AkramNadwi

শিরোনাম : হাদিস: “তিনজন মানুষ আছে, যারা দোয়া করে ক

শিরোনাম : হাদিস: “তিনজন মানুষ আছে, যারা দোয়া করে কিন্তু তাদের দোয়া কবুল হয় না” — একটি অনুসন্ধান
——————–

|| প্রশ্ন :

সম্মানিত জনাব হাফিজ মাহমুদ করিম সাহেবের পক্ষ থেকে মাওলানা মিসবাহ আহমদ কাসেমি (মাদ্দাযিল্লাহু আলী)-এর একটি প্রশ্ন আমার কাছে এসেছে।

তিনি লিখেছেন:

“মাওলানা ড. আকরাম নাদভী সাহেব মাদ্দাযিল্লাহুল আ‘লী, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আশা করি আপনি সুস্থ আছেন। নিচের হাদিসটির সনদগত মর্যাদা ও ব্যাখ্যা জানতে চাই। দয়া করে উত্তর প্রদান করুন।

তিনজন মানুষ আছে, যারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, কিন্তু তাদের প্রার্থনা কবুল হয় না।
১. যার স্ত্রী দুষ্টচরিত্রের, অথচ সে তাকে তালাক দেয় না।
২. যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ এক মূর্খের হাতে তুলে দেয়, অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “তোমরা তোমাদের সম্পদ মূর্খদের হাতে দিও না।”
৩. আর যে ব্যক্তি কারও কাছে ঋণ দেয়, অথচ তার উপর সাক্ষী রাখে না।”

প্রশ্ন হলো: আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ﷺ তো খারাপ স্বভাবের স্ত্রীকে সহ্য করতে উৎসাহিত করেছেন, অথচ এখানে উল্টো কথা বলা হয়েছে কেন?

|| উত্তর:

এই হাদিসটি মুস্তাদরাকুল হাকিম-এ নিম্নলিখিত সনদে বর্ণিত হয়েছে—

حدثني علي بن حمشاذ العدل ، ثنا أبو المثنى معاذ بن معاذ العنبري ، ثنا أبي ، ثنا شعبة ، عن فراس ، عن الشعبي ، عن أبي بردة ، عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه ، عن النبي صلى الله عليه وآله وسلم قال:
“ثلاثة يدعون الله فلا يستجاب لهم: رجل كانت تحته امرأة سيئة الخلق فلم يطلقها، ورجل كان له على رجل مال فلم يشهد عليه، ورجل آتى سفيها ماله وقد قال الله عز وجل: ولا تؤتوا السفهاء أموالكم.”

হাকিম এ হাদিসকে “শাইখাইন (ইমাম বুখারি ও মুসলিম)-এর শর্তে সহিহ” বলে মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু বিষয়টি আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়—হাকিমের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়।

ইমাম ইবনু আবি শাইবার বর্ণনা

হাকিমের বহু আগে ইমাম বুখারি ও মুসলিমের শাইখ হাফিজ ইবনু আবি শাইবা এ হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন—

حدثنا يحيى بن سعيد عن شعبة عن فراس عن الشعبي عن أبي بردة عن أبي موسى قال:
“ثلاثة يدعون فلا يستجاب لهم: رجل أعطى سفيها ماله وقال الله تبارك وتعالى: ولا تؤتوا السفهاء أموالكم، ورجل كانت عنده امرأة سيئة الخلق فلم يطلقها أو لم يفارقها، ورجل كان له على رجل حق فلم يشهد عليه.”

এখানে ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান, শুবাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। এটি মাওকুফ — অর্থাৎ সাহাবি আবু মুসা আশ‘আরী রা.-এর বক্তব্য। এতে নবী ﷺ-কে উল্লেখ করা হয়নি।

এ কারণেই শাইখাইন (বুখারি ও মুসলিম) একে তাদের সহিহ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেননি। হাকিমও নিজেই বলেছেন:

“ولم يخرجاه لتوقيف أصحاب شعبة هذا الحديث على أبي موسى”
অর্থাৎ, শুবাহর উস্তাদগণ এ বর্ণনাটিকে আবু মুসা আশ‘আরীর উক্তি হিসেবেই মাওকুফ অবস্থায় বর্ণনা করেছেন।

অতএব, এ হাদিস সিহাহ সিত্তাহ-এর কোনো গ্রন্থেই নেই।

মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের অভিমত

মুহাদ্দিসগণ মনে করেন, এ সনদের সাথে আসলে ভিন্ন একটি হাদিসের সঠিক বয়ান ছিল, কিন্তু ভুলক্রমে অন্য একটি পাঠ এখানে জুড়ে গেছে।

হাকিম নিজেও বলেন:

“وإنما أجمعوا على سند حديث شعبة بهذا الإسناد: ثلاثة يؤتون أجرهم مرتين، وقد اتفقا جميعا على إخراجه.”

অর্থাৎ, শুবাহর এ সনদে সহিহ হাদিস আসলে এই— “তিনজনকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেওয়া হবে।” এ হাদিস ইমাম বুখারি ও মুসলিম উভয়ে গ্রহণ করেছেন।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলও বলেন, এটি মারফু নয়, বরং আবু মুসা আশ‘আরী রা.-এর উক্তি।

তিনি বলেছেন:
“ليس هو عندنا مسندًا، وحدثنا غندر غير مسند”
(আমাদের কাছে এটি মারফু হাদিস নয়। গুনদারও একে মারফু আকারে বর্ণনা করেননি)।
[রেফারেন্স: مسائل حرب الكرماني للإمام أحمد – كتاب النكاح ৩/১২৩৯]

উপসংহার

এই বর্ণনা একদিকে মাওকুফ এবং অন্যদিকে সুপ্রতিষ্ঠিত সহিহ শিক্ষার বিরোধী। তাই ইমাম যাহাবীসহ বহু মুহাদ্দিস এটিকে মুনকার বলেছেন।

অতএব, সঠিক সিদ্ধান্ত হলো—এটি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী নয়, বরং আবু মুসা আশ‘আরী রা.-এর ব্যক্তিগত মতামত।

তাঁর উদ্দেশ্যও ছিল না যে, এদের তিনজনের কোনো দোয়া কখনো কবুল হবে না। বরং তিনি বোঝাতে চেয়েছেন—
যে ব্যক্তি কোনো কষ্ট বা নির্যাতনের মধ্যে পড়ে থেকেও আল্লাহ প্রদত্ত মুক্তির পথ ব্যবহার করে না, বরং সে অবস্থাতেই পড়ে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করে—তার সে ধরনের দোয়া কবুল হবে না।

তবে অন্য বিষয়ে যদি সে দোয়া করে, তবে তা সাধারণ মানুষের মতোই কবুল হতে পারে।

আর যদি এমন অবস্থা হয় যে, সে সত্যিই অসহায়—নিজেকে মুক্ত করার কোনো ক্ষমতা তার নেই—তাহলে সে মাজুর (অসহায়), এবং তার দোয়া অবশ্যই কবুল হবে।

✅ সারকথা: এই বর্ণনাটি নবি ﷺ-এর হাদিস নয়, বরং আবু মুসা আশ‘আরী রা.-এর উক্তি। এর মর্ম হলো—যে ব্যক্তি নিজের উপর নির্যাতনের দরজা খোলা রাখে অথচ মুক্তির উপায় আছে, তার সে অবস্থার দোয়া কবুল হয় না। তবে অন্যান্য দোয়া তার ক্ষেত্রেও কবুল হতে পারে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *