AkramNadwi

নবী যুগে বাণিজ্য কাফেলাগুলোর ওপর হামলার আইনি অবস্থান ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/5910

بسم الله الرحمن الرحيم.

———-

|| প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম,
শ্রদ্ধেয় শাইখ, আশা করি ভালো আছেন। নবীজির সিরাত সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন আছে। হিজরতের পর সাহাবারা মক্কার কাফিরদের সিরিয়া ও ইরাকগামী বাণিজ্য কাফেলাগুলোর ওপর অভিযান চালাতে শুরু করেছিলেন, যার ফলে তাদের হাতে অনেক কাফেলার সম্পদও এসেছিল। এ ধরনের অভিযান কি ডাকাতির আওতায় পড়ে না? কারণ কাফিররা এ যাত্রায় কেবল ব্যবসার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল, আক্রমণের জন্য নয়। আশা করি, উত্তর দিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী:
(ফজলুর রহমান মাহমুদ, লাহোর)

|| উত্তর:

নিজ দেশের নিরীহ নাগরিকদের সম্পদ লুট করা অবশ্যই ডাকাতি, বরং এটি বিদ্রোহের নিকটতম অপরাধ। একইভাবে, যারা অর্থনৈতিক কারণে দেশত্যাগ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে স্বদেশীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রাণঘাতী বা আর্থিক আক্রমণ গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। যেমন, পাকিস্তান ও ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠী ভালো সুযোগের সন্ধানে স্বেচ্ছায় ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাস করছে। তারা নিরাপদ অবস্থায় আছে এবং ইচ্ছে করলে যখন খুশি নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। পাকিস্তান ও ভারত সরকার তাদের জমিজমা দখল করেনি বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতা কিংবা যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। যদি এই প্রবাসীরা নিজ দেশের বিরুদ্ধে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা আইনগত ও নৈতিকভাবে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না; বরং এটি বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

কিন্তু আপনি যে পরিস্থিতির কথা জিজ্ঞাসা করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। নবী করিম ﷺ এবং তাঁর সাহাবারা রা. যে হিজরত করেছেন, তা কোনো শান্তিপূর্ণ ঘটনা ছিল না। তাঁরা স্বেচ্ছায় মদিনায় যাননি, বরং কুরাইশরা তাঁদের জোরপূর্বক মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে, তাঁদের গৃহহীন করেছে, তাঁদের সম্পদ ও সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, হজরত সুহাইব রুমী রা. একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। যখন তিনি হিজরত করলেন, তখন কুরাইশরা তাঁর সমস্ত সম্পদ জোরপূর্বক নিয়ে নিল। অন্য মুহাজিরদের সাথেও একই ঘটনা ঘটেছিল; তাঁদের সম্পত্তির ওপর জোরপূর্বক দখল করা হয়েছিল।

মদিনায় আশ্রয় নেওয়ার পরও কুরাইশরা নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবাদের শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছে, সুযোগ পেলেই ক্ষতি করেছে। হুদাইবিয়ার সন্ধির আগ পর্যন্ত কুরাইশরা মুসলমানদের এতটাই তুচ্ছ করত যে, তাঁদের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তি বা সংলাপে বসার উপযুক্তই মনে করত না।

এটি স্পষ্টতই যুদ্ধাবস্থার একটি দৃষ্টান্ত, যেখানে এক পক্ষ সব ধরনের আগ্রাসন চালাচ্ছিল—নানা ধরনের নির্যাতন করছিল, হত্যা ও রক্তপাত চালিয়ে যাচ্ছিল। অপর পক্ষের জন্য সেখানে শান্তি ও আপসের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।

যুদ্ধাবস্থায় যা বৈধ, মুসলমানরা তাই করেছে। বাণিজ্য কাফেলাগুলোর ওপর আক্রমণ চালিয়ে কুরাইশদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব ছিল, যা তাদের নিজেদের আচরণের পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করতে পারত।

নিজেদের দৃষ্টিতে কুরাইশ ও সাধারণ আরবরা কখনোই বাণিজ্য কাফেলাগুলোর ওপর হামলাকে বেআইনি মনে করেনি; বরং তারা এগুলোকে সম্ভাব্য বিপদের অংশ হিসেবে ধরে নিত।

যুদ্ধাবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিগুলোর জান-মাল নিরাপদ থাকে না। এই নীতি চিরকাল পৃথিবীতে প্রচলিত আছে, এবং আজও সভ্য-অসভ্য সব জাতিই এর অনুসরণ করে।

———-

মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *