AkramNadwi

শিরোনাম : ওয়ালিমা করার জন্য শরিয়তে কি কোনো নির্দিষ

শিরোনাম : ওয়ালিমা করার জন্য শরিয়তে কি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত আছে ?
——————–

প্রশ্ন:
আমাদের এক সম্মানিত, সবার প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন আলেমে দ্বীন, দাঈ ও সাহিত্যিক জিজ্ঞাসা করেছেন—”নিকাহের তিন-চার দিন পরে প্রয়োজনে ওয়ালিমা করা যাবে কি?”

উত্তর:
ওয়ালিমা অর্থাৎ বিয়ের উপলক্ষে খাবারের দাওয়াত দেওয়া সুন্নাত। এটি আনন্দ প্রকাশ এবং আল্লাহর নিয়ামতের শোকর আদায়ের একটি মাধ্যম, যা ইসলাম মুস্তাহাব ও গ্রহণযোগ্য আমল হিসেবে নির্ধারণ করেছে। অধিকাংশ ফকীহ ও মুহাদ্দিস ওয়ালিমার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট দিন বা সময়কে চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করেননি। বরং এর সময়সীমা ও আয়োজন সাধারণত মানুষের সুবিধা, রীতি-নীতি ও পরিস্থিতি অনুযায়ী হয়ে থাকে।

ইমাম বুখারী (রহ.) সহীহ বুখারীতে “হক ইজাবাতুল ওয়ালিমা ওয়াদ দাওয়া” অধ্যায়ের অধীনে উল্লেখ করেছেন—রাসূলুল্লাহ ﷺ ওয়ালিমার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিন ঠিক করেননি। মানুষ সাত দিন বা আশেপাশের সময়ে ওয়ালিমা করতে পারে এবং এতে কোনো অসুবিধা নেই। এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে ওয়ালিমার সময় নির্ধারণ করা জরুরি নয়; বরং যখন মানুষ উপযুক্ত মনে করবে তখনই ওয়ালিমা করা যেতে পারে। ইমাম বুখারীর বক্তব্য—
“باب حق إجابة الوليمة والدعوة، ومن أولم سبعة أيام ونحوه، ولم يوقّت النبي صلى الله عليه وسلم يوماً ولا يومين”।

হাফিজ ইবন হজর আসকালানী (রহ.) এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলেন যে, ওয়ালিমার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়নি এবং এটিকে নিজস্বভাবে ওয়াজিব বা মুস্তাহাবও করা হয়নি; বরং এটি সহজতা ও রহমতের একটি মাধ্যম, যেখানে কোনো রকম কঠোরতা নেই। তাঁর ভাষায়—
“أي لم يجعل للوليمة وقتاً معيناً يختص به الإيجاب أو الاستحباب، وأُخذ ذلك من الإطلاق”।

একইভাবে আল্লামা দামেরী (রহ.) তাঁর আন-নাজমুল ওহাজ গ্রন্থে লিখেছেন—ফকীহগণ ওয়ালিমার সময় নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি। তবে সাধারণত এটি নিকাহের পরে করা হয়। ইমাম সুবকী (রহ.) স্পষ্ট করেছেন যে, ওয়ালিমা নিকাহের আগে বা পরে—দুই সময়েই করা যায়, এবং এর সময়সীমা ব্যাপক। যেমন ইমাম বাগাভী (রহ.)-ও এ কথার সমর্থন করেছেন। আল্লামা দামেরীর ভাষায়—
“لم يتعرض الفقهاء لوقت وليمة العرس، والصواب أنها بعد الدخول، قال الشيخ (أي السبكي): وهي جائز قبلَه وبعدَه، ووقتُها موسع من حين العقد كما صرّح به البغوي” (আন-নাজমুল ওহাজ ৭/৩৯৩)।

এসব বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, ওয়ালিমার জন্য শরিয়তে কোনো শর্ত বা নির্দিষ্ট দিন বেঁধে দেওয়া হয়নি যে এটি নিকাহের সাথে সাথেই করতে হবে বা নির্দিষ্ট দিনে করতে হবে। বরং সামাজিক, ব্যক্তিগত অবস্থা ও সুবিধা অনুযায়ী ওয়ালিমার সময় নির্ধারণ করা যাবে এবং এটি পুরোপুরি জায়েয ও গ্রহণযোগ্য।

অতএব, যদি কেউ বা কোনো পরিবার নিকাহের তিন-চার দিন পরে প্রয়োজন বা অন্য কোনো কারণে ওয়ালিমা করতে চায়, তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনো বাধা বা শর্ত নেই। বরং এটি জায়েয এবং মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য হবে। কখনো সামাজিক বা আর্থিক কারণে ওয়ালিমা কিছুটা দেরিতে করাও হয়, যা ইসলামের রহমত, সহজতা ও সরলতার মূলনীতির সম্পূর্ণ সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

——————–

ক্যাটাগরি : ফাতওয়া, ফেকাহ,

✍ মূল: ড. মোহাম্মাদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।
—-
যে আর্টিকেল থেকে অনূদিত, তার লিংক👇

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *