মসজিদুল হারামে বহু নারী “হাতীম” এলাকায় পাঠদান করেছেন। মসজিদে নববিতে অনেক নারীর সামনে হাদিসের সমাবেশ বসেছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ফাতিমা আল-বাতায়িহিয়া (মৃত্যু: ৭১১ হিজরি), যিনি ইমাম যাহাবি, ইমাম সুবকি প্রমুখের শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর পাঠচক্র রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর রওজা মুবারকের কাছে বসত। তিনি রওজার শিরোহানিতে বসতেন, ক্লান্ত হলে কবরের দেয়ালে হেলান দিতেন, এবং পাঠশেষে সকল উপস্থিত শিক্ষার্থীর জন্য নিজ হাতে ইজাজতনামা লিখে দিতেন।
একইভাবে মসজিদুল আকসায় উম্মে দারদা রহ. থেকে শুরু করে পরবর্তী শতাব্দীগুলোতেও নারীদের পাঠচক্র নিয়মিত বসত। সেখানে শ্রোতাদের সংখ্যা বহু সময় শতাধিক অতিক্রম করত।
এ তিন মসজিদের বাইরে অন্য মসজিদ, মাদরাসা ও কলেজগুলোতেও মহিলাদের জন্য দারস অনুষ্ঠিত হতো। দামেস্কে জামে উমাইয়ায় তার সময়ের সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিস কুব্বাতুন নাসরের নিচে বসে হাদিসের দারস দিতেন। আয়েশা বিনতে ইবনু আবদুল হাদী (মৃত্যু ৮১৪ হি.)-কেও সেখানে হাদিস পড়ানোর জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল, এবং তিনি নিয়মিত বেতনও পেতেন। তাঁর দারসে যোগ দিতেন সে সময়ের দুজন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস—হাফিজ ইবনু নাসিরুদ্দীন আদ-দিমাশকী এবং হাফিজ ইবনু হাজর আল-আসকালানী। ইবনু হাজর আয়েশা মুকাদ্দাসিয়া থেকে ছোট-বড় প্রায় সত্তরটি কিতাব হাদিস রূপে গ্রহণ করেছিলেন।
কিছু তরুণ আলেমের মনে প্রশ্ন জাগে—আমি কেন এত পরিশ্রম করছি নারীদের শিক্ষা ও তাদের অধিকারের জন্য? এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন।
আলেমদের দায়িত্ব হলো, যখন কুরআন-সুন্নাহর কোনো বিধান বিকৃত করা হয়, কিংবা তার ওপর আমল বা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করা হয়, তখন তারা সেই বিকৃতি দূর করবে এবং কুরআন-সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী আমল ও বাস্তবায়নের পথ সহজ করবে। নারীদের মৌলিক মানবিক ও ইসলামি অধিকার আল্লাহর প্রদত্ত এবং তাঁর রাসুল ﷺ কর্তৃক বর্ণিত। এই অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করা সমগ্র উম্মতের দায়িত্ব।
আজ নারীদের ওপর যে অন্যায় হচ্ছে এবং যে অধিকারগুলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ﷺ তাদের দিয়েছেন, তা থেকে যেভাবে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, তার ক্ষতি খুব স্পষ্ট। নারীরা শুধু ইসলাম থেকে বিমুখই হচ্ছেন না, বরং বিপুল সংখ্যক নারী ধর্মত্যাগ করছেন। এর ফলে বহু পুরুষও ধর্মত্যাগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতির সঠিক উপলব্ধি না করার কারণে আলেমদের নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, নারীদের সম্পর্কে আমাদের নেতিবাচক মনোভাব তাদের মহান অবদানের প্রতি অকৃতজ্ঞতা ও অবমূল্যায়ন এবং তাদের কীর্তিকে উপেক্ষা করার নামান্তর। ইকবাল মুসলিম নারীদের উদ্দেশে কী হৃদয়গ্রাহী কথা বলেছেন—
“আমাদের রাত থেকে ভোরকে বের করো, কুরআন আবার পাঠ করো, হে দূরদর্শীরা। তুমি জানো, তোমার তিলাওয়াতের উষ্ণতা কীভাবে যুগের ভাগ্য পরিবর্তন করেছিল।”
——————–
ক্যাটাগরি : শিক্ষা, ইসলামি চিন্তাধারা, হাদিস,
—
✍️ মূল রচনা: ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভী, অক্সফোর্ড
✍️ অনুবাদ, যাচাই ও সম্পাদনা: মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ
—
🔗 অনূদিত মূল প্রবন্ধের লিংক: 👇
https://t.me/DrAkramNadwi/6959