https://t.me/DrAkramNadwi/2206
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
———-
আল্লাহ তাআলা তাঁর মহাগ্রন্থে বলেন—
“যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার মতো, যা (নিজের জন্য) ঘর তৈরি করে। অথচ নিশ্চয়ই ঘরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল হলো মাকড়সার ঘর—যদি তারা জানত!” (সূরা আল-আনকাবুত: আয়াত ৪১)
তাফসিরে ইমাম তাবারি
ইমাম আবু জাফর আত-তাবারি (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—
“যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তি ও দেবতাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য ও উপকারের আশা করে, তাদের দুর্বল কৌশল, মন্দ পথপ্রণালী ও আত্মবিধ্বংসী সিদ্ধান্তের দৃষ্টান্ত মাকড়সার মতো, যা অত্যন্ত দুর্বল ও অক্ষম।”
তিনি ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন—
“এটি একটি দৃষ্টান্ত, যা আল্লাহ তাদের জন্য দিয়েছেন, যারা তাঁর পরিবর্তে অন্যের ইবাদত করে। তাদের অবস্থা মাকড়সার ঘরের মতো।”
কাতাদাহ (রহ.) বলেন—
“এটি আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের জন্য উদাহরণ দিয়েছেন। তাদের উপাস্য, যাকে তারা আল্লাহ ব্যতীত ডাকে, সে মাকড়সার ঘরের মতোই দুর্বল ও অকার্যকর, যা তাকে কোনো উপকার দিতে পারে না।”
ইবনুজ যাইদ বলেন—
“এটি এমন এক দৃষ্টান্ত, যা আল্লাহ দিয়েছেন। তাদের অভিভাবকরা তাদের কোনো উপকার করতে পারে না, যেমন মাকড়সার ঘর তাকে সুরক্ষা দিতে পারে না।”
তাবারি (রহ.) বলেন—
“যদি এই লোকেরা, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে অভিভাবক বানিয়েছে, জানত যে তাদের উপাস্যদের উপকার করার ক্ষমতা মাকড়সার ঘরের মতোই তুচ্ছ, তবে তারা তা গ্রহণ করত না। কিন্তু তারা এ বিষয়ে অজ্ঞ, তাই তারা ভাবে যে, এসব উপাস্য তাদের উপকার করবে এবং আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছাবে।” (তাফসির তাবারি সমাপ্ত)
আল্লাহ কেন শিরককে মাকড়সার ঘরের সাথে তুলনা করেছেন?
আল্লাহ কেন মাকড়সার ঘরকে সবচেয়ে দুর্বল ঘর বলেছেন? কেউ কেউ মনে করে যে, মাকড়সার তৈরি সূক্ষ্ম সুতা প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে দুর্বল নয়, বরং এটি অত্যন্ত শক্তিশালী।
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের মাকড়সার ঘরকে অন্যান্য প্রাণীদের ঘরের সাথে তুলনা করতে হবে।
মাকড়সার ঘর হল একটি সুসজ্জিত জালের মতো, যা সাদা ও চকচকে সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে তৈরি। এটি মাকড়সার দেহের পিছনের অংশ থেকে নির্গত এক বিশেষ পদার্থ দ্বারা গঠিত। অন্য প্রাণীরা তাদের ঘর বাইরের উপাদান দিয়ে তৈরি করে, কিন্তু মাকড়সার ঘর তৈরি হয় তার নিজস্ব শরীর থেকে নির্গত উপাদান দিয়ে।
এটি এমন একটি ঘর, যা সামান্যতম শক্তিতেই মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়।
দুটি ধরণের মতবাদ
➊ প্রথম মতবাদ: যা বাহ্যিক বাস্তবতাভিত্তিক, প্রকৃতি দ্বারা উপলব্ধ, ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রমাণিত এবং বুদ্ধি দ্বারা যাচাই করা যায়। এটি ব্যক্তিগত চাহিদা বা প্রবৃত্তি দ্বারা বিকৃত হয় না।
➋ দ্বিতীয় মতবাদ: যা মানুষের আত্মা থেকে উদ্ভূত হয়, বাস্তব জগতের কোনো প্রমাণ নেই, প্রকৃতি তা প্রত্যাখ্যান করে, ইন্দ্রিয় তা মিথ্যা বলে, সুস্থ বুদ্ধি তা অবিশ্বাস করে।
এই দ্বিতীয় মতবাদ কেবল ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও প্রবৃত্তির উপর নির্ভরশীল। শিরক, কুফর, বিদআত এবং সমস্ত ভ্রান্ত বিশ্বাস এ ধরনের মতবাদের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর পক্ষে কোনো যুক্তি নেই, আল্লাহ এগুলো সম্পর্কে কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। এগুলো কেবল মানুষের অজ্ঞতা ও মনের অন্ধকার থেকে জন্ম নেয়।
তবে মানুষ এগুলোকে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে, যাতে অন্যরা আকৃষ্ট হয়—যেমন মাকড়সা তার জালকে সুন্দরভাবে তৈরি করে। অথচ তার এই ঘরই সবচেয়ে দুর্বল।
ঠিক একইভাবে, মুশরিকদের চিন্তাভাবনা ও মতবাদ চমকপ্রদ মনে হলেও তা বাস্তবে ভঙ্গুর, অস্থিতিশীল ও অসার।
আল্লাহর সত্যের বিজয়
আল্লাহ তাআলা কতই না সুন্দর বলেছেন—
“বলুন, সত্য এসেছে, আর মিথ্যা বিলীন হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলীন হওয়ারই ছিল।” (সূরা আল-ইসরা: আয়াত ৮১)
—————-
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।