শিরোনাম : নারী সাহাবিয়াহ
————–
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবাগণ মুসলমানদের কাছে এমন এক মর্যাদা ও কর্তৃত্বের আসনে আসীন, যা পরবর্তী সব প্রজন্মের ওপর স্বীকৃত ও প্রযোজ্য। এ মর্যাদার ক্ষেত্রে নারী সাহাবিয়াহরাও পুরুষ সাহাবাদের সমান অংশীদার। এর পেছনে মূল কারণ হলো তাঁদের ঈমানের দৃঢ়তা এবং দ্বীনকে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে তাঁদের গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, যা তাঁরা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রদর্শন করেছেন।
নিঃসন্দেহে তাঁদের ইসলামের এই উৎকর্ষের বড় কারণ হলো, তাঁরা সরাসরি নবুয়ত ও ওহীর যুগ প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁরা নবীজির কাছে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারতেন, তাঁর ব্যাখ্যা ও চিন্তাভাবনা শুনতে পারতেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তসমূহকে বাস্তবে প্রয়োগ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। নারী সাহাবিয়াহরাও পুরুষদের মতোই ওহীর যুগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রত্যক্ষ করেছিলেন কীভাবে নবীজি সেসব পরিস্থিতি পরিচালনা করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, উদ্বেগ ও অংশগ্রহণ কুরআনে যেমন উল্লেখিত হয়েছে, তেমনি হাদিস ও সীরাত গ্রন্থেও সংরক্ষিত রয়েছে।
তাঁরা হিজরতে অংশগ্রহণ করেছেন, হুদাইবিয়ার সংকটকালে উপস্থিত ছিলেন এবং মক্কা বিজয়ের আনন্দে শরিক হয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে না থাকলেও যুদ্ধের ভয়াবহতা তাঁরা অনুভব করেছেন—ভাই, পিতা, সন্তান হারানোর দুঃখ তাঁদেরও সহ্য করতে হয়েছে। তাঁরা মা, দুধমা, স্ত্রী, এতিম, তালাকপ্রাপ্তা, বিধবা, দাসী কিংবা দাসমালিক—যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, নিজেদের সমস্যা নবীজির সামনে উপস্থাপন করতেন এবং সেখান থেকে দিকনির্দেশনা পেতেন।
নারীদের এ সব প্রশ্ন ও প্রয়োজনের কারণে কুরআন স্পষ্টভাবে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও উল্লেখ করেছে—মানবীয় গুণাবলির ধারক হিসেবে, যা আল্লাহর কাছে প্রিয়। কুরআন বারবার ঘোষণা করেছে, আল্লাহ নারীদের কণ্ঠ পুরুষদের মতোই শোনেন, তাঁদের আবেদন ও অভিযোগ তাঁর কাছে পৌঁছে যায় এবং তিনি সাড়া দেন। তাঁর সাক্ষ্য পুরুষ ও নারী উভয়ের কর্ম ও নিয়তের ওপর সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, পুরুষ সাহাবাদের মতোই নারী সাহাবিয়াহরাও নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট, পরিবার ও সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্নতার বেদনায় শরিক ছিলেন, এবং কুরআনের দৃষ্টিতে তাঁদের উদ্বেগ ও ত্যাগ ছিল সমান গুরুত্বসম্পন্ন। তাঁরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সাফল্যও প্রত্যক্ষ করেছেন—ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামকে বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে সংগ্রাম করতে হয়, তা নিজ চোখে দেখেছেন।
তাঁরা ধৈর্য ও সহনশীলতা অর্জন করেছিলেন, কারণ তাঁরাও অবিশ্বাস থেকে বিশ্বাসে, তাত্ত্বিক জ্ঞান থেকে ব্যবহারিক জীবনে, নিছক ভঙ্গি থেকে জীবন্ত ইতিহাসে উত্তরণের পথ অতিক্রম করেছিলেন। ঈমান ও দ্বীনের দাবির ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী সমানভাবে দায়িত্বশীল ছিলেন এবং এর প্রতিদানও সমান, যদিও তাঁদের কর্মক্ষেত্র ছিল ভিন্ন। উভয়ের জন্যই কুরআন সংরক্ষণ ও প্রচার বাধ্যতামূলক ছিল, এবং জ্ঞানকে প্রচার ও কর্মে বাস্তবায়ন করা তাঁদের দায়িত্ব ছিল।
তাই সাহাবাদের যুগে জ্ঞান ও ফতোয়ার কর্তৃত্ব কেবল পুরুষদের হাতে সীমাবদ্ধ ছিল না। নারী সাহাবিয়াহদের জ্ঞান ও মতও সমানভাবে মর্যাদাপ্রাপ্ত ছিল। বহু হাদিসে এসেছে যে, পুরুষরা তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইতেন এবং তাঁদের বক্তব্য গ্রহণ করতেন। অর্থাৎ যে যুগকে মুসলমানরা সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তরূপে মান্য করে, সে যুগে মুসলিম সমাজে নারীর প্রকাশ্য উপস্থিতি ও কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত ছিল।
অতএব বলা সঠিক হবে যে, উম্মাহর দায়িত্ব বহনে নারীদের অধিকার এবং সেই দায়িত্ব প্রকাশের জন্য ধর্মীয় কর্তৃত্ব প্রয়োগের অধিকার, আল্লাহর রাসূল যেভাবে অনুমোদন ও কল্পনা করেছেন, তা ইসলামের সর্বোত্তম ও প্রাথমিক চিত্র—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবাদের মাধ্যমে প্রকাশিত ইসলাম।
——————–
ক্যাটাগরি : সিরাহ, তারিখ, হাদিস।
—
✍️ মূল রচনা: ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভী, অক্সফোর্ড
✍️ অনুবাদ, যাচাই ও সম্পাদনা: মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ
—-
🔗 অনূদিত মূল প্রবন্ধের লিংক: 👇
https://t.me/DrAkramNadwi/6945