https://t.me/DrAkramNadwi/5094
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
————–
মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ সিদ্দিকী নদভী একজন যোগ্য আলেম, আরবি ও উর্দুর একজন সাহিত্যিক, এবং তিনি ‘নদওয়াতুল উলামা’-তে তাবলিগি জামাতের আমির ছিলেন। বর্তমানে তিনি দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে সক্রিয় ও গতিশীল রয়েছেন। তিনি নিম্নোক্ত প্রশ্নটি করেছেন:
সূরা ইউসুফের আয়াত ১০৯:
“وما أرسلنا من قبلك إلا رجالا نوحي إليهم من أهل القرى”
এই আয়াতের অধীনে কিছু উর্দু তাফসিরে লেখা আছে যে, আল্লাহ তাআলা যত নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন, তারা সবাই কোনো না কোনো শহর বা নগরের লোক ছিলেন; কোনো নবী বা রাসূল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেননি।
কিন্তু এই একই সূরার আয়াত ১০০:
“وجاء بكم من البدو”
থেকে বোঝা যায় যে, হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর আবির্ভাব গ্রামাঞ্চলে (বেদু) হয়েছিল।
হযরত! দয়া করে আমার এই প্রশ্নটির ব্যাখ্যা দিন।
উত্তর:
সূরা ইউসুফের শেষ অংশে মুশরিকদের কিছু আপত্তির জবাব দেওয়া হয়েছে, যেগুলো তারা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান না আনার অজুহাত হিসেবে পেশ করত। তাদের এক আপত্তি ছিল, “আমরা কীভাবে আমাদের মতোই একজন মানুষকে নবী হিসেবে মেনে নেব? যদি আল্লাহ নবী পাঠাতেন, তাহলে কোনো ফেরেশতা পাঠাতেন।”
এর জবাব দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা যখনই কোনো জনপদে নবী পাঠিয়েছেন, তিনি সে জনপদেরই একজন মানুষ ছিলেন। এখানে মূল উদ্দেশ্য এই নয় যে, নবী শহরেই আসেন বা গ্রামে নয়; বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, নবী যেখানে প্রেরিত হোন না কেন, তিনি সেখানকার জনগণের মধ্য থেকেই একজন হয়ে থাকেন।
‘উসুলে ফিকহ’-এর ভাষায় বললে, এখানে “القرى” (কুরা/জনপদ) শব্দটি “ইবারাতুন্ নাস” নয়, বরং “أهل” (আহল/বাসিন্দা)-ই “ইবারাতুন্ নাস”।
এই বক্তব্য কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এসেছে। যেমন, সূরা নাহলে বলা হয়েছে:
“وما أرسلنا من قبلك إلا رجالا نوحي إليهم”
(সূরা নাহল: ৪৩)
এর আগেও মুশরিকদের আপত্তি এসেছে:
“هل ينظرون إلا أن تأتيهم الملائكة أو يأتي أمر ربك”
(সূরা নাহল: ৩৩)
আবার সূরা ফুরকানে (২১ নম্বর আয়াতে):
“وقال الذين لا يرجون لقاءنا لولا أنزل علينا الملائكة أو نرى ربنا”
এটা মনে রাখা দরকার যে, “কুরা” শব্দটি আরবি ভাষায় কেবল শহর বা কসবাহ বোঝায় না; বরং “কুরা” বলতে বোঝায় মানুষের একটি বসবাসযোগ্য স্থানে একত্র হওয়া — অর্থাৎ এমন স্থান যেখানে জনবসতি রয়েছে, তা শহর হোক, কসবাহ হোক বা গ্রাম হোক। তবে “বাদিয়া” (অর্থাৎ মরুভূমি বা নির্জন বেদুইন অঞ্চল) কুরা নয়।
প্রশ্ন হলো: “বেদুইনদের (بدو) মধ্য থেকে কি কোনো নবী প্রেরিত হননি?”
এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পাই কুরআনে নবীদের প্রেরণ সংক্রান্ত সাধারণ আয়াতগুলোতে। যেমন:
“وإن من أمة إلا خلا فيها نذير” (সূরা ফাতির: ২৪)
“ولكل قوم هاد” (সূরা রা’দ: ৭)
“ولقد بعثنا في كل أمة رسولا” (সূরা নাহল: ৩৬)
এই ধরনের অনেক আয়াত কুরআনে আছে, যা একজন জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট অজ্ঞাত থাকা উচিত নয়।
এখন আমরা সূরা ইউসুফের আয়াত “وجاء بكم من البدو”-এর দিকে নজর দিই।
আপনার কথা ঠিক যে, হযরত ইয়াকুব (আ.) কোনো স্থায়ী জনপদে ছিলেন না। একই অবস্থা ছিল তাঁর পিতা হযরত ইসহাক (আ.)-এর।
কুরআন থেকে এটা বোঝা যায় না যে, এই দুজন কোনো জাতির ‘নাজীর’ (সতর্ককারী) ছিলেন।
তাহলে তাদের মর্যাদা কী ছিল?
উত্তর হলো: হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অস্বাভাবিক ত্যাগ ও কোরবানির কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁকে এবং তাঁর বংশধরদেরকে পৃথিবীর সকল মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। এই শ্রেষ্ঠত্বের একটি প্রকাশ ছিল — আল্লাহ তাঁর বংশে অনেক নবী পাঠান।
এই নবীরা মূলত বনি ইসরাইলের শিক্ষা, তাজকিয়া ও সংশোধনের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁরা অন্য জাতিগুলোর প্রতি ‘নাজীর’ (সতর্ককারী) হিসেবে প্রেরিত হননি।
বনি ইসরাইল কখনো শহরে, কখনো মরুভূমিতে বসবাস করত — তারা যেখানে থাকত, তাদের নবীরাও তাদের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন।
——————–
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।