AkramNadwi

তুমি আসলে কে ?

https://t.me/DrAkramNadwi/6059

بسم الله الرحمن الرحيم.

———-

তুমি বলো, তোমার এক ইশারাতেই বাতিগুলো নিভে যায়, দীপগুলো অন্ধকার হয়ে যায়, প্রদীপগুলো আলোহীন হয়ে পড়ে, তারকারা আড়াল হয়ে যায়, চাঁদ অমাবস্যায় হারিয়ে যায়, সূর্য অস্তমিত হয়, পৃথিবীতে অন্ধকার ছেয়ে যায়, আর ঘন অন্ধকারের রাজত্ব শুরু হয়।

কিন্তু যদি তুমি বাতি জ্বালাতে, কোনো প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করতে, বাতাস থেকে প্রদীপগুলোর হেফাজত করতে, সময়ের পাতায় রাতের কালিমা মোছার চেষ্টা করতে, হাস্যোজ্জ্বল প্রভাতের বার্তা নিয়ে আসতে, তাওহীদের আলোয় হৃদয়কে আলোকিত করতে, বুদ্ধিকে ঈমান দান করতে, জ্ঞানের আলোয় দৃষ্টির পরিধিকে পূর্ণ করে তুলতে, জ্ঞানের প্রচার করতে এবং অজ্ঞতা থেকে দুনিয়াকে মুক্ত করতে, তাহলে বোঝা যেত—তুমি আসলে কে?

তুমি দাবি করো, তুমি তালি বাজাও, দফ বাজাও, ঢোলের আওয়াজে কোলাহল সৃষ্টি করো, নাচো এবং গাও, আকাশ কাঁপানো স্লোগান দাও। কিন্তু যদি তুমি নীরবতা শেখাতে, পর্বতের কোলে নীরবতার আশ্রয় নিতে, গোপন কথা অন্তরে লুকিয়ে রাখতে, ধ্যানে মগ্ন হতে, নির্জনতা তোমার আশ্রয়স্থল করতে, তোমার প্রভুকে স্মরণ করতে, রজনীর পর্দায় ডুবে যেতে, ভোরে জাগার অভ্যাস গড়ে তুলতে, দোয়া ও মিনতি করতে, কান্নাকাটি করতে এবং তোমার হাহাকার যদি কাওসার ও তাসনিমের ঢেউকেও লজ্জায় ফেলে দিত—তাহলে বোঝা যেত, তুমি আসলে কে?

এটা সত্যি যে, তোমার পূর্বপুরুষরা আল-হামরা নির্মাণ করেছে, লাল কেল্লা তৈরি করেছে, তাজমহল গড়ে তুলেছে, রাস্তা বানিয়েছে, সেতু নির্মাণ করেছে, হাসপাতাল স্থাপন করেছে, অ্যাস্ট্রোল্যাব বানিয়েছে এবং অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু যদি তুমি অহেতুক গর্ব করা থেকে বিরত থাকতে, অহংকার না করতেই, হিজাযী সভ্যতার কবরের ওপর মাতম না করতে, যদি তুমি বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে অন্য জাতির চেয়ে অগ্রগামী হতে, এবং পশ্চিমা প্রাসাদগুলোর চেয়েও উচ্চতর তোমার গন্তব্য নির্ধারণ করতে—তাহলে বোঝা যেত, তুমি কে?

এটি অস্বীকার করা যায় না যে আর-রিসালাহ, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আল-কিতাব (সিবাওয়াইহ), আল-কানুন, আশ-শিফা, মুকাদ্দিমাহ (ইবন খালদূন) এবং হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ—এসব তোমার পূর্বসূরিদের কীর্তি। আকাশ তাদের কপাল চুম্বন করত, তারা ছিল জ্ঞানের সিনা পর্বতের মূসা, এবং তারা গ্রিকদেরও বিস্ময়ে নিমজ্জিত করে দিয়েছিল। কিন্তু যদি তুমি জ্ঞান ও গবেষণার মাঠে তাদের ঐতিহ্য বজায় রাখতে, কল্পনার পাখিকে প্রসারিত করতে, হস্তান্তরিত ও যুক্তিবাদী জ্ঞান এবং সাহিত্যচর্চায় কোনো অবিনাশী কাজ করতে—তাহলে বোঝা যেত, তুমি কে?

এটা ঠিক যে, ইব্রাহিম নাখাঈ, আতাআ ইবনে আবি রাবাহ, রবীআহ আর-রায়, আবু হানিফা, সুফিয়ান সাওরী, আওযাঈ, মালিক, লায়স, শাফেয়ী, আবু সাওর, আহমদ ইবনে হাম্বল, ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ, দাউদ, ইবন হাযম এবং ইবন তাইমিয়া—এরা সবাই ইজতিহাদের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারা ছিলেন গভীর দৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাশীল মনীষী, এবং তাদের মর্যাদা ছিল উঁচু আকাশের মতো। কিন্তু যদি তুমি অনুসরণের কাদা থেকে বেরিয়ে এসে চিন্তা ও দৃষ্টির ব্যবহার করতে, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞাকে পথপ্রদর্শক করতে, এবং কোনো ইজতিহাদভিত্তিক স্মরণীয় কাজ করতে—তাহলে বোঝা যেত, তুমি আসলে কে?

———-

✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *