AkramNadwi

শিরোনাম : কিশোর বয়সে ঋতুস্রাব শুরু! ———-

শিরোনাম : কিশোর বয়সে ঋতুস্রাব শুরু!
———-

|| প্রশ্ন:

একজন নেককার শিক্ষিকা ও দাঈয়া জিজ্ঞাসা করেছেন:

আসসালামু আলাইকুম।
এক বোনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন এসেছে যে, বর্তমানে নানা কারণে মেয়েদের অল্প বয়সেই ঋতুস্রাব শুরু হচ্ছে। আগে মেয়েরা ১৪ বা ১৫ বছরে বালেগ হতো, এখন অনেক সময় ৮ বা ৯ বছরেই তা হয়ে যায়। এত ছোট মেয়েরা শরিয়তের বিধান কতটা মানতে বাধ্য হবে—বিশেষ করে পর্দা ও রোজার ক্ষেত্রে, স্পষ্ট করে বলবেন কি? কেননা তারা বাহ্যত বালেগ হলেও মানসিক পরিপক্বতা এখনও অর্জন করেনি।

সম্মানিত উস্তাদ, আশা করি, অনুগ্রহ করে এর পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রদান করবেন।

|| উত্তর:

ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

এ বিষয়ে মূলনীতি হলো—শরিয়তে তাকলিফ (অর্থাৎ শরীয়তের দায়িত্ব বহন করা) বালেগ হওয়ার সঙ্গে যুক্ত, বয়স বা মানসিক পরিপক্বতার সঙ্গে নয়।

মেয়েদের ক্ষেত্রে বালেগ হওয়ার প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হলো ঋতুস্রাব শুরু হওয়া। কোনো মেয়ের যদি ঋতুস্রাব শুরু হয়, তবে সে শরিয়তের দৃষ্টিতে বালেগ ও দায়িত্বশীল গণ্য হবে, তা সে নয় বা দশ বছর বয়সেই হোক। আর যদি ঋতুস্রাব না আসে, তবে হিজরী ১৫ বছর বয়সকে বালেগ হওয়ার সীমা ধরা হয়েছে।

চার মাজহাবের ফকিহরা এ বিষয়ে একমত।

ফিকহে হানাফি: ইমাম কাসানী রহ. বলেন—
“নারীদের বালেগ হওয়ার নিদর্শন হলো ঋতুস্রাব ও গর্ভধারণ। সর্বনিম্ন বয়স হলো ৯ বছর। তাই নয় বছর বয়সে ঋতুস্রাব হলে সে বালেগ বলে গণ্য হবে।”
(বদায়েউস সানায়ি, ৭/১৫৫)

ফিকহে শাফেয়ি: ইমাম নওয়াবী রহ. বলেন—
“মেয়ে যদি ৯ হিজরী বছর পূর্ণ হওয়ার পর ঋতুস্রাব পায় তবে সে বালেগ হয়েছে এবং শরীয়তের বিধান পালন করতে বাধ্য।”
(আল-মাজমূ শারহুল মহাযযাব, ৩/১৪৮)

ফিকহে মালিকি: ইমাম দেসূকী রহ. বলেন—
“মেয়েদের বালেগ হওয়ার লক্ষণ হলো ৯ বছর পর ঋতুস্রাব, অথবা গর্ভধারণ, অথবা বয়স ১৫ হিজরী বছর পূর্ণ হওয়া।”
(হাশিয়াতুদ দেসূকী, ১/১১৮)

ফিকহে হানবলি: ইমাম ইবন কুদামাহ রহ. বলেন—
“মেয়ে ঋতুস্রাব, গর্ভধারণ, লোম গজানো বা বয়স ১৫ পূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে বালেগ হয়। আর নারীর সর্বনিম্ন ঋতুস্রাবের বয়স হলো ৯ বছর।”
(আল-মুগনী, ৯/৩২০)

এ দলিলগুলো থেকে প্রমাণিত হলো:
চার মাজহাবের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, মেয়ে নয় বছর বয়সে ঋতুস্রাব পেলে সে বালেগ এবং শরীয়তের সব দায়িত্ব তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যাবে।

অতএব—

: তার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ, রমজানের রোজা ওয়াজিব, পর্দা করা জরুরি।
এবং অন্যান্য শরীয়তের বিধানগুলোও তার জন্য প্রযোজ্য হবে, যেমনটা প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য হয়।

তবে যদি এত অল্প বয়সে রোজা রাখায় তার শরীর ভেঙে পড়ে বা স্বাস্থ্যহানি হয়, তাহলে শরীয়ত তাকে ছাড় দিয়েছে। সে তখন রোজা না রেখে পরে কাজা করবে। কিন্তু রোজার ফরজিয়ত তার ওপর থেকে উঠে যাবে না।

গুরুত্বপূর্ণ দিক :

শরীয়তে তাকলিফ মানসিক পরিপক্বতার সঙ্গে নয়, বরং বালেগ হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ মেয়ে বালেগ হলেই সে শরীয়তের বিধান পালনে বাধ্য হবে।

কিন্তু এর সঙ্গে অভিভাবক ও পরিবার-পরিজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। তা হলো—বালেগ হওয়ার আগেই মেয়েদেরকে ভালোবাসা, কোমলতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে শরীয়তের দিকে আকৃষ্ট করা। যাতে তারা শরীয়তকে বোঝা মনে না করে, বরং আনন্দের সঙ্গে নামাজ, রোজা, পর্দা ইত্যাদি পালন করে।

মেয়েদের হঠাৎ সব দায়িত্বে বাধ্য করা উচিত নয়। যেমন—সাত বছর বয়স থেকে নামাজের অভ্যাস করানো হয়, তেমনি ধীরে ধীরে শালীন পোশাক, লজ্জাশীলতা, এবং পরবর্তীতে পর্দার নিয়ম শেখানো উচিত।

ছোট বয়সে শুধু পোশাকে সরলতা ও লজ্জাশীলতায় গুরুত্ব দেওয়া ভালো, তারপর ধাপে ধাপে হিজাবের গুরুত্ব বোঝানো উচিত।

ভুল করলে বা গাফিল হলে কঠোরতা নয়, বরং নরম ব্যবহার করতে হবে। কঠোরতা সাধারণত উল্টো ফল দেয় এবং সন্তান দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে।

মায়েরা, বড় বোনেরা বা নিকট আত্মীয় নারীরা যদি নিজেরাই সুন্দরভাবে পর্দা মেনে চলেন, তবে মেয়েদের জন্য তা হবে সবচেয়ে কার্যকর শিক্ষা। কারণ শিশু কথার চেয়ে কাজ দেখে বেশি শেখে।

মেয়ে যখন ভালো কিছু করবে—যেমন নামাজ পড়া, হিজাব মানা—তখন তাকে প্রশংসা করতে হবে, দোয়া করতে হবে এবং অনুভব করাতে হবে যে সে আল্লাহর কাছে খুব প্রিয় হচ্ছে।

আবার যদি সে একসময় হিজাব না মানতে চায়, গাফিল হয় বা অবাধ্য হয়, তবে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরতে হবে এবং বারবার বোঝাতে হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজেই ধীরে ধীরে পরিণত হবে।

মেয়েকে বোঝাতে হবে যে হিজাব শুধু একটি বিধান নয়, বরং তার মর্যাদা, সম্মান ও পরিচয়ের প্রতীক। এটি তাকে সুরক্ষা দেয়, কোনো বাধা নয়।

উপসংহার

দ্বীনি শিক্ষাদান একটি দীর্ঘ ও ধৈর্যসাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তাড়াহুড়া, বকাঝকা বা কঠোরতা নয়, বরং ভালোবাসা, দোয়া ও ধারাবাহিক সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে শিশুদের হৃদয়ে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা যায়।

والله أعلم بالصواب
———-

ক্যাটাগরি : ফাতাওয়া, ফিকাহ,

✍️ মূল : ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভী, অক্সফোর্ড
✍️ অনুবাদ, যাচাই ও সম্পাদনা: মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *