https://t.me/DrAkramNadwi/2331
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
———
একটি প্রশ্ন:
“যখন আল্লাহ তকদীর নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং সমস্ত কিছুই তাঁর ক্ষমতার হাতে রয়েছে, তাহলে বান্দার কী দোষ? যদি কেউ কাফের হয়, তাহলে তার কুফরির কাজসমূহ নির্ধারিত হয়ে গেছে, এবং অনেক মুসলমানের জন্য শিরক ও বিদআত নির্ধারিত হয়ে আছে। যখন বান্দার সমস্ত বিষয় আল্লাহর হাতে এবং নির্ধারিত, তাহলে বান্দার কী অপরাধ?”
উত্তর:
তকদীরের বিষয়টি ধর্ম ও দর্শনের অন্যতম বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে পড়ে। প্রতিটি যুগে ও অঞ্চলে জ্ঞানী ও চিন্তাবিদরা এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছেন এবং সময় সময় এ নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা করেছেন। বর্তমানে আমার ইচ্ছা নেই এ বিষয়ের ওপর কোনো বিশদ বা বিস্তারিত লেখা পেশ করার। অন্যান্য বহু ব্যস্ততা এতে বাধা হয়ে আছে। যেহেতু এই প্রশ্নটি একজন অত্যন্ত সম্মানিত বন্ধুর পক্ষ থেকে এসেছে, তাই এটিকে আমার অগ্রাধিকারের মধ্যে রেখে প্রয়োজন অনুসারে আলোচনা করছি।
আমরা এই দুনিয়ায় জন্মেছি, কিন্তু আমাদের জন্ম আমাদের পরামর্শ বা ইচ্ছার ফল নয়। আমরা আমাদের পিতামাতাকে নির্বাচন করিনি, আমাদের জন্মস্থল কোন জায়গায় হবে এবং কোন যুগে হবে—এসব নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। আমাদের ভাই-বোন কারা হবে, আমাদের সমসাময়িক কারা হবে, আমাদের মানসিক ও শারীরিক গঠন কেমন হবে—এমন আরও হাজারো বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আল্লাহ তাআলা এই সমস্ত সৃষ্টির কাজ সম্পূর্ণভাবে তাঁর জ্ঞান, তাঁর ক্ষমতা ও তাঁর ইচ্ছা দ্বারা সম্পন্ন করেছেন। এটি তাঁর রবুবিয়তের প্রকাশ। এটিকেই তকদীর বলা হয়।
আল্লাহ আমাদের ভালো ও মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা দিয়েছেন। আমাদেরকে আদেশ ও নিষেধ বোঝার এবং সে অনুযায়ী কাজ করার যোগ্যতা দিয়েছেন। এবং আমাদেরকে নির্বাচন করার স্বাধীনতা দিয়েছেন—আমরা কুফরি করব, শিরক করব, ঈমান আনব, ইসলামের পথে চলব, পাপ ও বিদআতে লিপ্ত হব, ন্যায় ও ইনসাফ করব, জুলুম ও অন্যায় করব, ভালো হব বা মন্দ হব—এ সবই তাঁর উলুহিয়তের প্রকাশ। এটি আদেশের জগৎ, যেখানে মানুষকে মানার ও না মানার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ধর্ম ও শরীয়তের বিস্তারিত বিষয়গুলোর সম্পর্ক এ ক্ষেত্রের সঙ্গে।
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, মানুষের কুফর ও ঈমানে আল্লাহর ক্ষমতার কোনো ভূমিকা নেই? এর উত্তর জানার আগে বুঝে নিন, যদি কোনো মা-বাবা তাদের সন্তানদের প্রতি দয়ালু হন, তাদের ভালোবাসেন, তাদের কল্যাণকামী হন এবং তাদের দেখভাল করেন, তাহলে তাদের জ্ঞান যত বেশি হবে এবং তাদের ক্ষমতা যত বেশি হবে, ততই সন্তানদের জন্য সেটি কল্যাণকর হবে। তারা তত সহজে নিজেদের কল্যাণ অর্জন করতে পারবে এবং ক্ষতিকর বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। তাদের শত্রুর ভয় কমবে, এবং মা-বাবার আশ্রয়ই হবে তাদের সবচেয়ে নিরাপদ ঠাঁই।
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অসীম দয়ালু ও করুণাময়। এই দয়া অর্থহীন হয়ে যেত যদি তাঁর জ্ঞান সীমিত হতো বা তাঁর ক্ষমতা সীমিত হতো। তাহলে আমাদের শত্রুরা আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলত। আমাদের সৌভাগ্য যে, একদিকে আমাদের রব অত্যন্ত দয়ালু, আর অন্যদিকে তাঁর জ্ঞান সীমাহীন এবং তাঁর ক্ষমতা অপরিসীম। কল্যাণ ও অকল্যাণ এবং হেদায়াত ও গোমরাহির ব্যাপারে কেউ তাঁর ইচ্ছা ছাড়া আমাদের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধন করতে পারে না। এজন্য আমাদের শুধুমাত্র তাঁর জ্ঞান ও তাঁর ক্ষমতার ওপর নির্ভর করা উচিত। যখন আমরা তাঁর ওপর ভরসা করব, তখন আমরা শয়তান, নফস ও অন্যান্য শত্রুর ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা থেকে রক্ষা পাব। আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতার অসীমতা আমাদের জন্য রক্ষা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। আমরা একদম সুদৃঢ় পাহাড়ের আশ্রয়ে আছি, যার ওপর নির্ভর করে আমরা সব ভয় থেকে মুক্ত থাকতে পারি।
যখন বান্দার হৃদয়ে আল্লাহর ক্ষমতার এই অনুভূতি থাকবে, তখন সে সহজেই হেদায়াতের পথে চলতে পারবে। তকদীরের উদ্দেশ্য আদেশ ও নিষেধের গুরুত্ব বিলীন করে দেওয়া নয়; বরং এসব আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে সাহায্য চাওয়া এবং তাওয়াক্কুল ও সাহায্য প্রার্থনার পথ অবলম্বন করা। আর এই তাওয়াক্কুল ও সাহায্য প্রার্থনাও আদেশেরই অংশ।
এজন্য একজন মুমিন সর্বদা আল্লাহর আদেশের দিকে লক্ষ্য রাখে:
تقدير كه پابندى احكام
يه مسئله مشكل نهين اے مرد خردمند
اك آن ميں سو بار بدل جاتى ہے تقدير
ہے اس كا مقلد ابهى ناخوش ابهى خورسند
تقدير كے پابند نباتات وجمادات
مومن فقط احكام الہى كا ہے پابند
অনুবাদ : তকদীরের বাধ্যতা হলো আল্লাহর আদেশের বাধ্যতা।
হে বুদ্ধিমান ব্যক্তি, এই বিষয়টি কঠিন নয়।
এক মুহূর্তে শতবার পরিবর্তিত হয় তকদীর,
এখন সে অসন্তুষ্ট, আর এখনই সে সন্তুষ্ট।
তকদীরের বাধ্য সেই উদ্ভিদ ও জড় পদার্থ,
মুমিন কেবল আল্লাহর আদেশের বাধ্য।
——————–
# প্রশ্নোত্তর # আলোচনা
মূল: ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।