শিরোনাম : বৈধ কারণ ছাড়া নামাজ একত্র করার বিধান
——————–
|| প্রশ্ন:
ভারতের কেরালা থেকে আমার ছাত্রী সুবাইদা আমাকে এই প্রশ্ন করেছেন:
আসসালামু আলাইকুম, শাইখ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কি কখনো মদিনায় (ভ্রমণ, বৃষ্টি বা বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই) যোহর ও আসর অথবা মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করেছেন?
যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে, তাহলে প্রয়োজনে আমরাও কি এভাবে করতে পারি?
অনেকেই এই ব্যাপারে জানতে চাইছে। দয়া করে উত্তর দিন, শাইখ।
|| উত্তর:
ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
ইসলামে মূলনীতি হলো—পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন:
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا
“নিশ্চয়ই নামাজ নির্ধারিত সময়ে মুমিনদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।” (সূরা আন-নিসা ৪:১০৩)
এই আয়াত প্রমাণ করে যে প্রতিটি নামাজের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে এবং তা সময়মতো আদায় করা মুমিনদের জন্য বাধ্যতামূলক।
তবে কিছু ক্ষেত্রে সহজ করার জন্য নামাজ একত্র করা (جمع) বৈধ করা হয়েছে—যেমন ভ্রমণ, অসুস্থতা, অথবা মসজিদে জামাতের জন্য বৃষ্টি হলে।
সহিহ মুসলিমে ইবন আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত:
جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ، وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِالْمَدِينَةِ فِي غَيْرِ خَوْفٍ وَلَا مَطَرٍ
“আল্লাহর রাসূল ﷺ মদিনায় কোনো ভয় বা বৃষ্টি ছাড়া যোহর ও আসর, এবং মাগরিব ও এশা একত্রে পড়েছেন।”
এ বর্ণনা দেখলে মনে হয়, কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই নামাজ একত্র করা হয়েছিল। কিন্তু ইমাম তিরমিজি তাঁর ইলাল গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন:
“আমার এ গ্রন্থের সমস্ত হাদিসের ওপর আমল করা হয়েছে এবং কিছু আলিম তা গ্রহণ করেছেন। তবে দুটি হাদিস ছাড়া—তার একটি হলো ইবন আব্বাস (রাযি.)-এর হাদিস, যেখানে এসেছে যে নবী ﷺ মদিনায় ভ্রমণ, ভয় বা বৃষ্টি ছাড়া যোহর-আসর ও মাগরিব-এশা একত্র করেছিলেন।”
অর্থাৎ আলেমগণ এ হাদিসকে বৈধ কারণ ছাড়া নিয়মিতভাবে নামাজ একত্র করার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেননি। আমি আমার সহিহ মুসলিম ব্যাখ্যায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং এর ওপর নির্ভর করার দুর্বলতাও দেখিয়েছি।
আবার ইমাম নববী তাঁর শরহে সহিহ মুসলিম-এ স্পষ্ট করেছেন যে এটি নবীর ﷺ অভ্যাসগত কাজ ছিল না। অনেক আলেম এটিকে “جمع صوري” (দৃষ্টিতে একত্র করা) হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহর নামাজ প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত দেরি করতেন এবং আসর প্রথম সময়ে পড়তেন। একইভাবে মাগরিব বিলম্ব করে পড়তেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এশা শুরু করতেন। ফলে প্রতিটি নামাজ নিজ নিজ সময়ের ভেতরেই হতো, তবে পরপর হয়ে যেত।
সুতরাং সঠিক আলেমদের মত হলো—বৈধ কারণ ছাড়া নামাজ একত্র করা জায়েজ নয়, আর নিয়মিতভাবে তা করা গ্রহণযোগ্য নয়। বরং সুন্নাহ হলো—প্রতিটি নামাজ নিজ নিজ সময়ে পড়া। তবে ভ্রমণ, অসুস্থতা বা জামাতের জন্য বৃষ্টির মতো প্রকৃত প্রয়োজনে একত্র করা বৈধ।
——————–
ক্যাটাগরি : সালাত, ফিকাহ, ফাতাওয়া, হাদিস।
—-
✍️ মূল রচনা: ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভী, অক্সফোর্ড
✍️ অনুবাদ, যাচাই ও সম্পাদনা: মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ
—-
🔗 অনূদিত মূল প্রবন্ধের লিংক: 👇
https://t.me/DrAkramNadwi/6936