https://t.me/DrAkramNadwi/1733
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
——————–
তারা বলল: আপনার সফরের দিনগুলিতে কি এমন কোনো কাজ আপনি করেছেন, যার জন্য পরে অনুতপ্ত হয়েছেন?
আমি বললাম: আপনাদের এই প্রশ্নটি কি একজন মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া নয়?
তারা বলল: আমরা তো আপনার দুর্বলতার জায়গাগুলো জানতে চাই, যেন সেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
আমি বললাম: কিন্তু সেটাই কি আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার ফাঁস করা এবং নিজের অপমান নয়?
তারা বলল: ইশ! যদি আপনি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেন, আমাদের এত খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করা লাগত না!
আমি বললাম: যেহেতু আপনারা এত অনুরোধ করছেন, তাহলে হ্যাঁ—আমি কিছু কাজ করেছি, যেগুলোর জন্য পরে লজ্জিত হয়েছি।
তারা বলল: কী সেই কাজগুলো?
আমি বললাম: মানুষের ভুলের পেছনে লেগে থাকো না, আর এমন কোনো দোষ খুঁজে বের করো না, যেটা আমার রব গোপন করে রেখেছেন।
তারা বলল: আমাদের অন্তত একটি ঘটনা বলুন, আমরা আপনার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব।
আমি বললাম: শুনুন—
আমার এক বন্ধু আমাকে আহদ পর্বতের পাদদেশে একটি উদ্যানে রাতের খাবারে আমন্ত্রণ জানালেন। আমি তার সঙ্গ লাভের আগ্রহে এবং এই পর্বতের প্রতি ভালোবাসা থেকে, যা আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের এক নিরব সাক্ষী, সেই সাথে শরীর-মন চাঙা করার উদ্দেশ্যে তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম।
আমরা কয়েকজন বন্ধু একত্র হলাম, খাবার ও পানীয় নিয়ে বসে গল্প করছিলাম, মনোরম বাতাসে প্রশান্তি পাচ্ছিলাম, আর সুস্বাদু ও পর্যাপ্ত খাবারে তৃপ্ত হচ্ছিলাম। খাওয়া শেষ করে, পেটভরে খাবার পর আমরা পাহাড়ে একটু ঘোরাঘুরি করার ইচ্ছে করলাম—আরও একটু আনন্দ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন আমরা সবাই পাহাড়ের উঁচু অংশের দিকে উঠে গেলাম, আর আমাদের সেই বন্ধুটি খাবারের টেবিলেই থেকে গেলেন।
আমরা যখন পাহাড়ের এমন এক চূড়ায় পৌঁছালাম যেখান থেকে মদীনা শহর ও তার আশেপাশের এলাকা দেখা যায়, তখন থেমে গেলাম। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা আমাদের শহরের কিছু নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থানের পরিচয় দিলেন। আমরা আনন্দে উদ্বেল ছিলাম, সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম—মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আমাদের মোহিত করেছিল।
এমন সময় আমি তাকিয়ে দেখি—আমার সেই বন্ধু টেবিল গুছাচ্ছেন, বাসন-কোসন পরিষ্কার করছেন, বক্সে ঢুকিয়ে ব্যাগে ঢোকাচ্ছেন। তখন আমার অন্তর কেঁপে উঠল। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল এবং নিজের আচরণ আমার কাছে লজ্জাজনক মনে হলো। আমি নিজেকে বললাম: “আমরা তো কত দূরে সরে গেছি ভদ্রতা ও মর্যাদা থেকে! এক মহানুভব ব্যক্তি আমাদের খাওয়ালেন, অথচ আমরা তাকে একা রেখে নিজেদের আনন্দে মগ্ন! এটা কি শিষ্টাচার ও সম্মানের পথে পড়ে?”
আমি তখন আমার সঙ্গীদের বললাম: “চলো, আমরা নিচে নামি।” আর নিজের মনেই বললাম: “পাহাড়ে ওঠা মানেই কি উঁচুতে ওঠা? আসল উঁচুতা তো হলো চরিত্রের উচ্চতা, যা পাওয়া যায় নিজের প্রবৃত্তিকে সংযত করে দান, ত্যাগ ও পরার্থপরতার গুণ অর্জনের মাধ্যমে।”
তারা বলল: আপনার এই আচরণে কি আপনার বন্ধুর কষ্ট লেগেছিল?
আমি বললাম: আমার মনে হয় না। আমরা যখন তার কাছে পৌঁছালাম, তার কথা বা আচরণে কোনো পরিবর্তন টের পাইনি। সম্ভবত, তিনি খুশিই হয়েছেন আমাদেরকে উৎফুল্ল ও আনন্দিত দেখে। কারণ যারা দয়ালু ও বিশ্বস্ত, তারা কষ্ট পেলে ও হাসিমুখে থাকেন; তাদের ধৈর্য তাদের রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ করতে দেয় না।
তারা বলল: তাহলে আপনি কি তাঁর কাছে আপনার এই অবহেলার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন?
আমি বললাম: না।
তারা বলল: জ্ঞানী ও ধার্মিকদের রীতি কি ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া নয়?
আমি বললাম: অবশ্যই তাই।
তারা বলল: তাহলে আপনি ক্ষমা চাইলেন না যে!
আমি বললাম: তিনটি কারণে—
১. যখন আমরা তার সঙ্গে মিলিত হলাম, তখন তার মহানুভবতা আমাদের ভুলে যাওয়া আচরণকে আড়াল করে ফেলল। তিনি ছিলেন লজ্জাশীল, উদার, এবং মহান চরিত্রের অধিকারী।
২. আমি মনে করেছিলাম ক্ষমা চাওয়া এখানে কিছুটা কৃত্রিমতা তৈরি করবে, আর কৃত্রিমতা বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতার শত্রু—এটা বিরক্তির কারণ হতে পারে।
৩. আমি তখন বিষয়টা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে দেরি করেছিলাম। আর এই দেরির পেছনে কারণ ছিল চিন্তার দুর্বলতা ও সংকল্পের অভাব। কারণ, পূর্ণ বিবেকই মানুষকে মর্যাদার পথে চালিত করে, আর দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিই আচরণে কোমলতা আনে।
তারা বলল: তাহলে কি আপনি আপনার এই ভুল থেকে কিছু শিখেছেন ?
আমি বললাম: হ্যাঁ—এই যে, আমি আর কখনো এমন কিছু করব না, এবং নিজের যেকোনো বিষয়ে আর তাড়াহুড়া করব না। আমার চিন্তাশক্তিকে আমার প্রবৃত্তির উপরে রাখব।
আর আমি বলি: আমার অঙ্গীকার কোনো কাজে আসবে না, আমার ইচ্ছাশক্তিও শক্তিশালী হবে না—যদি না আমার প্রভুর পক্ষ থেকে সাহায্য ও তাওফীক না আসে। আমি তাঁরই ওপর ভরসা করি, তাঁরই দিকে ফিরে যাই। তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং সহায়!
——————–
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।