AkramNadwi

পীরদের বিভাগসমূহ ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/6120

بسم الله الرحمن الرحيم

|| প্রশ্ন:

আফগানিস্তানের খোস্ত শহরের অধিবাসী মাওলানা নূরুর রহমান উসমানী (মাদ্দা যিল্লাহ) নিম্নোক্ত প্রশ্ন করেছেন:
আসসালামু আলাইকুম
শায়েখ ড. মোহাম্মদ আকরাম নাদভী (হাফিযাহুল্লাহু ও রাআহু) -এর খেদমতে একটি প্রশ্ন পেশ করছি যে,
কিছু সুফিরা বলেন:
পীর তিন প্রকারের হয়ে থাকেন:
(১) পীর কামেল মুকাম্মাল
(২) পীর কামেল
(৩) পীর নাকিছ (ত্রুটিপূর্ণ পীর)
প্রশ্ন হল: এই ধরনের কোনো বিভাজনের প্রমাণ আছে কি না?

জাযাকুমুল্লাহ খাইর
আপনার ভাই:
নূরুর রহমান উসমানী,
শিক্ষক: জামিয়া ইমাম আবু হানিফা রহ.,
ও শিক্ষা সচিব: জামিয়াতুদ দারুল উলুম, খোস্ত, আফগানিস্তান।

|| উত্তর:

প্রাথমিক যুগের মাশায়েখগণ বারবার এই কথার ওপর জোর দিয়েছেন যে, আমাদের আচরণগত পথ (সুলূক)-এর ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ। যা কিছু কুরআন ও সুন্নাহর অনুরূপ, তা-ই সঠিক; আর যা কিছু কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী, তা-ই বিভ্রান্তি ও বিদআত।

উপমহাদেশে চিশতিয়া তরিকার মর্যাদার প্রতীক হযরত নিজামউদ্দীন আউলিয়া (রহ.)-এর মহান খলিফা হযরত শায়খ নসীরুদ্দীন চিরাগ দেহলভী (রহ.)-এর একটি প্রসিদ্ধ বাণী হল:
“পীরের মতবাদ দলিল হয় না, দলিল কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই হতে হবে।”

পরবর্তী যুগের সুফিদের পন্থা যেটির দ্বারা দূষিত হয়েছে, তা হল তাঁদের বেসামাল দাবি ও বেপরোয়া কথাবার্তা এবং কুরআন ও সুন্নাহর প্রতি তাদের নির্লিপ্ততা। বরং বলা যায়, কুরআন-সুন্নাহর বিরোধিতা যেভাবে সুফিদের মধ্যে দেখা যায়, অন্য কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে তা খুব কমই দেখা যায়।

আপনি পীরদের এই শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। পীরদের এই বিভাজন ও তাঁদের কেরামতি এবং রূহানী মাকাম সম্পর্কে তাঁদের বর্ণনাগুলি দেখে মনে হয় যেন এই গোষ্ঠীর মধ্যে আল্লাহভীতির কোনো অনুভবই নেই। সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.) বারবার নিজেদের ভেতরে মুনাফিকি থাকার ভয় প্রকাশ করতেন। একই অবস্থা ছিল তাবেইন ও ইসলামের ইমামগণের।

ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর “কিতাবুল ইমান” গ্রন্থে এই বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন।

মানুষ যখন সুফিদের এই সব উচ্চতর মাকাম ও মর্যাদা সম্পর্কিত বর্ণনা পড়ে, তখন মনে হয় যেন কুরআন একটি অসম্পূর্ণ গ্রন্থ। এতো গুণাবলিসম্পন্ন মানুষদের কোনো আলোচনা তাতে নেই! সেই কুরআনে কেবল নবীদের কথাই বলা হয়েছে এবং তাঁদের অনুসরণ করারই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ‘খাইরুল কুরুন’ তথা উত্তম যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার পর এক শ্রেণির লোকের আবির্ভাব ঘটে, যারা কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা ও নির্দেশনার ওপর মোটা দাগ টেনে দেয়, নিজেদের আত্মিক অবস্থা ও অবস্থান তুলে ধরে পুরো উম্মতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।

দুঃখজনক হল—এমন পীরদের কথাবার্তা কীভাবে ইসলামি সমাজে ছড়িয়ে গেল? এর চেয়েও দুঃখজনক বিষয় হল—আজকের অনেক আলেম এসব পীরদের সামনে নিরুপায়।

আমাদের উস্তায শায়খ মুহাম্মদ ইউনুস জুনপুরী (রহ.)—যিনি মাজাহিরুল উলূমের শায়খুল হাদীস ছিলেন—তাঁর জীবদ্দশায় পীরদের এসব বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করতেন এবং প্রকাশ্য মাহফিলেও তাঁদের পথভ্রষ্টতা জনসমক্ষে তুলে ধরতেন।

এটি কোনো আলেমের অজানা থাকতে পারে না যে, পীরদের এই তিন ধরনের বিভাজনের কোনো দলিল নেই।

নবীদের পর প্রত্যেক মানুষই নাকিছ (অসম্পূর্ণ)। ইমামগণ, যারা ইজতিহাদ করেছেন, তাঁদেরও কিছু কিছু বক্তব্য ভুল হয়েছে। আর তাঁরা নিজেরাই তাঁদের জ্ঞানের ও আমলের অপূর্ণতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এ স্বীকৃতিই তাঁদের মর্যাদার প্রমাণ।

যদি এ সব সুফিদের মাঝে এখনো সামান্যতম সত্য গ্রহণের প্রবণতা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তাঁদের বলা উচিত যে—
পীরের একটিই প্রকার আছে: পীর নাকিছ।

সে ভুল করে, সে পাপ করে, সেও আল্লাহর মাগফিরাতের মুখাপেক্ষী, সেও জানে না তার শেষ পরিণাম কী হবে। যে পীর এসব স্বীকার করে, সেই-ই আল্লাহওয়ালা, এবং তাঁর সংস্পর্শ উপকারী হবে।

আর যে সুফি নিজেকে নবী ও সাহাবাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ মনে করে, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। তার থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেকি করার তাওফিক দান করুন, কুরআনুল কারীমের দ্বারা পথপ্রাপ্ত করুন, সুন্নাহর অনুসারী বানান এবং নেককার ও সৎ লোকদের ভালোবাসার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।

——————–

✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *