https://t.me/DrAkramNadwi/6230
بسم الله الرحمن الرحيم.
——————–
|| প্রশ্ন:
প্রখ্যাত কুরআন গবেষক উস্তাদ নোমান আলী খান আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, সুরা আহযাবে যেসব শ্রেণির নারীদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে—তারা কারা? এবং নবীজি সা. এর স্ত্রীগণের তথা “উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের” ক্রমানুসারে নাম কী ?
|| উত্তর:
আল্লাহ তাআলা সুরা আহযাবে বলেন:
হে নবী! আমি তোমার জন্য হালাল করেছি তোমার স্ত্রীদের, যাদেরকে তুমি তাদের মহর (বিবাহমোহর) প্রদান করেছো, আর যেসব দাসী তোমার মালিকানায় এসেছে, যাদের আল্লাহ তোমার জন্য ধন-সম্পদ হিসেবে দিয়েছেন, এবং তোমার চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন ও খালাতো বোনদের মধ্যে যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে, এবং সেই মুমিন নারীকে—যদি সে নিজেকে নবীর জন্য উৎসর্গ করে, আর নবী যদি তাকে বিবাহ করতে চান—তবে শুধু তোমার জন্য বিশেষভাবে তা হালাল করা হয়েছে, মুমিনদের জন্য নয়। আমরা জানি, তাদের (মুমিনদের) স্ত্রী ও দাসীদের বিষয়ে কী বিধান দিয়েছি, যাতে তোমার ওপর কোনো জটিলতা না থাকে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে সরিয়ে রাখতে পার, আর যাকে ইচ্ছে তোমার কাছে আশ্রয় দিতে পার। আর তুমি যাকে আলাদা ক’রে রেখেছ তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে, তারা দুঃখ পাবে না, আর তুমি তাদের সকলকে যা দাও তাতে তারা সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
— সুরা আহযাব, আয়াত ৫০- ৫১
তারপরই এসেছে:
“তোমার জন্য এরপর আর কোনো নারী হালাল নয়, এবং তুমি তাদের বদলে অন্য স্ত্রী নিতে পারো না—এমনকি যদি তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে—তবে তোমার দাসীদের ব্যতিক্রম। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখেন।”
—সুরা আহযাব, আয়াত ৫২
যখন সুরা নিসার এই আয়াত নাজিল হয়:
“তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে নারী—যাদেরকে তোমরা চাও, তাদের মধ্যে দু’জন, তিনজন, কিংবা চারজন করে বিবাহ কর।”
—সুরা নিসা, আয়াত ৩
তখন নবী সা. সাহাবীদের নির্দেশ দেন, যাঁদের স্ত্রী চারজনের বেশি রয়েছে, তারা যেন তাদের মধ্য থেকে চারজনকে রেখে বাকি সবাইকে তালাক দিয়ে দেয়, যাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকা যায়।
কিন্তু নবী সা. এর ক্ষেত্রে তখন তাঁর স্ত্রী ছিলেন মাত্র চারজন—
১. সওদা রাযি.
২. আয়িশা রাযি.
৩. হাফসা রাযি.
৪. উম্মে সালামা রাযি.
অতএব, তাঁকে কোনো স্ত্রীকে ছাড়তে হয়নি বা বাছাই করতে হয়নি।
এরপর সুরা আহযাবে তাঁর স্ত্রীদের মর্যাদা ও তাঁদের বিশেষতা তুলে ধরা হয়েছে:
“তোমাদের ঘরে যা কিছু আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ হিসেবে তিলাওয়াত করা হয়, তা স্মরণ করো।”
—সুরা আহযাব, আয়াত ৩৪
এতে প্রমাণ হয়—তাঁদের ঘরগুলো ছিল ওহী, শিক্ষা এবং প্রচারের কেন্দ্র। ফলে তাঁরা নবুয়তের দায়িত্ব পালনে অংশীদার ছিলেন।
এই দৃষ্টিভঙ্গিতে নবী সা.-কে চারজনের বেশি স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়, যা শুধু তাঁর জন্য বৈধ ছিল, অন্য মুমিনদের জন্য নয়। কারণ সাধারণ মুমিনদের ক্ষেত্রে সীমিত বিবাহের উদ্দেশ্য ছিল—জটিলতা হ্রাস করা এবং ইনসাফ রক্ষা করা। আর নবীর জন্য এসব প্রযোজ্য ছিল না, তাঁর সম্মানিত অবস্থান ও নবুয়তের দায়িত্বের কারণে।
অতএব, আল্লাহ বলেন:
“শুধু তোমার জন্য, মুমিনদের জন্য নয়।”
—সুরা আহযাব, আয়াত ৫০
—
নবী সা. -কে যেসব শ্রেণির নারীর সঙ্গে বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল (আয়াত অনুসারে):
১. স্ত্রীগণ, যাঁদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন এবং যাঁদের মহর প্রদান করেছিলেন। এরা তাঁকে বিবাহ করেছিলেন আয়াত নাজিলের আগেই:
সওদা বিনতে জমআ রা.
আয়িশা বিনতে আবু বকর রা.
হাফসা বিনতে উমর রা.
উম্মে সালামা বিনতে আবু উমাইয়া রা.
(খাদিজা ও জায়নাব বিনতে খুজাইমা এ আয়াত নাজিলের আগেই ইন্তিকাল করেন।)
২. দাসী বা মালিকানাধীন নারী—যাঁরা গনিমতের মাধ্যমে প্রাপ্ত। তিনি চাইলে তাঁদের মুক্ত করে বিবাহ করতে পারতেন।
মারিয়া কিবতিয়া: তিনি দাসী হিসেবেই ছিলেন, মুক্ত হননি।
জুবাইরিয়া বিনতে হারিস ও সাফিয়া বিনতে হুয়াই: তাঁদের মুক্ত করে বিবাহ করেন।
৩. আত্মীয় নারীরা—যাঁরা হিজরত করেছেন। যেমন:
জায়নাব বিনতে জাহশ (চাচাতো বোন)
উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফিয়ান (মায়ের দিক থেকে আত্মীয়)
৪. কোনো মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে দান করে দেন (বিনা মোহরে নিজেকে অর্পণ করেন), তবে নবী সা. ইচ্ছা করলে তাঁকে বিবাহ করতে পারেন। এই শ্রেণির মধ্যে শুধু মাইমূনা বিনতে হারিসের নাম পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে, তিনি নিজেকে নবীর জন্য দান করেছিলেন; তবে নবী সা. তাঁর চাচা আব্বাসের মাধ্যমে তাঁকে বিবাহ করেন এবং মোহর দেন।
নবী সা. -এর জন্য বিবাহের সংখ্যায় ছাড় থাকার কারণ:
যখন সুরা নিসার এই আয়াত নাজিল হয়:
“তোমরা যাকে চাও, তার মধ্যে থেকে দুইজন, তিনজন, কিংবা চারজন করে বিবাহ কর।”
—সুরা নিসা, আয়াত ৩
নবী সা. সাহাবীদের নির্দেশ দেন, যেন কেউ চারজনের বেশি স্ত্রী রাখে না। যাঁদের ছিল, তাঁরা চারজন রেখে বাকিদের তালাক দেন।
কিন্তু নবী সা. তখন চারজনের বেশি স্ত্রী ছিলেন না, ফলে তালাকের প্রয়োজন হয়নি। এরপর আল্লাহ তাঁকে চারজনের বেশি বিবাহের অনুমতি দেন, কিছু কারণের ভিত্তিতে, যেমন:
তাঁর স্ত্রীগণ দাওয়াত ও শিক্ষার কাজে তাঁকে সহায়তা করতেন, যেমন:
“তোমাদের ঘরে যা কিছু আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ হিসেবে তিলাওয়াত করা হয়, তা স্মরণ করো।”
—সুরা আহযাব, আয়াত ৩৪
তাঁরা ছিলেন উম্মাহাতুল মু’মিনীন (মুমিনদের মা), যার অর্থ—তাঁদের সঙ্গে কারো বিবাহ বৈধ নয়। এটি ছিল তাঁদের জন্য এক ধরনের সম্মান।
উম্মাহাতুল মুমিনীনদের (রাযি.) বিবাহের ক্রমানুসার:
১. খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা. – তিনিই ছিলেন নবী সা. -এর প্রথম স্ত্রী। তাঁর জীবদ্দশায় নবী সা. আর কোনো নারীকে বিবাহ করেননি।
২. সওদা বিনতে জমআ রা. – খাদিজা রা. এর ইন্তিকালের পর নবী সা. তাঁকে বিয়ে করেন, দাওয়াতের দশম বর্ষের শাওয়াল মাসে।
৩. আয়িশা বিনতে আবু বকর রা. – তাঁর সঙ্গে আকদ হয় মক্কায়, এবং হিজরতের পর মদিনায় বিবাহিত জীবন শুরু করেন।
৪. হাফসা বিনতে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.– বদর অথবা উহুদের পরে তাঁকে বিয়ে করেন।
৫. জায়নাব বিনতে খুযাইমা হিলালিয়া রা.– হিজরতের তৃতীয় বছরে বিবাহ করেন। তিনি কয়েক মাস পর ইন্তিকাল করেন।
৬. উম্মে সালামা (হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া)রা. – হিজরতের চতুর্থ বছরের শাওয়াল মাসে বিবাহ করেন।
৭. জায়নাব বিনতে জাহশ রা.– হিজরতের পঞ্চম বছরে বিবাহ করেন। তাঁর বিষয়ে সুরা আহযাবে আয়াত নাজিল হয়।
৮. জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস রা. – বনু মুস্তালিক যুদ্ধে (হিজরতের ৫ম বছর) বিজয়ের পর তাঁকে বিবাহ করেন।
৯. উম্মে হাবীবা বিনতে আবু সুফিয়ান রা.– হিজরতের সপ্তম বছরে তাঁকে বিবাহ করেন। তিনি হাবশায় হিজরতকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
১০. সাফিয়া বিনতে হুয়াই ইবনু আখতাব রা. – খায়বার যুদ্ধের (৭ হিজরি) পরে তাঁকে বিবাহ করেন।
১১. মাইমূনা বিনতে হারিস – তিনি ছিলেন নবী সা. -এর সর্বশেষ স্ত্রী। তাঁকে বিবাহ করেন ‘উমরাতুল ক্বাজা’ , হিজরতের ৭ম বছরে।
——————–
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।