AkramNadwi

সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর ❞ (পর্ব-৮)

https://t.me/DrAkramNadwi/5677

بسم الله الرحمن الرحيم


শনিবার, ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মূল : ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভি, অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা :
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

আজ সকাল আটটার পরে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রিয় বন্ধু, আলেম আবদুল্লাহ রিদওয়ান, তার স্ত্রী আলেমা ফাতিমা আল-হুদা এবং তার সম্মানিত পিতা। আমাদের সাক্ষাৎ ছিল অত্যন্ত আন্তরিক ও স্নেহপূর্ণ। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের নিকটবর্তী একটি কফিশপে বসেছিলাম। সেখানেই আমরা একসঙ্গে চা পান করি। আমাদের এই সম্মিলন ছিল সমৃদ্ধ আলোচনায় ভরপুর, যা মূলত ‘ইন্সটিটিউট অব পিস’-এর মহৎ লক্ষ্য নিয়ে আবর্তিত হয়।

ফাতিমা তার ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে তিনি ইসলামকে মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত করতে চান, যা মানুষের আত্মিক ও মানসিক প্রয়োজনীয়তার গভীরতর উপলব্ধি এনে দেয়। তার স্বামী বললেন, “আমার মতে, মনোবিজ্ঞানকে ইসলামের থেকে আলাদা রাখা উচিত।” আমি বললাম, “আপনার এই মতামত যথার্থ, কারণ এ দুই বিষয়ের মিশ্রণ করলে তা ইসলাম ও মনোবিজ্ঞান উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে।” আমি বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করলাম এবং বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরলাম।

আমাদের আলোচনার মাঝে বেশ কিছু প্রশ্ন ও মতবিনিময় হয়। তারা আমার কেরালা ও দক্ষিণ ভারতের সফর সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার লেকচারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। সেখানে আমি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ সভ্যতা, এবং জ্ঞান বিনিময়ের সৌন্দর্য লক্ষ্য করেছি। আমরা আলোচনা করলাম, কিভাবে মুসলমানরা এ ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হয়ে নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলকে সমৃদ্ধ করতে পারে।

সকাল সাড়ে এগারোটায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রওনা হই এবং দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। দুপুর একটায় সেখানে পৌঁছাই। ড. জানান আগে থেকেই আমার জন্য একটি বিশেষ দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছিলেন। এই আয়োজনটি ছিল একটি সুন্দর দ্বীপের উপকণ্ঠে, যেখানে একটি হ্রদের পাশের মনোরম স্থানে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তার আতিথেয়তার তুলনা যেন মেঘের দানে! আর তার হৃদয় যেন এক প্রীতিপূর্ণ স্রোতধারা!

আমরা শান্ত, নির্জন পরিবেশে একসঙ্গে তাজা মাছ, হুমুস এবং রুটি সহ সুস্বাদু খাবার উপভোগ করি। ড. জিনান অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে আমার সফরের সফলতা নিয়ে কথা বলেন এবং জানান যে আমার লেকচারগুলো তার সহকর্মীদের জন্য খুবই উপকারী ও উপভোগ্য হয়েছে। তার অনুপ্রেরণামূলক কথার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই এবং এ সফর সফল করতে তার প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করি।

ড. জিনান তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাকে জানান। তিনি আগামী এপ্রিল মাসে অক্সফোর্ডে ভ্রমণের জন্য উচ্ছ্বসিত এবং সেখানে তিন মাসের জন্য গবেষণায় অংশগ্রহণ করবেন। আমরা তার এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করি, যা আশা ও উদ্দীপনায় পূর্ণ ছিল। বিদায়ের সময় আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং তার সফলতার জন্য শুভকামনা জানাই।

বিকাল দুইটা পনেরো মিনিটে আমি এয়ারপোর্টে পৌঁছাই। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর আমি অপেক্ষাগারে গিয়ে বসি এবং কাজ করার সুযোগ গ্রহণ করি। পরিবেশ ছিল শান্ত, যা আমাকে কাজে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে।

বিকাল সাড়ে তিনটায় আমরা বিমানে উঠি। যাত্রাপথে সময় কাটাই কাজ বা বিশ্রামে। সন্ধ্যা আটটায় আমরা হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করি। আমি ভাবি, আমরা এই পৃথিবীতে আসি, যাই এবং একদিন আমাদের বিদায় নিতে হবে। যে ব্যক্তি কল্যাণের পথ বেছে নিয়েছে এবং মানুষের জন্য পথনির্দেশনা সৃষ্টি করেছে, সে ধন্য। আর যে ব্যক্তি অকল্যাণের পথে হেঁটেছে, সে হতভাগ্য!

“ধন্য সেই ব্যক্তি, যে পরিতৃপ্তচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকে।”

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *