শিরোনাম : তুমিই সকল প্রমাণের প্রমাণ।
————-
بسم الله الرحمن الرحيم.
হে আল্লাহ, তোমারই শোকর যে আমরা তোমাকে চিনেছি, তোমারই অনুগ্রহ যে আমরা তোমাকে জেনেছি। আমরা তোমাকে কীভাবে জানলাম? আমরা তোমাকে কীভাবে চিনলাম? তোমার ইচ্ছা হল তাই আমরা জানলাম, তোমারই ফয়সলা হল তাই আমরা চিনলাম। যদি তুমি না চাইতে, আমরা কখনোই তোমাকে জানতে বা চিনতে পারতাম না। তোমার পরিচয়ের জন্য আমাদের কাছে কোনো স্বাধীন প্রমাণ কি আছে? না, কিছুই নেই। তুমিই আমাদের প্রমাণ, আর কিছু নয়। সমস্ত প্রমাণ কেবল ওই এক প্রমাণেরই বর্ণনা, সমস্ত যুক্তি কেবল ওই এক মূল পাঠেরই ব্যাখ্যা।
এ সত্য যে জগত-আলোকিত সূর্য তোমার প্রমাণ, চাঁদ ও তারা তোমার সংবাদ দেয়, রাত-দিনের পরিবর্তন, বসন্ত-শরৎ, গ্রীষ্ম-শীত তোমার রহস্য উন্মোচন করে। আসমান-জমিন ও এর অন্তর্গত সব সৃষ্টিই তোমার নিদর্শন। পাখিরা তোমার গুণগান করে, সমুদ্র তোমার মহিমার সুর গেয়ে ওঠে, পাহাড় তোমার উচ্চতার সাক্ষ্য দেয়, মরুভূমি আর রঙ-বেরঙের ফুলের আড়ালে তুমিই লুকিয়ে আছো। জন্তু-জানোয়ারের সৃজন তোমার কুদরতকে প্রকাশ করে, আর জিন, ফেরেশতা ও মানুষের অস্তিত্ব তোমার অসীম জ্ঞানের রহস্যের সাক্ষ্য দেয়।
নিশ্চয়ই এ সব সত্য। তেমনিভাবে এ-ও সত্য যে, তুমিই এসবকে নিদর্শন বানিয়েছো, আয়াতগুলোকে আয়াত বানিয়েছো, কুদরত ও জ্ঞানের প্রকাশকে নিজের সাক্ষ্য বানিয়েছো। সুতরাং তুমিই প্রমাণ, তুমিই প্রমাণের প্রমাণ।
কত অন্ধ তারা, যারা সূর্যকে দেখল কিন্তু সূর্যের স্রষ্টাকে দেখতে পেল না! কত মূর্খ তারা, যারা আসমান-জমিন, সাগর-পর্বত, পাথর-গাছপালা, পশু-পাখি, এমনকি মানুষকেও স্বীকার করল, অথচ তাদের স্রষ্টা ও মালিককে অস্বীকার করল! নিশ্চিতই তারা নির্বোধ, যারা নিয়ামতকে দেখল কিন্তু নিয়ামতদাতাকে চিনল না। লানত তাদের অপবিত্র প্রাণের ওপর, হায় আফসোস তাদের মলিন বুদ্ধির ওপর! আফসোস শয়তানি নফস ও বিভ্রান্ত হৃদয়ের প্রতারণার ওপর!
কী দুর্ভাগা সে বিজ্ঞানী, যে এক গাছের নিচে ধ্যান করল, আর যখন আপেল পড়তে দেখল তখন কেবল আকর্ষণ-শক্তির তত্ত্ব আবিষ্কার করল। কিন্তু সে দেখল না—যার ফল মাটিতে পড়ে, তার ডালপালাই আকাশের দিকে উঁচু হয়! যার শিকড় মাটিতে গাঁথা, তার মাথা উচ্চতার দিকে ঝুঁকে থাকে! হায়, সে এক প্রশ্নের উত্তর পেল, অথচ অগণিত প্রশ্ন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল! যদি সে ভাবত—আপেল কে বানাল আর কেন বানাল? গাছ কে জন্মাল আর কেন জন্মাল? জমিনে টান কে দিল আর কেন দিল?
হায়, ক্যামব্রিজের সে অর্ধ-বুদ্ধিমান, যদি সে খলিলের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত! আজরের ছেলে যখন তারকা, চাঁদ ও সূর্যকে অস্ত যেতে দেখল, তখন কোনো ভৌত তত্ত্বের খোঁজে নামেনি; বরং সর্বোচ্চ সত্য আবিষ্কার করল। সেই মহাপুরুষ পৌঁছে গেলেন রব্বুল-আলামীনের কাছে। তিনি সগর্বে ঘোষণা দিলেন: “আমি অস্তমিত জিনিসকে ভালোবাসি না।” তিনি বিনয়ী হলেন, আর প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন: “আমি আমার মুখ ফিরিয়ে দিলাম তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, একনিষ্ঠ হয়ে।” রহমত বর্ষিত হোক ইবরাহিমের ওপর এবং তাঁর সন্তানদের ওপর, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক ওই পূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন আদমের সন্তান এবং মিল্লাতে হানিফিয়ার প্রতিষ্ঠাতার ওপর।
কী ভীষণ অন্ধ ছিলেন সেই তথাকথিত তৃতীয় শিক্ষক!
তিনি ছিলেন প্রতারণার শিকার, বিভ্রান্তির লালিত সন্তান।
আল-কানুন ও আশ-শিফার লেখকের জ্ঞান আসলে কত অন্ধকারের পর্দায় আচ্ছন্ন ছিল!
তিনি এক “ওয়াজিবুল উজুদ” আবিষ্কার করলেন, আর হে পরম পবিত্র আল্লাহ, সেই অর্থহীন নামে তোমার ওপরই আরোপ করল মিথ্যা! অজ্ঞ লোকেরা সেই নামের ভার তোমার উপর চাপিয়ে দিল।
হে বুখারার সন্তান! হে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের জাদুকর! হে মায়াজালের কারিগর ও বিভ্রমে মোহাবিষ্ট বুদ্ধিজীবী!
তুমি যে সত্তাকে “অস্তিত্ব” ও “বিদ্যমান” বলেছ, তিনি-ই তো আসলে অস্তিত্ব ও বিদ্যমান সব কিছুর স্রষ্টা।
তুমি একত্ব ও সমদ্বয়ের অধিপতিকে চিনতে পারোনি।
তুমি এমন এক পরিভাষা বানালে, যা বিভ্রান্তির শেকড় আর ভ্রষ্টতার আসল উৎস।
অভিশাপ তোমার ওপর এবং তোমার বানানো ওই ভ্রান্ত পরিভাষার ওপর!
হে ফুসূস ও ফাতুহাত এর লেখক! তোমার প্রতিটি রচনা অজ্ঞদের গল্প ছাড়া কিছু নয়। হে সেই ব্যক্তি, যার কলমে কোনো রহস্য উন্মোচিত হয়নি! তুমি স্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা দিলে আর সেগুলোকে জটিল ধাঁধায় পরিণত করলে! তুমি বললে, খালিক ও মাখলুক একই, মাবুদ ও বান্দার মধ্যে কোনো ফারাক নেই। তুমি কি আদৌ জানো—খালিক কাকে বলে?
তুমি জানোনি, আর কোনোদিনই জানতে পারবে না “কুন ফায়াকুন”–এর রহস্য।
তুমি কি বুঝেছো—যখন কিছুই ছিল না, তখন কেবল আল্লাহ ছিলেন। তিনিই আদি, তিনিই অন্ত। তিনি শুধু নিজের ইচ্ছায় শূন্য থেকে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। মাখলুক তাঁর থেকে আলাদা। মাখলুক বিলুপ্তির চিহ্ন। আর আর্শে-আজীমের মালিকের নেই কোনো সাদৃশ্য, নেই কোনো সমকক্ষ।
দর্শন ও তাসাউফ কী?