AkramNadwi

খুফের অর্থ ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/2349
بسم الله الرحمن الرحيم.


———-

|| প্রশ্ন:
আমার কাছে গবেষক ও আলেম ভাই ইরফান নাসরুল ফারুকি আন নদভী এর পক্ষ থেকে একটি প্রশ্ন এসেছে, যেখানে তিনি খুফ শব্দের অর্থ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।

|| উত্তর:
উত্তরের শুরুতেই আমি الحذاء (জুতা) এবং الجورب (মোজা)-এর অর্থ পরিষ্কার করবো, কারণ পরবর্তী বিস্তারিত ব্যাখ্যা বুঝতে এই দুটি শব্দের অর্থ জানা জরুরি।

আলোচনা : الحذاء ও الجورب -এর অর্থ:
এখানে الحذاء বলতে সেই বস্তু বোঝানো হয় যা হাঁটার সময় পা ঢেকে রাখে। এর ব্যবহারকারীকে محتذٍ (জুতা পরিধানকারী) বলা হয়, আর বিপরীত অর্থে বলা হয় الحافي (নির্মোজ বা খালি পায়ে থাকা)। শব্দটির মূল অর্থ পশুর পায়ের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ থেকে উদ্ভূত। আল-জাওহারি তাঁর গ্রন্থ আস-সিহাহ–এ বলেন: “الحذاء হল সেই বস্তু যা উট তার খুফ (খুর)-এর নিচে পায়, এবং ঘোড়া যা তার পায়ের খুর দিয়ে মাড়িয়ে চলে।”
এবং হাদিসে এসেছে: “معها حذاؤها وسقاؤها” (তার সঙ্গে তার জুতা ও পানির পাত্র ছিল)।
(আল জাওরাব) الجورب-এর অর্থ:
(জাওরাব) الجورب বলতে সেই পোশাক বোঝানো হয়, যা জুতা পরার আগে পায়ে মোড়ানো হয়। এটি পা-কে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে, জুতার কঠোরতা থেকে পায়ে আরাম দিতে, অথবা জুতাকে পায়ের ঘাম থেকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহৃত হয়। ইবনে মানজুর তাঁর লিসানুল আরব গ্রন্থে বলেন: “الجورب হল পায়ের আবরণ, এটি ফারসি ভাষার শব্দ (كورب) থেকে আরবিতে গৃহীত হয়েছে, এবং এর বহুবচন হল جواربة। عجمة (ভিনদেশি শব্দ) হওয়ার কারণে হরফ ‘হা’ যোগ করা হয়েছে।”

এটি উর্দুতে “মোজা” নামে পরিচিত।

প্রচলিত ভুল ধারণা:

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলো যে, “খুফ” (الخف) হল এক ধরনের جورب (মোজা), এবং এটি উর্দুতে “চামড়ার মোজা” বলে অনূদিত হয়। তাদের ধারণা, খুফ এবং جورب-এর মধ্যে পার্থক্য শুধু এই যে খুফ চামড়া দিয়ে তৈরি হয়, আর جورب পশম বা অন্য কোনো কাপড় দিয়ে তৈরি হয়।

এটি একটি ভুল ব্যাখ্যা, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহু আলেমকেও বিভ্রান্ত করেছে। আমি আশ্চর্য হয়েছি যে, এই ভুল ধারণা অনেক আরবদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। ধর্মীয় মহলে চামড়ার মোজার প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে, এবং তাঁরা চামড়ার মোজাকে “খুফ” বলে ডাকতে শুরু করেছেন।

এই ভুলের পেছনে মূল কারণ হলো, তাঁরা মাসাহ আলাল খুফফাইনে (খুফের ওপর মাসহ করার রুকসত) গ্রহণ করতে চেয়েছেন, কারণ এটি নবী ﷺ থেকে ব্যাপকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

খুফের প্রকৃত অর্থ:

এই প্রবন্ধে আমরা প্রমাণ করব যে, “খুফ” جورب-এর অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং এটি জুতার একটি প্রকার।

জুতার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। নবী ﷺ-এর যুগে দুই ধরনের জুতা বেশি প্রচলিত ছিল:
১ . نعل (নাআল) – এটি এমন জুতা যা পায়ের গোড়ালির নিচে থাকে এবং পুরো পা ঘিরে রাখে না।
২ . خف (খুফ) – এটি এমন জুতা যা গোড়ালির ওপরে ওঠে এবং পুরো পা ঢেকে রাখে।

আস-সিহাহ গ্রন্থে আল-জাওহারি বলেন:
(খুফ)”الخف বলতে বোঝায় উটের পায়ের খুর, এটি সেই জুতার নাম যা পায়ে পরা হয়, এবং এটি নাআল অপেক্ষা মোটা হয়।”

লিসানুল আরব গ্রন্থে বলা হয়েছে: “خف البعير (উটের খুফ) বলতে বোঝায় উটের পায়ের সেই অংশ, যা মাটিতে পড়ে। আরবরা বলে: ‘এটি উটের খুফ এবং এটি তার খুর।'”

হাদিসে এসেছে:

“لا سبق إلا في خف أو نصل أو حافر”
(প্রতিযোগিতা শুধু তিনটি জিনিসে বৈধ: উটের খুফ, ঘোড়ার খুর, এবং তীরের ফলায়)।

এখানে “خف” দ্বারা উট, “حافر” দ্বারা ঘোড়া, এবং “نصل” দ্বারা তীর বোঝানো হয়েছে।

আর মানুষের خف বলতে পায়ের নিচের অংশকে বোঝানো হয়। ইবনে সিরিন বলেন:
(খুফ)”خف বলতে বোঝানো হয় পায়ের যে অংশ মাটির সাথে সংস্পর্শে আসে।”

হাদিসে মুগিরা রা. বলেন:

“غليظة الخف”
(পায়ের খুফ ছিল পুরু), এখানে “خف” শব্দটি রূপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

|| (খুফ) خف ও جورب-এর পার্থক্য:

(খুফ) خف এবং جورب-এর মধ্যে দুটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে:

১ . জাওরাব (موزَه বা جورب) পরা হয়, কিন্তু সরাসরি মাটিতে পা দেওয়া হয় না।

খুফ পরে কাঁকর, মাটি, নরম-পিচ্ছিল ভূমিতে চলাচল করা যায়। جورب এটি জন্য উপযোগী নয়।

২. خف জুতা, কিন্তু جورب জুতা নয়।

খুফ পরে মানুষ বাইরে হাঁটে।

(জাওরাব) جورب সাধারণত খালি পায়ে পরা হয় বা জুতার নিচে রাখা হয়।

মুসলিম ও আবু দাউদে হজরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত:

“إذا انقطع شسع أحدكم أو من انقطع شسع نعله فلا يمش في نعل واحدة حتى يصلح شسعه، ولا يمش في خف واحد، ولا يأكل بشماله، ولا يحتبي بالثوب الواحد، ولا يلتحف الصماء.”

(যদি তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, তাহলে সেটি ঠিক না করে এক পায়ে জুতা পরে হাঁটবে না, এক পায়ে খুফ পরেও হাঁটবে না, বাম হাতে খাবে না, এক কাপড়ে জড়িয়ে বসবে না, এবং কাপড়ে পুরো শরীর মুড়িয়ে নেবে না।)

এই হাদিসের ভাষা থেকে বোঝা যায় যে, خف (খুফ) পরেই মানুষ রাস্তায় চলাফেরা করে, কিন্তু جورب (মোজা) নিয়ে এমন আলোচনা নেই।

সংক্ষেপে:

খুফ হল এক ধরনের জুতা, যা গোড়ালির ওপরে উঠে এবং মাটিতে চলাফেরার উপযোগী।

(জাওরাব)جورب হল এক ধরনের মোজা, যা জুতার নিচে পরিধান করা হয় এবং এটি দিয়ে হাঁটা যায় না।

খুফ দিয়ে মাসহ করা প্রমাণিত, কিন্তু جورب দিয়ে মাসহ করা নিয়ে মতভেদ আছে।

খুফ ও জাওরাবের পার্থক্য না জানার ফলে অনেকেই “চামড়ার মোজা” কে “খুফ” বলে ভুল করেন, যা সঠিক নয়।

নবী ﷺ এক পায়ে খুফ পরে হাঁটা নিষেধ করেছেন, যেমন নিষেধ করেছেন এক পায়ে নাআল (জুতা) পরে হাঁটা। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, নাআল ও খুফের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

খুফ পরে চলাচলের ব্যাপারে বহু বর্ণনা রয়েছে। ইবনে আবি শাইবা তাঁর আল-মুসান্নাফ গ্রন্থে বর্ণনা করেন:

“আমাদের কাছে জারির ইবন আবদুল হামিদ বর্ণনা করেছেন, তিনি মুগীরা থেকে, তিনি হাম্মাদ থেকে, তিনি বলেন: তাঁরা (সালাফগণ) যদি খুফ পরে থাকতেন, তাহলে ভেজা গোবরের ওপর দ্রুত হেঁটে যেতেন।”

শাফেয়ি রহ. আল-উম গ্রন্থে বলেন:

“যদি খুফ লোবান (এক ধরনের পশমী কাপড়), সাধারণ কাপড়, বা কোনো নরম বস্তু দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে তা খুফের অর্থ বহন করবে না, যতক্ষণ না তা চামড়া, কাঠ, বা অন্য শক্ত কোনো বস্তু দিয়ে জুতার মতো তৈরি করা হয়, যা দিয়ে হাঁটলে তা স্থায়ী থাকে।”

দ্বিতীয় পার্থক্য:

১. جورب (জাওরাব) বা মোজা পরার পর এর ওপরে নাআল (জুতা) বা অন্য কোনো জুতা পরা হয়।
২. خف (খুফ) পরলে এর ওপরে আর কোনো জুতা পরা হয় না।

এটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় মাসাহ(মোজার ওপর ) সংক্রান্ত হাদিসগুলো থেকে।

খুফের ওপর মাসহ করার হাদিসে “নাআল” বা জুতা উল্লেখ নেই।

কিন্তু جورب (জোরাব) এর ওপর মাসহ করার হাদিসগুলোতে “নাআল” (জুতা) উল্লেখ আছে।

প্রমাণ:

তিরমিজি, ইবনে আবি শাইবা ও অন্যান্য গ্রন্থে মুগীরা ইবন শু’বা রা. থেকে বর্ণিত:

“নবী ﷺ ওজু করলেন এবং جورب (মোজা) ও নাআল (জুতা)-এর ওপর মাসহ করলেন।”

আবু ঈসা তিরমিজি বলেন:

“এই হাদিস হাসান সহিহ।”


সাহাবাদের আমল:

ইবনে আবি শাইবা তাঁর আল-মুসান্নাফ গ্রন্থে বর্ণনা করেন:

“জালাস ইবন আমর বলেন: আমি দেখেছি, উমর রা. জুমার দিন ওজু করলেন এবং তাঁর جورب (মোজা) ও নাআল (জুতা)-এর ওপর মাসাহ করলেন।”

ইবরাহিম আন-নাখাঈ বলেন:

“জোরাব ও নাআল মাসহ করার ক্ষেত্রে খুফের মতোই বিবেচিত হবে।”

জালাস থেকে বর্ণিত:

“আমি আলী রা. -কে দেখেছি, তিনি প্রস্রাব করলেন, তারপর ওজু করলেন এবং তাঁর جورب (মোজা) ও نعل (জুতা)-এর ওপর মাসহ করলেন।”

কাব ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত:

“আমি আলী রা. -কে দেখেছি, তিনি প্রস্রাব করলেন, তারপর ওজু করলেন এবং جورب ও نعل-এর ওপর মাসহ করলেন।”

ফুরাত থেকে বর্ণিত:

“আমি সাঈদ ইবন জুবাইর রা. -কে দেখেছি, তিনি ওজু করলেন এবং جورب ও নাআল-এর ওপর মাসাহ করলেন।”


সারসংক্ষেপ:

1. খুফ ও নাআল উভয়ই জুতার অন্তর্ভুক্ত, তাই নবী ﷺ এক পায়ে খুফ বা নাআল পরে হাঁটা নিষেধ করেছেন।

2. খুফ পরে মানুষ সরাসরি হাঁটে, কিন্তু جورب (মোজা) পরে হাঁটতে হলে তার ওপর নাআল (জুতা) পরতে হয়।

3. মাসেহের হাদিসগুলোতে খুফের ওপর মাসহ করার কথা এসেছে, কিন্তু নাআলের ওপর মাসাহ করার কথা নেই।

