AkramNadwi

শিরোনাম : ইজি পে (Ezeepay)-এ চাকরি। ————-

শিরোনাম : ইজি পে (Ezeepay)-এ চাকরি।
——————–

||প্রশ্ন:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ,
ইজি পে (Ezeepay) একটি ফিনটেক কোম্পানি, যা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর প্রধান কার্যালয় ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত। এই কোম্পানি গ্রামীণ ও শহুরে এলাকার ছোট দোকানদার ও ভোক্তাদের ডিজিটাল সুবিধা প্রদান করে, যাতে তারা সহজে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে।

এর মূল সেবাগুলোর মধ্যে আছে—মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধ, মানি ট্রান্সফার, আধার-সক্ষম পেমেন্ট সিস্টেম (AEPS), মাইক্রো এটিএম-এর মাধ্যমে নগদ উত্তোলন বা জমা, বীমা, ভ্রমণ টিকিট, এবং ডিজিটাল ওয়ালেট।

কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেল হলো: তারা খুচরা বিক্রেতাদের (রিটেইলার) এসব সেবা প্রদান করে, আর রিটেইলাররা গ্রাহকের কাছ থেকে এ সেবার বিনিময়ে সামান্য কমিশন নেয়। কোম্পানিও এ লেনদেন থেকে একটি অংশ লাভ করে। বর্তমানে ভারতের নানা অঞ্চলে কোম্পানির হাজার হাজার রিটেইলার ও ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে এবং প্রধান কার্যালয় ও শাখাগুলোতে ডজনখানেক কর্মচারী কাজ করছেন। ইজি পে-র উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ ডিজিটাল আর্থিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।

প্রশ্ন হচ্ছে—এই কোম্পানিতে আমাকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?
— শফী আনোয়ার, বিহার।

|| উত্তর:

ইজি পে (Ezeepay)-এর মতো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার বিষয়ে শরিয়তের নির্দেশনা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ব্যাপার, কারণ এর সঙ্গে মুসলমানের অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা ও সততা সরাসরি জড়িত।

প্রথমত, মনে রাখা দরকার—অমুসলিম দেশে সম্পূর্ণভাবে হালাল, পবিত্র ও শতভাগ মুবাহ আয়ের সুযোগ সবসময় সীমিত থাকে। ফলে মুসলমানরা প্রায়ই তীব্র প্রয়োজন ও অনিবার্যতার কারণে বিভিন্ন অর্থনৈতিক উপায় অবলম্বন করে থাকে। ফকিহগণ বলেছেন, আর্থিক প্রয়োজনে “হাজত” (প্রয়োজন) প্রায়ই “জরুরাত” (অত্যাবশ্যকতা)-এর মর্যাদা পায়। আর যখন কোনো প্রয়োজন বা অনিবার্যতা প্রবল হয়ে ওঠে, তখন “الضرورات تبيح المحظورات” (দরকারের তাগিদ নিষিদ্ধকে অনুমোদন করে)—এই নীতির আওতায় কিছু ক্ষেত্রে এমন কাজেরও অনুমতি দেওয়া যায়, যা মূলত মাকরূহ বা নিষিদ্ধের কাছাকাছি, শর্ত হচ্ছে সেখানে সরাসরি হারাম কাজ জড়িত না থাকে।

ইজি পে-র কার্যক্রম যেভাবে বর্ণিত হলো, এর ভিত্তি হলো ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রদান—যেমন: মোবাইল রিচার্জ, বিল পরিশোধ, মানি ট্রান্সফার, AEPS-এর মাধ্যমে লেনদেন, মাইক্রো এটিএম থেকে নগদ আদান-প্রদান, বীমা, ভ্রমণ টিকিট ইত্যাদি। এ সেবাগুলোর বেশিরভাগই মূলত মুবাহ (অনুমোদিত) ও জায়েজ। তবে যদি কোম্পানির কোনো অংশ সরাসরি সুদভিত্তিক লেনদেনের ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে তাতে অংশ নেওয়া বা সহায়তা করা নিষিদ্ধ হবে। কিন্তু যদি আপনার কাজ ওই ধরনের সুদভিত্তিক লেনদেনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকে এবং শুধুমাত্র সাধারণ প্রশাসনিক, কারিগরি বা সেবা-সংশ্লিষ্ট কাজে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এর মৌলিক বিধান হবে জায়েজ।

শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের অভিমতের ভিত্তিতে যেমন তাঁরা অমুসলিম দেশের ব্যাংকে চাকরি করার অনুমতি দিয়েছেন (হাজত ও প্রয়োজনের কারণে), তেমনি এখানেও যদি আপনার দায়িত্ব সরাসরি হারাম লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়, এবং আপনি এর মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন, তবে এতে কোনো দোষ নেই। বরং এটি ইন-শা-আল্লাহ হালাল উপার্জন হিসেবে গণ্য হবে।

তবে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক:

নামাজের যথাযথ আদায়ে অটল থাকবেন।

হারাম আয় থেকে বাঁচার দৃঢ় নিয়ত রাখবেন।

সন্তানদের দীনী শিক্ষায় মনোযোগ দেবেন।

আর যতটা সম্ভব আয়ের সন্দেহজনক অংশ সদকা-খয়রাতে ব্যয় করে আয়কে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
“إن الحسنات يذهبن السيئات”
“নিশ্চয়ই সৎকর্মগুলো মন্দ কাজ মুছে দেয়।”

——————–

ক্যাটাগরি : ফাতাওয়া, ফিকহ।
—-
✍️ মূল রচনা: ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভী, অক্সফোর্ড
✍️ অনুবাদ, যাচাই ও সম্পাদনা: মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ
—-
🔗 অনূদিত মূল প্রবন্ধের লিংক: 👇
https://t.me/DrAkramNadwi/6828

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *