https://t.me/DrAkramNadwi/2930
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
(নোট: এই প্রবন্ধে আলোচনার বিষয়বস্তু মূলত উলামাদের উদ্দেশ্যে, তাই এখানে এমন পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যা তাদের মধ্যে প্রচলিত। হয়তো সাধারণ মানুষের এগুলো বুঝতে অসুবিধা হতে পারে, এর জন্য আমি দুঃখিত।)
আমি আমার এক আলোচনায় উল্লেখ করেছিলাম যে সাধারণত মানুষ লুজুমের উপর ভিত্তি করে যুক্তি উপস্থাপন করে এবং এই লুজুমও শর্ত পূরণ করে না। তাই এই ধরনের যুক্তি উপস্থাপন আসলে সফিস্তা (Sophistry) বা ভ্রান্তি। এ বিষয়ে মাওলানা আবদুর রাজ্জাক নদভী সাহেব নিচের প্রশ্নটি করেছেন:
“ডাক্তার সাহেব, আপনি আপনার এই যুক্তি-তর্কে ভরা লেখায় যে সফিস্তার উল্লেখ করেছেন যা উলামাদের আলোচনায় বিদ্যমান, সেটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করুন। কারণ, দাবি যুক্তি ও উদাহরণ ছাড়া বোঝা যায় না। বিশেষত, উলামাদের সেই আলোচনা, যা প্রমাণ থেকে খালি থাকে, তার উদাহরণ দিন। এবং উলামাদের দ্বারা কি সমস্ত উলামা বোঝানো হয়েছে, নাকি শুধু কিছু?”
|| উত্তর:
আমি উলামাদের লেখার ত্রুটি নিয়ে এর আগেও অনেক প্রবন্ধ লিখেছি। সেগুলো দেখলে আমার বক্তব্য সহজেই বোঝা যাবে। এখন আপনার প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষেপে বলছি:
1. আমার লেখায় লুজুম দ্বারা বোধগম্যতা বা বুদ্ধিবৃত্তিক আবশ্যকতাকে বোঝানো হয়েছে।
2. নির্দিষ্ট উদাহরণ ইচ্ছাকৃতভাবে এড়ানো হয়েছে, কারণ এর পরে আমার বক্তব্যের খণ্ডনের যে প্রক্রিয়া শুরু হবে তা কয়েক দিনেও শেষ হবে না।
3. সাধারণ উদাহরণ: উলামা ও মুফতিদের লেখায় প্রায়শই এ ধরনের কথাগুলো দেখা যায়:
“এতে হাদিস অস্বীকার করা আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে বুখারি শরিফের সমালোচনা আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে নবীদের অবমাননা আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে ইসলামী ইতিহাসে অনাস্থা আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে প্রাচ্যবিদদের অনুসরণ আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে শিয়া, খারেজি, মুতাজিলা বা মুরজিয়াদের পক্ষপাত আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে মাদ্রাসার অবমূল্যায়ন আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে ধর্মীয় জ্ঞানের অসম্মান আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে উলামাদের ব্যঙ্গ করা আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে কুফর আবশ্যক হয়ে যায়।”
“এতে ফিসক আবশ্যক হয়ে যায়।”
এ ধরনের আরও অনেক অভিযোগ।
4. উপরের উদাহরণগুলো থেকে এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে যারা এই ধরনের দাবি করেন, তাদের কাছে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি থাকে না। তাদের দাবিগুলো সম্পূর্ণরূপে লুজুমের উপর ভিত্তি করে।
5. এই লুজুমও শর্ত অনুযায়ী পূরণ হয় না, কারণ যার কোনো লুজুমের কথা বলা হয়, সেই বিষয়ে অনেক সম্ভাবনা থাকতে পারে। সমস্ত ইতিবাচক সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করা হয়, যদিও তাদের মধ্যে অনেকগুলোর শক্তিশালী প্রমাণ থাকে।
6. যখন কোনো বিষয়ে একাধিক সম্ভাবনা থাকে, তখন কোনো একটিকে আবশ্যক বলে নির্ধারণ করা “যুক্তি ছাড়া যুক্তি উপস্থাপন” হয়। এটাকেই সফিস্তা বা ভ্রান্ত যুক্তি বলা হয়।
7. ভাষায় সাধারণ বক্তব্য দিয়ে নির্দিষ্ট অর্থ বোঝানো একটি প্রতিষ্ঠিত রীতি। তাই আমার লেখায় উলামাদের দ্বারা সমস্ত উলামাকে বোঝানো হয়েছে—এটিও একটি এমন অভিযোগ যা এখানে খণ্ডন করা হচ্ছে।
উপরের প্রশ্নের উত্তর শেষ হয়েছে। তবে জ্ঞানীদের একটি রীতি হলো প্রয়োজন অনুযায়ী তারা প্রশ্নের চেয়েও বেশি উত্তর দেন। যেমন ইমাম বুখারি তার “সাহিহ” গ্রন্থের “কিতাবুল ইলম”-এ একটি অধ্যায় রেখেছেন: “باب من أجاب السائل بأكثر مما سأله”। এই রীতির উপর আমল করে বলছি:
যখন কোনো বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকে, তখন শুধুমাত্র সম্ভাবনার ভিত্তিতে কাউকে অভিযুক্ত করা বৈধ নয়। এ ধরনের অভিযোগ গালিগালাজের আওতায় পড়ে।
আর যদি কোনো কারণে সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করতেই হয়, তবে এর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো সমস্ত ইতিবাচক ও নেতিবাচক সম্ভাবনা উল্লেখ করা। তাদের তুলনা করা এবং একটিকে প্রাধান্য দেওয়া। আর যখন প্রাধান্য দেন, তখন চূড়ান্ত ভাষা ব্যবহার করবেন না। এই পদ্ধতিকে সবর ও তাকসিম বলা হয় এবং আধুনিক ভাষায় এটি বিশ্লেষণ ও বিচ্ছিন্নতা হিসেবে পরিচিত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। উদাহরণের জন্য তার বই “দারউত তা’রুদ বাইনাল আকল ওয়ান নাকল” এবং “মাজমু আল-ফাতাওয়া” দেখুন।
দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের সমসাময়িক উলামাদের লেখাগুলো বিশ্লেষণ ও বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্ত। এবং এ নীতির ব্যতিক্রম খুবই কম।
এটিই আমার বক্তব্য। আল্লাহই ভালো জানেন।
———
# সমালোচনা # শিক্ষা
লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।