AkramNadwi

রেকর্ডকৃত ধ্বনিতে আজান ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/5912

بسم الله الرحمن الرحيم

—–

|| প্রশ্ন:

আমাদের সম্মানিত ছাত্র এবং রামপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাওলানা মুহাম্মাদ মাসউদ নাদভী সাহেব (مدّ ظلّه) নিম্নলিখিত প্রশ্ন করেছেন:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
মাওলানা! জিজ্ঞাসার উদ্দেশ্য হলো, প্রতিটি নামাজের জন্য যে আজান দেওয়া হয়, তার ধ্বনি এমন (সবগুলোর কথা বলছি না, তবে অধিকাংশের) হয় যা হৃদয়গ্রাহী ও মনোমুগ্ধকর নয়।
যদি কোনো সুন্দর কণ্ঠস্বরসম্পন্ন ব্যক্তির দ্বারা আজান দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে রেকর্ড করা আজানের মাধ্যমে আজান দেওয়া যাবে কি না?

|| উত্তর:

আপনার প্রশ্ন পেয়ে আনন্দিত হয়েছি। উপমহাদেশের বেশিরভাগ মসজিদে আজান ও ইকামাতের উচ্চারণ ভুল হয় এবং তাতে বহু বিষয় রয়েছে যা সুন্নতের পরিপন্থী। তবে সেসব ব্যাখ্যা করার এখন সময় না।
আপনার এই ভাবনাটি প্রশংসনীয় যে, আজানের ধ্বনি মধুর হওয়া উচিত। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আজানের শব্দগুলোর উচ্চারণ শুদ্ধ হওয়া, মাখরাজ ঠিক রাখা, হরফগুলোর মৌলিক গুণাবলি বজায় রাখা, মদের স্থানে যথাযথ টান দেওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় বাড়াবাড়ি পরিহার করা।

আজানের মর্যাদা হলো, এটি একটি আহ্বান। এজন্য খেয়াল রাখতে হবে যে, মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর উচ্চ ও মধুর হয়। সুনানুত তিরমিজি-এর আবওয়াবুল আজান-এর باب ما جاءَ في بدء الأذان- এ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ রা. -এর বর্ণনা রয়েছে:
“যখন আমরা সকালবেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম এবং স্বপ্নের কথা জানালাম, তিনি বললেন: ‘নিশ্চয়ই এটি সত্য স্বপ্ন। তুমি বিলালের সঙ্গে দাঁড়াও, কেননা তার কণ্ঠস্বর তোমার চেয়ে সুস্পষ্ট ও মধুর। তুমি তাকে শেখাও, আর সে যেন তা উচ্চারণ করে।’”
এই হাদিস অন্যান্য সুনান ও মুসনাদ গ্রন্থেও বর্ণিত হয়েছে।

এই বর্ণনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই কারণে হযরত বিলাল রা. -কে মুয়াজ্জিন হিসেবে মনোনীত করেন:
এক— তার কণ্ঠস্বর উচ্চ ছিল।
দুই— তার কণ্ঠস্বর সুমধুর ছিল।

মুয়াজ্জিনের মধ্যে এই দুই গুণ থাকা উচিত—এ বিষয়ে চার ইমামসহ সমস্ত ফকিহ ও মুহাদ্দিসের ঐকমত্য রয়েছে।

মাসনভী-এর একটি কাহিনি মনে পড়ল। একবার কোনো অমুসলিম অঞ্চলে এক মুয়াজ্জিন ছিলেন যার কণ্ঠস্বর কর্কশ ও কঠোর ছিল। এলাকাবাসীরা তাকে সরিয়ে দিতে চাইল। এমন সময় এক কাফের এল এবং মুয়াজ্জিনকে উপহার-সামগ্রী দিল। এরপর বলল:
“আমার মেয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে চেয়েছিল। তার ইসলামের প্রতি এত গভীর ভালোবাসা ছিল যে, আমাদের কোনো জোর-জবরদস্তি কাজে আসেনি। কিন্তু হঠাৎ মুয়াজ্জিনের আজানের আওয়াজ তার কানে এলো, আর সে ইসলাম থেকে বিমুখ হয়ে গেল।”

সে বলল:
“এই কদর্য ধ্বনি কী?
আমার কানে এলো এই অল্প কিছু বাক্য।
আমি জীবনে এমন বিকৃত শব্দ শুনিনি,
না কোনো মন্দিরে, না কোনো উপাসনালয়ে।”

তার বোন বলল:
“এটি আজানের ধ্বনি,
যা মুমিনদের পরিচায়ক ও ঘোষণা।”

সে বিশ্বাস করল না, তাই অন্যদের জিজ্ঞাসা করল।
অন্যরাও একই কথা বলল।

যখন নিশ্চিত হলো, তার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল,
তার অন্তর ইসলাম থেকে শীতল হয়ে গেল।

আমার আশ্চর্য লাগে যে, রামপুরে ভালো মুয়াজ্জিন নেই! আপনি শিশুদের আজান শেখান এবং যাদের কণ্ঠস্বর সুমধুর ও উচ্চ তাদের মসজিদের মুয়াজ্জিন বানান। মুয়াজ্জিন রাখার জন্য বেতন নির্ধারণের প্রয়োজন নেই। এটি একটি দাওয়াতের কাজ, যার প্রতিদান অত্যন্ত মহান। স্বয়ং আজান দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কেও বহু হাদিস রয়েছে।

আমি বুঝতে পারছি না, রেকর্ডকৃত আজানের চিন্তা কীভাবে এল?
মুসলমানরা কি এত অযোগ্য হয়ে গেছে যে, তাদের ধর্মীয় কাজ এখন যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে?
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, আমিন।

তবে মনে রাখবেন, কিছু আলেমের মত হলো যে, রেকর্ডকৃত আজান বৈধ। তাদের ধারণা, আজান ইবাদতে গায়রে মাকসূদা, অর্থাৎ এটি নামাজের সময় জানানোর জন্য হয়। যদি এই কাজ রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে করা হয়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই।

আমি ব্যক্তিগতভাবে এই মতের প্রতি সন্তুষ্ট নই।
তবু যদি কেউ এই পদ্ধতি অবলম্বন করে, আমি তাকে বাধা দেব না।

আপনার জন্য আমার পরামর্শ হলো, যদি কোনো বিষয় মতবিরোধপূর্ণ হয়, তবে কখনো নিজের মতের ওপর জোরাজুরি করবেন না। যেমন আপনি আপনার মতামত অনুসরণ করার অধিকার রাখেন, তেমনই অন্যদেরও তাদের মত অনুসরণের অধিকার রয়েছে।

মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি—একক কোনো মতের ওপর জোর দেওয়ার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
দুঃখের বিষয়, ভারতের একটি বিশেষ গোষ্ঠী তাদের মতামতকে দ্বীন বানিয়ে ফেলেছে। তারা অন্য সব মত প্রত্যাখ্যান করাকে নিজেদের অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে এবং এ বিষয়ে বিতর্ক ও ফতোয়া দেওয়া তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে।
তারা মুসলমানদের খণ্ড-বিখণ্ড করে যে গুরুতর পাপে লিপ্ত হয়েছে, তা দেখে প্রত্যেক ঈমানদারের হৃদয়ে ব্যথা ও কষ্ট আরও বেড়ে যায়।

আল্লাহ আমাদের অবস্থার ওপর রহম করুন।
আমিন।

——————

মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *