কামাল এবং অনুরূপ গ্রন্থ থেকে নেওয়া তথ্য।
হাদিসের অর্থ ও প্রেক্ষাপট:
এই হাদিসের পাঠের সমর্থনে অন্য কোনো উৎস নেই। কুরআনে যেসব গুনাহ ভালো কাজকে বিনষ্ট করে, সেগুলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ব্যক্তিগত গুনাহ অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব, এই বর্ণনাটি মুনকার (অগ্রহণযোগ্য) হিসাবে বিবেচিত হয় এবং একে গ্রহণযোগ্য করার প্রচেষ্টা দুর্বল।
বিষয়ের ব্যাখ্যা:
এই হাদিসটি তাদের নিন্দা করে যারা প্রকাশ্যে ধার্মিকতার পরিচয় দেয় কিন্তু গোপনে আল্লাহর ভয় ও লজ্জা ছাড়াই এমন কাজ করে যা তাঁর পবিত্রতা লঙ্ঘন করে, যেমন:
❌ অশ্লীলতা
❌ মদ্যপান
❌ টিভি, মোবাইল বা ইন্টারনেটে অশ্লীল দৃশ্য দেখা
❌ বাজে লোকদের সাথে জুয়া খেলা
সৎকর্ম ও গুনাহের পরিণতি
কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস অনুসারে, গুনাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৎকর্মকে মুছে দেয় না। বরং, পাপীরা তাদের সৎকর্মের জন্য পুরস্কার পাবে এবং তাদের গুনাহের জন্য শাস্তি পাবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেছেন, “গুনাহ কখনো পুরোপুরি সৎকর্মের প্রতিদান মুছে দিতে পারে না; ঈমানের সৎকর্ম কেবল কুফর দ্বারা মুছে যেতে পারে” (মাজমু’ আল-ফাতাওয়া, ২০/৯৪)।
বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের জন্য ছাড়
মসজিদে জামাতে নামাজ না পড়া যদি বৈধ কারণের জন্য হয়, তবে এটি এই হুঁশিয়ারির অন্তর্ভুক্ত নয়। আপনার বাবা বৃদ্ধ এবং অসুস্থ হওয়ায় তিনি স্বাস্থ্যবান অবস্থায় যে সকল সৎকর্ম করেছেন তার পূর্ণ পুরস্কার পাবেন। যদি তিনি পূর্বে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করে থাকেন, তবে আল্লাহর দয়া থেকে আশা করা যায় যে বার্ধক্যেও তিনি সেই সৎকর্মের পূর্ণ পুরস্কার পাবেন।
—
আল্লাহ যেন আমাদের তার ভয় দান করেন, আমাদের সৎ বানান, এবং ঈমানের সাথে আমাদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে সহায়তা করেন।