https://t.me/DrAkramNadwi/2888
بسم الله الرحمن الرحيم
❝
—————–
আমার প্রিয় বন্ধু, লন্ডনে বসবাসরত অধ্যাপক আমজাদ শেখ, আমাকে আল্লাহ তাআলার এই বাণীর অর্থ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন: “وألقينا على كرسيه جسدا” অর্থ- আমরা তাঁর সিংহাসনের ওপর একটি দেহ ফেলেছিলাম”।
|| উত্তর:
আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আর নিশ্চয়ই আমরা সুলায়মানকে পরীক্ষা করেছি এবং তাঁর সিংহাসনের ওপর একটি দেহ রেখেছিলাম। এরপর তিনি ফিরে এসেছিলেন।” (সূরা সাদ: ৩৪)।
আমি বলি: এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরের বইগুলোতে অনেক মিথ্যা, কল্পকাহিনি এবং অযথা কথা লেখা হয়েছে, যা নবীদের পবিত্রতা এবং নিষ্পাপতাকে অস্বীকার করে। এগুলো সুলায়মান (আঃ)-এর পুরো রাজত্বকে যাদু ও মন্ত্রের সাথে যুক্ত করেছে, যা থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় চাই। আমি এগুলো উদ্ধৃত করতে লজ্জা পাই, যেন আমার ওপর নবী করিম (সাঃ)-এর এই কথাটি প্রযোজ্য না হয়: “একজন ব্যক্তির জন্য এতটাই মিথ্যা যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই প্রচার করে।”
আমি বলি: আয়াতটির প্রেক্ষাপট থেকে স্পষ্ট যে, এটি সুলায়মান (আঃ)-এর আরেকটি তওবা ও ফিরে আসার ঘটনা বর্ণনা করে। এটি আগের আয়াতের ব্যাখ্যারই ধারাবাহিকতা, যেখানে বলা হয়েছে: “অতঃপর তিনি সামনের পা এবং ঘাড়গুলো স্পর্শ করতে লাগলেন।”
জেনে রাখুন, আল্লাহ তাআলা কখনো তাঁর নেক বান্দাদের কোনো পাপের কারণে নয় বরং পরীক্ষার জন্য পরীক্ষায় ফেলেন, যেন তারা আল্লাহর প্রতি আরো বেশি ফিরে আসেন এবং তাঁর নৈকট্য অর্জন করেন। এ ধরনের পরীক্ষা আল্লাহর নবী এবং অন্যান্য নেক বান্দাদের জন্য একটি সাধারণ নিয়ম।
ইমাম তিরমিজি, দারিমি, নাসাঈ (আল-কুবরা), ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান এবং হাকিম আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর সূত্রে হাদিসে উল্লেখ করেছেন: নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “সর্বাধিক পরীক্ষা হয় নবীদের ওপর, এরপর যে বেশি উত্তম, তার ওপর পরীক্ষা হয়।”
এখানে আল্লাহ তাআলা সুলায়মান (আঃ)-এর জীবনের দুটি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি ছিল নিয়ামতের মধ্যে, যেখানে তিনি কৃতজ্ঞ ছিলেন। দ্বিতীয়টি ছিল কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে, যেখানে তিনি ধৈর্যধারণ করেছিলেন। উভয় অবস্থাতেই তিনি আল্লাহর দিকে ফিরে আসতেন।
এই কঠিন পরীক্ষার ঘটনা ছিল এই যে, সুলায়মান (আঃ)-এর রাজত্ব ছিল বিশাল। কিন্তু শত্রুরা একত্রিত হয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায় এবং তাঁর বিভিন্ন শহর ও গ্রাম দখল করে। ফলস্বরূপ, তাঁর হাতে কেবল ফিলিস্তিনের একটি ছোট অংশ অবশিষ্ট ছিল। তিনি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন এবং এমন দুর্বল অবস্থায় পৌঁছান যা তাঁকে কার্যত অক্ষম করে তোলে।
এই দুর্বলতাকে কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে এইভাবে: “আমরা তাঁর সিংহাসনের ওপর একটি দেহ রেখেছিলাম।” অর্থাৎ তিনি তাঁর সিংহাসনে ছিলেন, কিন্তু এমন দুর্বল অবস্থায় যে, তিনি যেন প্রাণহীন একটি দেহ।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি তাঁর তাফসিরে বলেছেন: “জাসাদ বলতে বোঝানো হয়েছে তাঁর চরম দুর্বলতা। আরবরা দুর্বল ব্যক্তিকে বর্ণনা করতে বলে: ‘সে হলো ওদমের (وضم) বা শুকনো কাঠামোর ওপর মাংস বা আত্মাহীন দেহ।’”
আয়াতের শেষ অংশে বলা হয়েছে: “এরপর তিনি ফিরে এলেন।” অর্থাৎ সুলায়মান (আঃ) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হননি, বরং ধৈর্যসহকারে তাঁর প্রতি ফিরে এসেছিলেন এবং ক্ষমা চেয়েছিলেন।
এরপর তিনি আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করেছিলেন: “হে আমার প্রভু! আমাকে এমন একটি রাজত্ব দান করুন যা আমার পর কারো জন্য প্রযোজ্য হবে না।” এই দোয়ার বিস্তারিত ব্যাখ্যা আগের একটি প্রবন্ধে করা হয়েছে।
———-
# তাফসির
লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।