https://t.me/DrAkramNadwi/5911
بسم الله الرحمن الرحيم
❝
|| প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
চার মাজহাবের ইমামগণ বা অন্যান্য ফকিহদের দৃষ্টিতে নামাজে কুরআন দেখে পড়ার কী হুকুম? দলিলের আলোকে উত্তর কাম্য।
(আবু সুফিয়ান নদভী, পুরনিয়া বিহার)
|| উত্তর:
এই বিষয়ে ফকিহদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে যে, নামাজের মধ্যে মুসহাফ (কুরআনের মূল কপি) দেখে তিলাওয়াত করা যাবে কি না? অধিকাংশ ইমাম ও ফকিহ এটি বৈধ বলে মত দিয়েছেন এবং সাহাবা ও তাবিঈদের একটি দলও এ পদ্ধতিতে আমল করেছেন।
হযরত আয়েশা (রা.)-এর দাস জাকওয়ান নামাজে তাঁর ইমামতি করতেন এবং তিনি মুসহাফ দেখে তিলাওয়াত করতেন।
“وكانت عائشة يؤمها عبدها ذكوان من المصحف”।
হযরত আয়েশা (রা.)-এর এই অভ্যাস বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
(সহিহ বুখারি (মু’আল্লাক), মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবা ২/২৩৫, সুনান আল-কুবরা লিলবাইহাকি ২/২৫৩)।
ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহ.)-কে নামাজের মধ্যে মুসহাফ থেকে তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
“আমাদের সৎ ও নেককার ব্যক্তিরা এমনটি করতেন।”
“كان خيارنا يقرؤون من المصاحف”।
(আল-মুদাওয়ানা আল-কুবরা ১/২৮৮-২৮৯, আল-মুগনি লিবনে কুদামা ১/২৩৫)।
এ বিষয়ে আরও কিছু বর্ণনা রয়েছে:
ইবরাহিম ইবনে সাদ তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাঁকে পরিবারকে নামাজে ইমামতি করতে বলতেন এবং কুরআন থেকে দেখে পড়তে আদেশ করতেন।
আয়ুব, মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মনে করতেন না যে কেউ তারাবিহ নামাজে মুসহাফ থেকে তিলাওয়াত করলে কোনো সমস্যা হবে।
আতাউর রহমান বলেছেন, “রমজানে ইমাম যদি মুসহাফ দেখে তিলাওয়াত করেন, তবে কোনো সমস্যা নেই।”
ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আনসারি বলেছেন, “রমজানে কুরআন দেখে পড়তে কোনো অসুবিধা নেই।”
(আল-মুদাওয়ানা ১/২২৪)।
এ সকল বর্ণনার সারমর্ম হলো, নামাজের মধ্যে মুসহাফ দেখে পড়া সালাফদের একটি দলের নিয়মিত আমল ছিল।
এই বিষয়ে সবচেয়ে কঠোর মত হলো ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর। তাঁর মতে, নামাজে মুসহাফ থেকে পড়লে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। তবে তাঁর শিষ্যগণ এবং পরবর্তী হানাফি ফকিহগণ এই মতের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা দেখিয়েছেন। তাঁদের মতে, এতে নামাজ বাতিল হয় না, তবে এটি মাকরুহ।
ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, রাতের নামাজ (যেমন, তারাবিহ) এবং অন্যান্য নফল নামাজে মুসহাফ দেখে পড়া জায়েজ।
“وقال مالك: لا بأس بأن يؤم الإمام بالناس في المصحف في رمضان وفي النافلة، قال ابن القاسم: وكره ذلك في الفريضة”।
(আল-মুদাওয়ানা ১/২২৪)।
শাফেয়ি ও হম্বলি মাজহাবের মতে, ফরজ এবং নফল উভয় নামাজেই মুসহাফ দেখে পড়া বৈধ। ইমাম নববি (রহ.) বলেন:
“যদি কেউ নামাজে কুরআন দেখে পড়ে, তাহলে তার নামাজ বাতিল হবে না, সে মুখস্থ জানুক বা না জানুক। যদি সে মাঝে মাঝে পৃষ্ঠাও উল্টায়, তবুও নামাজ নষ্ট হবে না… এটি আমাদের মাজহাব, ইমাম মালিক, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ ও আহমদের মতও এটি।”
(আল-মাজমু ৪/২৭)।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর কঠোর অবস্থানের প্রতি সম্মান জানিয়ে সতর্ক মত হবে যে, ফরজ নামাজে মুখস্থ তিলাওয়াত করাই উত্তম। তবে নফল নামাজ, বিশেষত তারাবিহ ও অন্যান্য সুন্নত নামাজে মুসহাফ দেখে পড়তে কোনো সমস্যা নেই।
———————
মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।