AkramNadwi

শিরোনাম : হিফজুল কোরআনের পরবর্তী শিক্ষা। || প্রশ্

শিরোনাম : হিফজুল কোরআনের পরবর্তী শিক্ষা।

|| প্রশ্ন

মাওলানা শফীউর রহমান সাহেব নাদককভী, বর্তমানে মস্কাট (ওমান)-এ অবস্থান করছেন। তিনি লিখেছেন:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ,
আমি শফীউর রহমান, মস্কাট (ওমান) থেকে লিখছি। অনেক ভয়ে ও সংকোচ নিয়ে এই বার্তা পাঠাচ্ছি। আপনার ব্যস্ততা খুব বেশি থাকে, তাই যখনই সময় পাবেন উত্তর দিয়ে দেবেন বলে আশা রাখি। আমার ছেলে কোরআন হিফজ করছে এবং সম্ভাবনা আছে যে রমজান পর্যন্ত সম্পূর্ণ করে ফেলবে। তখন তার বয়স হবে ১৬ বছর। আমরা জানতে চাই, এরপর তাকে কীভাবে পড়াশোনা করানো উচিত। এ বিষয়ে আপনার দিকনির্দেশনার প্রয়োজন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আপনাকে সুস্থতা, কল্যাণ এবং দীর্ঘ জীবন দান করুন। আমীন।

উত্তর

আপনাকে প্রথমেই অভিনন্দন জানাই যে আপনার সন্তান কোরআন মুখস্থ সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা তাকে আরও জ্ঞানের ভান্ডার দান করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে উন্নতি ও মর্যাদা দান করুন।

কোরআনের আয়াত মুখস্থ করা অবশ্যই বরকতময় একটি কাজ, তবে এটিকেই আসল হিফজ বলা যায় না। কোরআন, হাদিস এবং আরবি ভাষায় “হিফজ” শব্দের অর্থ আজকাল যে অর্থে চালু আছে, তা নয়; বরং এর চেয়ে গভীর ও বিস্তৃত। বর্তমান ব্যবহৃত অর্থ হিফজের আসল মর্যাদাকে ছোট করে ফেলার নামান্তর। আমি আমার আরবি ও ইংরেজি প্রবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছি। কোনো সময়ে উর্দুতেও লিখব ইন-শা-আল্লাহ। আপাতত আপনার প্রশ্নের আলোকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আপনার সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে চিন্তা করতে গিয়ে যেমন ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব দিবেন, তেমনি পার্থিব শিক্ষাকেও অবহেলা করবেন না। পার্থিব শিক্ষার সাথে জীবিকার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। জীবিকার গুরুত্ব এই দুনিয়ায় এত বেশি যে একে উপেক্ষা করা চলে না।

অনেক সময় কিছু মানুষ আবেগী স্লোগান দিয়ে আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে যেন শুধু ধর্মীয় শিক্ষার দিকেই মনোযোগ দেন, যাতে ভবিষ্যতে আপনার সন্তান দ্বীনের খেদমত করতে পারে। কিন্তু অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে জীবিকার সঠিক ব্যবস্থা না থাকলে অধিকাংশ মাদরাসা-স্নাতক দ্বীনের কোনো কার্যকর খেদমত করতে পারেন না। বরং দেখা যায় বহু আলেম ট্যাক্সি চালাচ্ছেন অথবা নানা ধরনের কাজ করছেন জীবিকার জন্য; ধীরে ধীরে তারা নিজেদের ধর্মীয় জ্ঞানও হারিয়ে ফেলছেন।

অতএব, আপনি যে দেশে বসবাস করছেন, সেই দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার অধীনে আপনার সন্তানের সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা করুন, যাতে সে কোনো সঠিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় এবং অন্তত জীবিকার দিক থেকে নিশ্চিন্ত হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, দুনিয়া শুধুই ভোগের জায়গা নয়; এটি আখিরাতের প্রস্তুতির জায়গা। তাই সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিও বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মাদরাসায় যে শিক্ষা “দ্বীনি শিক্ষা” নামে প্রদান করা হয়, তা মানের দিক থেকে খুবই নিম্নমানের। সেখানে দ্বীনের পরিবর্তে আসলে মাসলাক শেখানো হয়। আর যেহেতু মাসলাকের কোনো শেষ নেই, তাই শুরু থেকেই শিশুদের মনে বিভাজন ও গোষ্ঠীবাদী চিন্তা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ মুসলমান একক উম্মাহ নয়, বরং খণ্ডিত গোষ্ঠীসমূহ।

দ্বীনের ভিত্তি হলো আল্লাহর ইবাদত এবং আখিরাতের সফলতার প্রস্তুতি। কিন্তু মাসলাকের ভিত্তি হলো বাহ্যিক পরিচয়। তাই মাদরাসা থেকে যারা বের হয়, তাদের অধিক মনোযোগ থাকে পোশাক-আশাক ও চেহারার সাজে। প্রতিটি মাসলাকের পোশাক আলাদা, আর পোশাক দিয়েই বোঝা যায় সে কোন মাসলাকের অনুসারী।

দ্বীনের ভিত্তি হলো দলিল, আর দলিল বলতে বোঝায় কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস। কিন্তু অধিকাংশ মাদরাসায় দলিল শেখানো হয় না, বরং তাদেরকে “আকাবির” (পূর্বসূরি আলেমদের) অন্ধ অনুকরণে প্রশিক্ষিত করা হয়। অথচ এ আকাবিররা সাহাবা ও তাবেঈন নন, বরং পতনের যুগের মানুষ। প্রত্যেক মাসলাকের আলেম আলাদা, তাই তাদের মধ্যে কোনো সাধারণ ভিত্তি নেই। যখন এদের থেকে দলিল চাওয়া হয়, তখন তারা বলে: “আমাদের আকাবির তো আপনার চেয়ে বেশি জানতেন।” অথচ তারা বোঝে না, শুধু আকাবিরের নাম উল্লেখ করা জ্ঞান নয়, বরং অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তি।

অতএব, আপনি যখন আপনার সন্তানের দ্বীনি শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন, তখন তিনটি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিন:

প্রথমত: তাকে আরবি ভাষার মানসম্মত শিক্ষা দিন—পড়া, বোঝা, বলা ও লেখা—সব দিক থেকে। পুরনো পাঠ্যক্রম থেকে দূরে রাখুন, যেমন মানুষ কুষ্ঠরোগ থেকে দূরে সরে। সেই পুরনো ব্যবস্থায় কখনও আরবি ভাষার স্বাদ ও রুচি জন্মাতে পারে না। সেখানে মৃত এক ভাষা শেখানো হয়, যার ফলে ছাত্ররা না কোরআনের মর্যাদা বুঝতে পারে, না হাদিসের, এমনকি আরবিতে দু’লাইন লিখতে বা বলতে পারে না।

দ্বিতীয়ত: তাকে সরাসরি কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা দিন। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মহিমা তার অন্তরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করুন। তাকে বুঝিয়ে দিন যে কোরআন ও সুন্নাহর সামনে কারো বক্তব্য প্রমাণ হতে পারে না। তাকে শেখান, আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে তাকওয়া, কোনো ধর্মীয় বাহ্যিক সাজসজ্জা নয়। আল্লাহ মাসলাক সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না; তিনি প্রশ্ন করবেন তাঁর প্রতি ভালোবাসা, তাঁর ভয়,

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *