AkramNadwi

শিরোনাম : নারীর শিক্ষা। —————- بسم الله

শিরোনাম : নারীর শিক্ষা।
—————-
بسم الله الرحمن الرحيم.

আজকের দিনে মুসলমানদের সামনে যেসব জটিল সমস্যা দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো— “ইসলামে নারীর মর্যাদা”। এই সমস্যাটিকে গভীরভাবে বোঝার এবং এর সমাধান খোঁজার আন্তরিক প্রচেষ্টা এখনো পরিলক্ষিত হয় না। অথচ যখন কোনো সমস্যা সামনে আসে, তার সমাধান খোঁজা অত্যন্ত জরুরি, কারণ আল্লাহ মানুষকে এমন স্বভাবের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছেন যে, তারা সমস্যার সঙ্গে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না।

যদি আমরা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সমস্যার সমাধান না দিই, তবে মানুষ অবধারিতভাবে অইসলামী সমাধানের দিকে ঝুঁকবে। এবং অইসলামী সমাধান মুসলমানদের মাঝে যেভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে কেন ধর্মত্যাগ (ارتداد) এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, কিংবা কেন অন্তত তাদের হৃদয় থেকে ইসলামের সত্যতা এবং যুগনেতৃত্বের যোগ্যতার প্রতি বিশ্বাস ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

এই ধর্মত্যাগ, দ্বিচারিতা এবং ঈমানের দুর্বলতার মূল কারণ হলো— মুসলিম নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অভাব। ইসলাম আল্লাহর বন্দেগির ধর্ম, আর এই বন্দেগি প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানের ওপর। অজ্ঞতার সঙ্গে প্রকৃত আনুগত্য ও ইবাদত সম্ভব নয়।

আমরা সাধারণত পুরুষদের শিক্ষার আহ্বান জানাই, তাদের শিক্ষার জন্য প্রমাণ হাজির করি। অথচ যেসব প্রমাণ পুরুষদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে আনা হয়, হুবহু সেই প্রমাণই নারীর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পক্ষেও খাটে। শিক্ষা মানুষকে তার সীমাবদ্ধতার গণ্ডি থেকে মুক্ত করে, তাকে আল্লাহপ্রদত্ত সামর্থ্য ও যোগ্যতাগুলো কাজে লাগাতে শেখায়। নারীদেরও আল্লাহ সেই একই যোগ্যতা ও ক্ষমতা দিয়েছেন, যা পুরুষদেরকে দিয়েছেন। এর স্পষ্ট অর্থ হলো, নারীরাও তাদের সেই ঈশ্বরপ্রদত্ত শক্তি ও সামর্থ্যকে কাজে লাগাবে, জ্ঞান ও ঈমানের উচ্চতর স্তরে আরোহণ করবে।

কুরআন নারী-পুরুষের শিক্ষার মধ্যে কোনো প্রকার বিভেদ করেনি। রাসূলুল্লাহ ﷺ নারীদের শিক্ষার প্রতি প্রবল উৎসাহ দিয়েছেন, এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন। এরই ফল হলো, সাহাবিয়াত থেকে শুরু করে পরবর্তী শতাব্দীগুলো পর্যন্ত অসংখ্য নারী আলেমা আবির্ভূত হয়েছেন। তারা হাদিস, তাফসির, ফিকহসহ প্রতিটি জ্ঞানক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।

সাহাবিয়াত, তাবিয়াত এবং পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে বহু নারী ছিলেন, যারা হাদিস ও ফিকহে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে ফতোয়াও দিতেন। মানুষ তাদের কাছে হাদিস ও ফিকহ শিক্ষা গ্রহণ করত। কিছু নারী তাদের নিজস্ব হিফজ থেকে হাদিস পাঠ করাতেন। অনেক হাদিস এমন আছে, যা কেবল নারীদের বর্ণনার মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলি— প্রতিটি মাযহাবেই এমন বহু ফিকহি মাসআলা আছে, যা একান্তভাবে নারীদের বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল।

ইমাম আবু আবদুল্লাহ আল-হাকিম আন-নিশাপুরী বলেছেন— ইসলামের অন্তত এক-চতুর্থাংশ বিধান নারীদের বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। দুনিয়ার আর কোনো ধর্ম নেই, যার প্রাথমিক গঠনপর্বে নারীরা এত বিশাল জ্ঞানচর্চার ভূমিকা রেখেছে।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ করা দরকার: পুরুষদের মধ্যে শত শত এমন লোক আছেন, যারা হাদিস জাল করেছেন, মিথ্যা রচনা করেছেন। অথচ ইমাম যাহাবীসহ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও রিজালবিদদের বক্তব্য হলো, নারীদের মধ্যে একজনও নেই, যার বিরুদ্ধে হাদিসে মিথ্যা বলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এতে সন্দেহ নেই যে সাধারণভাবে নারীরা কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হাদিস পাঠ ও শিক্ষা দিতেন। হাদিসচর্চায় তাদের আত্মনিবেদন ছিল অনন্য, তারা বিস্ময়কর উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, ফাতিমা বিনতে আল-মুনজা আত-তানুখিয়া (মৃত্যু: ৭১৪ হিজরি) দামেস্কের মসজিদ ও মাদরাসাগুলোতে সহিহ বুখারি ও অন্যান্য হাদিসগ্রন্থ পড়াতেন। পরে মিসরের আমিরদের আমন্ত্রণে সেখানে যান, এবং রাজপ্রাসাদ, মসজিদ ও মাদরাসায় হাদিসের পাঠদান শুরু করেন। এমনকি যেদিন তিনি ইন্তিকাল করেন, সেদিনও তিনি সহিহ বুখারির দারসে ব্যস্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তাঁর হাতে লেখা সহিহ বুখারির নুসখা এখনো তুরস্কের একটি লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে।

সহিহ বুখারির সঙ্গে নারীদের সম্পর্কের একটি অনন্য উদাহরণ হলো— এখন পর্যন্ত সহিহ বুখারির সবচেয়ে নির্ভুল নুসখা এক নারীর। সেটি হলো নুসখা ইউনিনিয়া, যার প্রকাশনার ব্যবস্থা করেছিলেন সুলতান আবদুল হামিদ দ্বিতীয়, এবং যা “নুসখা সুলতানিয়া” নামে পরিচিতি লাভ করে। এই নুসখাটি রচনা করেছিলেন হাফিজা কারিমা মারওজিয়া (মৃত্যু: ৪৬৪ হিজরি), যাঁর কাছ থেকে হাফিজ আবু বকর খতিব বাগদাদি, হাফিজ সামআনি প্রমুখ বুখারি অধ্যয়ন করেছিলেন। এই নুসখা বর্তমানে শায়খ জুহায়র নাসেরের তাহকিকসহ প্রকাশিত হয়ে প্রচলিত আছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *