https://t.me/DrAkramNadwi/6116
بسم اللّه الرحمن الرحيم
—————–
|| প্রশ্ন:
আমাদের এক আন্তরিক বন্ধু এবং আরবি ও উর্দু ভাষার সাহিত্যিক মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ সিদ্দীকী নাদভী মাদ্দাজিল্লাহু নিম্নোক্ত প্রশ্ন করেছেন:
“সম্মানিত ডক্টর, মুফতী আকরম নদভী ছাহেব, অক্সফোর্ড, আসসালামু আলাইকুম।
যুবসমাজের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: ঘোড়ার মাংস স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালাল ও জায়েয—এটা তো পরিষ্কার; কিন্তু হানাফি ফিকহে তাকে ‘মাকরূহ তাহরিমি’ বলা হয়েছে—এই ফতোয়া একেবারে যুক্তিবহির্ভূত, কারণ ঘোড়া হলো জিহাদের একটি মাধ্যম।
এর একটি তাৎক্ষণিক ও সংক্ষিপ্ত জবাব কাম্য।”
|| উত্তর:
ঘোড়ার মাংস হালাল, এটি খাওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন এবং পরবর্তী ইমাম, ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণের অধিকাংশই এই মত গ্রহণ করেছেন—(রাযিয়াল্লাহু আনহুম।)
তবে হানাফি ও মালিকি মাজহাবের আলেমগণ ঘোড়ার মাংসকে হয় হারাম বলেছেন, অথবা ‘মাকরূহে তাহরিমি’ বলেছেন। তাদের দলীল হলো, আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোড়ার উল্লেখ এভাবে করেছেন:
“وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً”
(সূরা নাহল, আয়াত ৮)
অর্থাৎ: “ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে তোমরা যেন তাদের ওপর চড়ো এবং তাদেরকে শোভা হিসেবে ব্যবহার করো।”
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নেয়ামতের বর্ণনা দিয়েছেন। এতে ঘোড়ায় সওয়ার হওয়া এবং তার শোভা-বৈভবের কথা বলা হয়েছে, তবে খাওয়ার বিষয় কিছু বলা হয়নি।
আর এ-ও বলা হয়ে থাকে যে, ঘোড়া হলো জিহাদের একটি হাতিয়ার।
পরে আসবে যে, এই উভয় দলীলই দুর্বল।
এই কারণেই সালাফ ও খালাফের জামহুর (অধিকাংশ) আলেমদের মতে ঘোড়ার মাংস হালাল—এটাই সঠিক মত।
সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম এবং অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে হযরত আসমা রাযিয়াল্লাহু আনহার থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে একটি ঘোড়া জবাই করেছিলাম এবং তা খেয়েছিলাম।”
এছাড়াও, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার যুদ্ধের সময় গাধার মাংস খেতে নিষেধ করেছিলেন এবং ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।
এই হাদীসও সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে।
সূরা নাহলের ওই আয়াত থেকে ঘোড়ার মাংসকে হারাম বা মাকরূহ বলার দলীল গ্রহণ করা সঠিক নয়।
কারণ, আয়াতে তো ঘোড়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতার দিকটাই বলা হয়েছে—তা হলো, সওয়ারি ও শোভা।
এটা খাওয়ার নিষেধাজ্ঞার দলীল নয়—বিশেষত যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ঘোড়ার মাংস খেয়েছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুমও তা খেয়েছেন।
ঘোড়া জিহাদের হাতিয়ার—এই ভিত্তিতে মাংস খাওয়াকে মাকরূহ বলা খুবই বিস্ময়কর।
হায়! যদি এই বিষয়ে ভেবে দেখা হতো, তাহলে বোঝা যেত—রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো জিহাদের সময়ই তার হালাল হওয়ার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন।
যদি জিহাদের কারণে কোনো কিরাহাত (অপছন্দনীয়তা) থাকত, তাহলে অন্তত খায়বার যুদ্ধে তিনি ঘোড়ার মাংস হালাল হওয়ার ঘোষণা দিতেন না।
ঘোড়ার মাংস তখনই খাওয়া হবে, যখন তা খাওয়া কোনো বড় উপকার লাভে বাঁধা সৃষ্টি করবে না।
কোনো মুজাহিদ অহেতুক ঘোড়ার মাংস খাবে না।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো—জিহাদ শেষ হয়ে গেছে, ঘোড়ায় জিহাদও এখন কেবল ইতিহাস;
কিন্তু ঘোড়ার মাংসের মাকরূহ হওয়া আজও রয়ে গেছে!
অনেক কিছুকে ফিতনার আশঙ্কায় হারাম বলা হয়েছে—ফিতনা চলে গেছে, কিন্তু হারাম থেকে যায়!
কোনো কিছুকে ‘সতর্কতার খাতিরে মাকরূহ’ বলা হলে মানুষের অন্তরে সেটিকে অপবিত্রতার ছাপ ফেলে দেয়।
আর এভাবে মানুষ হালালকে হারাম মনে করার মত গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়—যার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ।
জিহাদ থাকুক বা না থাকুক, ঘোড়া যুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য থাকুক বা না থাকুক—
তবুও হানাফি ঘোড়ার মাংস খাবে না!
আফসোস, এই দীন ফিকহের অভাবের জন্য!
——————–
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।