AkramNadwi

শিরোনাম : আদম (আ.)-এর হাঁচির হাদিস। ————–

শিরোনাম : আদম (আ.)-এর হাঁচির হাদিস।
——————–

|| প্রশ্ন:
আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, আবুধাবি ক্যাম্পাসের অধ্যাপিকা ড. জিনান ইউসুফ জিজ্ঞেস করেছেন—আদম (আ.)-এর হাঁচি সম্পর্কিত হাদিসটি কতটা সহিহ?

|| উত্তর:
আমি বলেছি: এ হাদিসটি তিরমিজি তাঁর সুনান গ্রন্থের তাফসির অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন:

আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবনে বাশশার → বর্ণনা করেছেন সাফওয়ান ইবনে ঈসা → বর্ণনা করেছেন হারিস ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবি জু‘দাব → তিনি সাঈদ ইবনে আবি সাঈদ আল-মাকবুরি থেকে → তিনি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে → তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“যখন আল্লাহ তাআলা আদমকে সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর মধ্যে রূহ প্রবাহিত করলেন, তখন তিনি হাঁচি দিলেন এবং বললেন: ‘আলহামদুলিল্লাহ’। তিনি আল্লাহর অনুমতিতেই তাঁর প্রশংসা করলেন। তখন তাঁর প্রতিপালক বললেন: “ইয়ারহামুকাল্লাহ” (আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন),
হে আদম। যাও, ওই ফেরেশতাদের একটি দলের কাছে গিয়ে বল: আসসালামু আলাইকুম।’ তিনি গেলেন এবং বললেন: আসসালামু আলাইকুম। তারা জবাব দিল: ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।”

এ হাদিসের মূল অংশ সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে রয়েছে—যেখানে আব্দুর রাজ্জাক → মা‘মার → হাম্মাম → আবু হুরায়রা (রা.) → নবী ﷺ সূত্রে এসেছে। সেখানে এভাবে এসেছে:

“এরপর আল্লাহ বললেন: ওই ফেরেশতাদের কাছে যাও এবং সালাম দাও। তারা তোমাকে কীভাবে জবাব দেয়, তা শোনো। তোমার সালামই হবে তোমার সন্তানদের সালাম। তখন আদম গেলেন এবং বললেন: আসসালামু আলাইকুম। তারা জবাব দিল: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। অর্থাৎ তারা বাড়িয়ে দিল: ওয়া রহমাতুল্লাহ।”

তবে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আদম (আ.)-এর হাঁচির উল্লেখ নেই।

মুহাদ্দিসদের মন্তব্য:
মূল ভিত্তি হলো সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমের বর্ণনা। আর হাঁচির সংযোজনটি নিয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। তিরমিজি তাঁর উল্লেখিত স্থানে হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেছেন: “এটি হাসান গরীব হাদিস।” তিনি আরও বলেন, এটি একাধিক সূত্রেও আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে—যেমন যায়েদ ইবনে আসলাম → আবু সালিহ → আবু হুরায়রা → নবী ﷺ।

আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ বলেন: আমি আমার পিতার (ইমাম আহমদ) কিতাবে পেয়েছি: সাফওয়ান ইবনে ঈসাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আপনাকে কে এ হাদিস শুনিয়েছে? তিনি বললেন: হারিস ইবনে আবদুর রহমান → সাঈদ মাকবুরি → আবু হুরায়রা → নবী ﷺ। আর আমার পিতা (ইমাম আহমদ) বলেন: এ বর্ণনায় লায়স ইবনে সাঈদ ইবনে আজলানকে ভিন্নভাবে বর্ণনা করতে দেখা যায়; তিনি বলেছেন: সাঈদ → আবদুল্লাহ ইবনে সালাম। (আল-‘ইলাল, আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ, হাদিস নং ৫৬৩২, ৫৬৩৩)।

এছাড়া আল-‘ইলাল লিদ-দারাকুতনি (মসলা নং ১৪৬৭)-তে এসেছে: মাকবুরি → আবু হুরায়রা → নবী ﷺ সূত্রে এ হাদিস বর্ণিত হয়েছে—“যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন, তিনি হাঁচি দিলেন…” এবং শেষে এসেছে: আদম (আ.) তাঁর আয়ুর একটি অংশ অস্বীকার করেন।

দারাকুতনি বলেন: এ হাদিস হারিস ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবি জু‘দাব এবং ইসমাঈল ইবনে রাফি মাকবুরি থেকে আবু হুরায়রা পর্যন্ত মারফু’ বর্ণনা করেছেন। আবার আবু মাশর এটিকে মাওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি হারিস ইবনে আবদুর রহমানের সূত্রেও মতভেদ রয়েছে। কেউ বর্ণনা করেছেন—সাফওয়ান ইবনে ঈসা → হারিস → সাঈদ মাকবুরি → আবু হুরায়রা। অন্যদিকে আবু দামরা আনাস ইবনে ইয়াদ বর্ণনা করেছেন—হারিস → ইয়াজিদ ইবনে হুরমুয → আবু হুরায়রা।

সম্ভবত দু’জনেই আংশিকভাবে সঠিক, কারণ আবু খালিদ আল-আহমার এভাবে বর্ণনা করেছেন: হারিস → মাকবুরি ও ইয়াজিদ ইবনে হুরমুয—দুই সূত্র একত্র করে।

সারকথা:
এই হাদিসে হাঁচির অংশটি বর্ণনায় ভিন্নতা আছে—কোথাও মারফু’, কোথাও মাওকুফ; এমনকি সাহাবির নাম নিয়েও মতভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও সংরক্ষিত বর্ণনা হলো, যা সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে এসেছে—আর সেখানে হাঁচির উল্লেখ নেই।

——————–

ক্যাটাগরি : হাদিস,
—-
✍️ মূল রচনা: ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভী, অক্সফোর্ড
✍️ অনুবাদ, যাচাই ও সম্পাদনা: মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ
—-
🔗 অনূদিত মূল প্রবন্ধের লিংক: 👇
https://t.me/DrAkramNadwi/6844

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *