https://t.me/DrAkramNadwi/1738
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
——————-
তারা বলল: মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকটতম কারা?
আমি বললাম: আল্লাহর রাসূলগণ ও নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম)।
তারা বলল: এরপর মর্যাদায় কারা?
আমি বললাম: আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবাগণ, রাযিয়াল্লাহু আনহুম। তারা হলেন—সবচেয়ে বিশুদ্ধ হৃদয়ের, সবচেয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী, অকৃত্রিম, সঠিক পথে পরিচালিত এবং সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
“এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও” (সূরা আল-বাকারা: ১৪৩),
এবং বলেছেন,
“তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, যাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য বের করা হয়েছে” (সূরা আল-ইমরান: ১১০)।
তারা বলল: এই দুই আয়াত কি কেবল সাহাবাদের জন্য, নাকি কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মতের জন্য প্রযোজ্য?
আমি বললাম: অবশ্যই সমগ্র উম্মতের জন্য, তবে প্রথমে এই আয়াতদ্বয় সাহাবাদের ওপরই খাটে। তারা এদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পরে যারা এ গুণাবলিতে উত্তীর্ণ হবে, তারা সে অনুযায়ী এই ফজিলতের অংশীদার হবে। এটাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীর অর্থ:
“শ্রেষ্ঠ যুগ হচ্ছে আমার যুগ, এরপর যারা আসবে, তারপর যারা আসবে।”
তারা বলল: সাহাবাদের মর্যাদার স্তর কীভাবে বিভক্ত?
আমি বললাম: তারা তিন স্তরের:
প্রথমত: মুহাজিরগণ (যারা আল্লাহর পথে সব কিছু ত্যাগ করে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছেন)।
দ্বিতীয়ত: আনসারগণ (মদিনার সহায়তাকারী মুসলিমরা)।
তৃতীয়ত: যারা মক্কা বিজয়ের পরে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় মুসলিম হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা সূরা হাশরে বলেন:
“(দানশীলতা নির্দিষ্ট) সেই দরিদ্র মুহাজিরদের জন্য, যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পদ থেকে উৎখাত হয়েছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে, এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে, তারাই সত্যিকারের বিশ্বাসী। আর যারা (আনসাররা) তাদের পূর্বে ঘর ও ঈমানকে নিজেদের আবাসস্থল বানিয়েছে, তারা তাদের ভালোবাসে যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে, এবং যা কিছু তাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তারা অন্তরে কোনো ঈর্ষা বোধ করে না, বরং তারা নিজেদের ওপরও তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও নিজেরাই অভাবগ্রস্ত। আর যারা আত্মার কার্পণ্য থেকে রক্ষা পায়, তারাই সফলকাম। আর যারা তাদের পরে আসবে তারা বলবে: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদের জন্য ক্ষমা করো যারা ঈমানে আমাদের অগ্রগামী হয়েছে, এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই তুমি অতীব দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’”
তারা বলল: সাহাবাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কারা?
আমি বললাম: চার খলিফা, যাদেরকে রাশিদুন এবং মাহদিয়্যিন বলা হয়— আবু বকর,উমর, উসমান,
আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)।
এছাড়া দশজন সাহাবী যাদের জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, তারাও সর্বোত্তম
তারা বলল: কোনো মাপকাঠি আছে কি, যার মাধ্যমে তাদের মধ্যকার মর্যাদার পার্থক্য নির্ণয় করা যাবে?
আমি বললাম: তা হলো—আল্লাহর নৈকট্য লাভে তারা কতটুকু অগ্রগামী হয়েছেন, যা নির্ভর করে তাদের তাকওয়া ও ধৈর্যের ওপর।
তারা বলল: কিন্তু তাকওয়া ও ধৈর্য তো গোপন বিষয়, যা কেবল আল্লাহই জানেন। তাহলে যদি আপনি সহজ কোনো পদ্ধতি বলে দিতেন, আপনি তো আমাদের শায়খ এবং উস্তাদ!
আমি বললাম: তোমরা কি মনে করো আমি গায়েবের খবর জানি?
তারা বলল: আমরা চাই আপনার আন্দাজ ও বিবেচনা অনুযায়ী কিছু জানতে, যা আমাদের জন্য সাহাবাদের চিন্তায় গভীরতা আনবে।
আমি বললাম: যেমন নবীদের মধ্যে ইবরাহিম ও মূসা (আলাইহিমুস সালাম) ইমাম। উভয়েই মহান গুণের অধিকারী হলেও, কারও মধ্যে কিছু গুণ বেশি প্রবল।
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ছিলেন: একনিষ্ঠ, সত্যাশ্রয়ী, সহিষ্ণু, পরিণতবুদ্ধিসম্পন্ন।
মুসা আলাইহিস সালাম ছিলেন: সত্য-মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট পার্থক্যকারী, সত্য প্রচারে সাহসী, অন্যায় দমনকারী, আল্লাহর পথে কঠোর, আবার বিনয়ী ও সীমার মধ্যে থেকেছেন।
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এই সব গুণাবলী একত্রিতভাবে ধারণ করেছেন।
আমি বললাম: সাহাবীদের মধ্যে—
ইবরাহিম আ. -এর অনুরূপ ছিলেন আবু বকর রা.।
মূসা আ. -এর অনুরূপ ছিলেন উমর রা.।
উসমান রা. ছিলেন ইবরাহিম আ.- এর অনুরূপ,
আলী রা. ছিলেন মূসা আ. – এর অনুরূপ।
রাসূল সা. -এর দুই প্রিয় স্ত্রীদের মধ্যে:
ইবরাহিম আ. এর গুণে ছিলেন খাদিজা রা.।
মূসা আ. এর গুণে ছিলেন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)।
আমি বললাম:
ইবরাহিম আ. এর গুণে যারা মিলিত: আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, উম্মে সালমা, মুআয ইবনে জাবাল, ইবনে মাসউদ, আবু দারদা, সালমান ফারসি, আবু মুসা আশআরি, হাসান ইবনে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম।)
তাবেঈনদের মধ্যে: আলকামা, আসওয়াদ, ইবরাহিম নাখঈ, আইউব সাখতিয়ানি, ইবনে আউন।
পরবর্তী যুগে: ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান সাওরী, আবদুর রহমান ইবনে মাহদী, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (ইমাম বুখারি), আবুল হাজ্জাজ মিযি এবং আরও অনেকে।
আমাদের যুগে: শায়খ আবুল হাসান আলী নাদবী (রহিমাহুল্লাহ)।
আমি বললাম:
মূসার গুণে যারা মিলিত: যুবায়ের ইবনে আওয়াম, তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ, উবাই ইবনে কাব, হুসাইন ইবনে আলী।
তাবেঈনদের মধ্যে: সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব, হাসান বসরী, ইবনে সিরিন।
পরবর্তী যুগে: ইবনে আবি যইব, ইমাম মালিক, শুআ’বা, মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস (ইমাম শাফি), ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, আবু হাতেম রাজী, ইমাম মুসলিম, ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইমাম সারহিন্দী, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব, শাহ ইসমাঈল শহীদ এবং আরও অনেকে।
আমাদের যুগে: মুহাম্মদ ইউনুস জনপুরী (রহিমাহুল্লাহ)।
তারা বলল: তাহলে সাহাবীদের প্রতি আমাদের করণীয় কী হওয়া উচিত?
আমি বললাম: তাদের জীবনী জানতে হবে, তাদের পথ অনুসরণ করতে হবে, তাদের জন্য দোয়া করতে হবে এবং তাদের ভালোবাসতে হবে। কারণ, যারা কোনো জাতিকে ভালোবাসে, তারা তাদের সঙ্গী হয়।
তারা বলল: যারা সাহাবাদের গালি দেয় তাদের ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
আমি বললাম: তারা হলো সবচেয়ে হতভাগা এবং আল্লাহর রহমত থেকে সবচেয়ে দূরে। যখনই কেউ কোনো সাহাবীকে কষ্ট দেয়, তখন তাদের নিজের আমলনামা থেকে সাহাবীদের আমলনামায় নেকি সঞ্চারিত হয়। ফলে সাহাবীরা মর্যাদায় আরো উন্নীত হয়, আর গালি দেওয়া ব্যক্তিরা অপমানিত হয় এবং নিচে নেমে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে এই বিপদ থেকে হিফাজত করুন।
————
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।