4. কিন্তু جورب (মোজা)-এর ওপর মাসাহ করার হাদিসগুলোতে نعل (জুতা) উল্লেখ রয়েছে, যা বোঝায় যে, جورب-এর ওপর মাসাহ তখনই করা হয়েছে যখন তার ওপরে নাআল ছিল।

মূল উপসংহার:
➡ (খুফ) خف জুতা, কিন্তু جورب (জোরাব) মোজা, যা জুতার নিচে পরা হয়।
➡ খুফ দিয়ে সরাসরি হাঁটা যায়, কিন্তু جورب পরে হাঁটতে হলে তার ওপরে নাআল পরতে হয়।
➡ খুফ-এর ওপর মাসাহ করার হাদিসগুলোর সাথে নাআলের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু جورب-এর ওপর মাসাহের হাদিসগুলোতে নাআল-এর উল্লেখ পাওয়া যায়।

খুফ ও নাআলের মধ্যে পার্থক্য :

খুফ ও নাআল উভয়ই জুতার অন্তর্ভুক্ত, তবে খুফের কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

নাআল পায়ের গিরার (গোড়ালির) নিচে থাকে,

অথচ খুফ গোড়ালির ওপরে উঠে পুরো পা আবৃত করে রাখে।

সহিহ বুখারি ও মুসলিমে ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী ﷺ-এর কাছে জানতে চাইলেন, “ইহরামধারী কী ধরনের পোশাক পরতে পারবে?”

নবী ﷺ বললেন:
“সে কুর্তা, পাগড়ি, পাজামা, লম্বা টুপি (বরনুস), এবং খুফ পরবে না। তবে কেউ যদি নাআল (জুতা) না পায়, তাহলে সে খুফ পরবে, তবে তা গোড়ালির নিচ থেকে কেটে ফেলবে।”

➡ এই হাদিস স্পষ্টভাবে দেখায় যে, খুফ ও নাআল দুইটি পৃথক জিনিস।
➡ যদি খুফ জোরাবের (মোজার) অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে বলা হতো: ‘খুলে ফেলো’, কিন্তু তা বলা হয়নি।

আরেকটি দলিল:

ইবনে আব্বাস রা. বলেন:

“আমি রাসূল ﷺ-কে খুতবা দিতে শুনেছি, তিনি বললেন: ‘যে ইহরামধারীর ইজার (লুঙ্গি) নেই, সে স্যারওয়াল (পাজামা) পরবে। আর যার কাছে নাআল নেই, সে খুফ পরবে।’” (মুসলিম)

➡ এখানে ইজারের পরিবর্তে স্যারওয়াল অনুমোদিত হয়েছে, কারণ এরা পরস্পরের পরিবর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
➡ ঠিক তেমনই, নাআলের পরিবর্তে খুফের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, খুফ ও নাআল পরস্পরের সমজাতীয়।
➡ যদি খুফ জোরাবের অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে খুফ কাটার নির্দেশ দেওয়ার কোনো অর্থ থাকত না, কারণ সাধারণত খুফের ওপরই জুতা পরা হয় না।


অন্যান্য প্রমাণ যে, খুফ জুতার অন্তর্ভুক্ত:

১. আরব অঞ্চলের আবহাওয়া ও প্রাচীন রীতি

➡ হিজাজ, নজদ, ইয়েমেনসহ গোটা আরব অঞ্চল গরম হওয়ায় সেখানে শীতের অনুভূতি খুব কম থাকত।
➡ সাধারণত তাঁরা কাপড়ের বা উলের মোজা পরতেন না।
➡ তখনকার ভাষায় ‘জোরাব’ শব্দটিও প্রচলিত ছিল না।
➡ সাধারণভাবে তাঁরা নাআল (জুতা) পরতেন, আর দীর্ঘ ভ্রমণে খুফ ব্যবহার করতেন পা রক্ষা করার জন্য।
➡ এ কারণেই মাসাহের হাদিসগুলো সাধারণত সফরের প্রসঙ্গে এসেছে।


২. খালি পায়ে থাকার কথা বললে খুফ ও নাআল দুটোই বাদ দেওয়া হতো

➡ সহিহ মুসলিমে ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত:

“আমরা রাসূল ﷺ-এর সঙ্গে বসে ছিলাম, এমন সময় এক আনসারী সাহাবি এলেন, সালাম দিলেন এবং চলে গেলেন।
নবী ﷺ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আনসারীদের ভাই সা’দ ইবন উবাদাহ কেমন আছেন?’
তিনি বললেন, ‘ভাল আছেন।’
নবী ﷺ বললেন, ‘কে তাঁকে দেখতে যাবে?’
আমরা কয়েকজন সাহাবি তাঁর সঙ্গে রওনা হলাম, তখন আমাদের কারও পায়ে নাআল , খুফ, টুপি এবং কুর্তা কিছুই ছিল না।”

➡ এখানে খালি পায়ে থাকার অর্থ বোঝাতে ‘নাআল ও খুফ পরা ছিল না’—এভাবে বলা হয়েছে।
➡ যদি খুফ জোরাবের মতো হতো, তাহলে শুধু ‘নাআল ছিল না’ বললেই যথেষ্ট হতো।

৩. নামাজে খুফ ও নাআল পরার বৈধতা

➡ আবু দাউদ ও হাকিমের বর্ণনায় শাদ্দাদ ইবন আওস রা. থেকে বর্ণিত:

নবী ﷺ বলেছেন:
“ইহুদিদের বিরোধিতা করো, কারণ তারা নাআল ও খুফ পরে নামাজ পড়ে না।”

➡ এখানে খুফ ও নাআলকে একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
➡ যদি খুফ জোরাবের মতো হতো, তাহলে একে আলাদাভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন হতো না।

৪. যুদ্ধ ও জীবনে খুফ ব্যবহার করা হতো

➡ সাহাবিরা খুফ পরে চলাফেরা করতেন, এবং তা নাপাক হয়ে গেলে মুছে নিতেন, যেমন নাআল মুছে নেওয়া হতো।

ইবনে আবি শাইবা তাঁর আল-মুসান্নাফ গ্রন্থে বর্ণনা করেন:

“যখন ইবরাহিম মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি নিজের নাআল বা খুফে লেগে থাকা ময়লা মুছে ফেলতেন, তারপর মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং নামাজ পড়তেন।”

➡ এটি প্রমাণ করে যে, খুফ ছিল জুতার অন্তর্ভুক্ত, নাআলের মতোই।


৫. মসজিদে প্রবেশের সময় খুফ ও নাআল খোলা হতো

➡ সাহাবিগণ যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন তাঁরা খুফ ও নাআল খুলে বাইরে রাখতেন।
➡ যদি খুফ জোরাবের মতো হতো, তাহলে তাঁরা খুফ খুলতেন না।

ইবনে আবি শাইবা বর্ণনা করেন:

“তা’উস রহ. খুব অপছন্দ করতেন যে, কেউ মসজিদে প্রবেশ করার সময় খুফ বা নাআল উল্টে রাখবে না।”

➡ যদি খুফ জোরাবের মতো হতো, তাহলে তা মসজিদে খোলার প্রয়োজন হতো না।


উপসংহার:

1. খুফ ও নাআল উভয়ই জুতার অন্তর্ভুক্ত।

2. খুফ গোড়ালির ওপরে উঠে পুরো পা ঢেকে রাখে, আর নাআল তা করে না।

3. মসজিদে প্রবেশের সময় খুফ ও নাআল খুলতে হতো, যা জোরাবের (মোজার) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

4. যুদ্ধ, সফর ও সাধারণ জীবনযাপনে সাহাবিরা খুফ ব্যবহার করতেন, যা জোরাবের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।

5. যদি খুফ জোরাবের মতো হতো, তাহলে মসজিদে প্রবেশের সময় তা খোলার প্রয়োজন হতো না।

সারসংক্ষেপ:
➡ (খুফ) خف জুতার অন্তর্ভুক্ত (اردوতে: جوتا)।
➡(জোরাব) جورب মোজার অন্তর্ভুক্ত (উর্দুতে: موزہ)
➡ খুফ সাধারণত সফরে বা দুর্গম পথে পা রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হতো।
➡ মসজিদে প্রবেশের সময় খুফ খুলতে হতো, যেমন নাআল খুলতে হতো।

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبيه الكريم.

——————–

# মাস’আলাহ

লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *