https://t.me/DrAkramNadwi/5878
بسم الله الرحمن الرحيم.
————————-
|| প্রশ্ন:
আমার একজন সাবালিকা ছাত্রী, যিনি ফ্রান্স থেকে আমাকে লিখেছেন, তাঁর নাম হাজর বু আফিফ। তিনি তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত এবং এক জ্ঞানী ও সম্মানিত পরিবারের সদস্য।
তিনি লিখেছেন:
আসসালামু আলাইকুম,
সম্মানিত উস্তাদ,
ইনশাআল্লাহ আপনি ভালো ও সুস্থ আছেন। আমার একটি প্রশ্ন আছে:
কেন আমাদের দুই নেতা আবু বকর ও উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশে দাফন হতে চেয়েছিলেন?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন:
“যে দিন তোমরা তা (কিয়ামত) দেখবে, সে দিন প্রতিটি দুধপানকারী নারী তার দুধপানরত শিশুকে ভুলে যাবে” (সূরা হাজ্জ: ২)।
এর অর্থ হলো, সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ ব্যাপারে এতই ব্যস্ত থাকবে যে অন্যের খোঁজ নেওয়ার অবসর পাবে না।
তাহলে কেন অনেক মানুষ তাদের পরিবার যেমন পিতা-মাতা বা সন্তানদের পাশে দাফন হতে চান?
এতে তাদের কী উপকার হবে?
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
|| উত্তর:
এই প্রশ্ন দুটি অংশে বিভক্ত। আমি উভয় অংশের উত্তর পৃথক
কেন আমাদের নেতা আবু বকর ও উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশে দাফন হতে চেয়েছিলেন?
আমাদের নেতা আবু বকর আস-সিদ্দীক ও উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশে দাফন হতে চেয়েছিলেন, এটি তাঁদের গভীর ভালোবাসার প্রকাশ। তাঁরা দুনিয়াতে যেমন তাঁর সাহচর্য লাভ করেছিলেন, তেমনি আখিরাতেও তাঁর সান্নিধ্য লাভের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, মৃত্যুর পরও তাঁরা তাঁর কাছেই থাকবেন এবং তাঁর সান্নিধ্যের মর্যাদা লাভ করবেন।
কারণ, তাঁরা জীবদ্দশায় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সর্বাধিক ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁরা তাঁর দাওয়াত ও জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁর সাথে হিজরত করেছিলেন এবং ইসলাম প্রচারে তাঁর সহায়ক ছিলেন। তাঁদের জীবদ্দশায় যেমন তাঁর কাছে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল, মৃত্যুর পরেও তাঁরা তাঁর সান্নিধ্য লাভ করতে চেয়েছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাঁদের পরে আসা মুসলিমগণও তাঁদের এই অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছেন—জীবিত থাকা অবস্থায় যেমন, মৃত্যুর পরও তেমন। (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)।
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) একবার স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তিনটি চাঁদ তাঁর ঘরে এসে পড়েছে। তিনি যখন এই স্বপ্ন তাঁর পিতা আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে বর্ণনা করলেন—যিনি স্বপ্ন ব্যাখ্যা করতে পারতেন—তখন তিনি মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। কিন্তু যখন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইন্তেকাল করলেন এবং তাঁকে আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর ঘরে দাফন করা হলো, তখন আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন,
“হে আয়িশা! এই হলো তোমার তিনটি চাঁদের প্রথম চাঁদ!”
এরপর আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যুর সময় আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-কে অসিয়ত করেন যে, তাঁকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশে দাফন করা হোক। ফলে তাঁকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাঁধের কাছে দাফন করা হয়।
ইবন সা‘দ তাঁর সনদে উরওয়া ও কাসিম ইবন মুহাম্মাদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-কে অসিয়ত করেছিলেন যেন তাঁকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশে দাফন করা হয়। এই রেওয়ায়েত অন্যরাও বর্ণনা করেছেন।
আর উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) যখন মৃত্যুপথযাত্রী হলেন, তখন তিনি আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে অনুমতি চাইলেন যেন তাঁকে তাঁর দুই সঙ্গীর পাশে দাফন করা হয়।
সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন:
“আয়িশা উম্মুল মুমিনীন-এর কাছে যাও এবং বলো: উমর তোমাকে সালাম জানাচ্ছে, তবে ‘আমীরুল মুমিনীন’ বলো না, কারণ আজ আমি আর মুমিনদের আমির নই। বলো, উমর ইবনুল খাত্তাব তাঁর দুই সঙ্গীর পাশে দাফনের অনুমতি চায়।”
যখন এই বার্তা পৌঁছানো হলো, তখন আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বসে কাঁদছিলেন। এরপর তিনি বললেন:
“আমি আসলে এটিকে আমার নিজের জন্য সংরক্ষণ করেছিলাম, কিন্তু আজ আমি নিজের ওপর তাঁদেরকে প্রাধান্য দেব।”
এরপর যখন উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যু হলো, তখন আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে গিয়ে বললেন:
“উমর ইবনুল খাত্তাব দাফনের অনুমতি চাচ্ছেন।”
তখন আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বললেন:
“তাঁকে নিয়ে এসো এবং এখানে দাফন করো।”
অতঃপর তাঁকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশে দাফন করা হলো।
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, তাঁরা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কতটা ভালোবাসতেন এবং মৃত্যুর পরও তাঁর সান্নিধ্য কামনা করতেন। এটি তাঁদের ইসলামিক মর্যাদারও সাক্ষ্য বহন করে, যার কারণে তাঁরা শ্রেষ্ঠ মানব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশেই চিরশয্যা গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছেন।
কেন অনেক মানুষ চান যে তারা তাদের পরিবার—পিতা-মাতা বা সন্তানদের—কাছেই দাফন হোন? এবং এতে তাদের কোনো উপকার হয় কি?
অনেক মানুষ চান যে তারা তাদের পিতা-মাতা ও সন্তানদের পাশে দাফন হোন, কারণ পার্থিব জীবনে যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য তাদের মধ্যে ছিল, তা-ই তাদের এই ইচ্ছার মূল কারণ। মানুষ স্বভাবতই তার প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসে, এমনকি মৃত্যুর পরও। পারিবারিক কবরস্থানগুলোর নিকটতা একধরনের সান্ত্বনা ও প্রশান্তির অনুভূতি এনে দেয় এবং পারিবারিক সম্পর্কের স্বাভাবিক সম্প্রসারণকে প্রতিফলিত করে, যা জীবনের পাশাপাশি মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে।
কিন্তু উপকারের দিক থেকে, স্থান মরে যাওয়া ব্যক্তির ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। প্রকৃত উপকার সে-ই পায়, যে জীবনে সৎ কাজ করেছে। তবে কিছু আলেম মর্যাদাপূর্ণ স্থানে দাফন করাকে এবং নেককার লোকদের কবরের নিকটে দাফনকে বরকত ও সুপারিশ লাভের আশায় পছন্দনীয় বলে মনে করেন। তাছাড়া, পারিবারিক কবরস্থানগুলোর একত্রে থাকা জীবিতদের জন্য তাদের পূর্বপুরুষদের সহজে জিয়ারত করার সুযোগ করে দেয় এবং তাদের জন্য দোয়া করাকে সহজ করে তোলে, যা মৃতদের জন্য উপকারী হতে পারে, কারণ এতে জীবিতদের মধ্যে তাদের জন্য ইস্তিগফার ও সদকা করার অনুপ্রেরণা জাগ্রত হয়।
ইমাম নববী (রহ.) মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেছেন যে, তিনি সহীহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন—
“নিশ্চয়ই মূসা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করেছিলেন যেন তিনি তাকে পবিত্র ভূমির নিকটে, একটি পাথর নিক্ষেপের দূরত্বে পৌঁছে দেন। যদি আমি সেখানে থাকতাম, তবে আমি তোমাদের তার কবর দেখিয়ে দিতাম, যা লাল টিলার পাশে রাস্তার ধারে অবস্থিত।”
তিনি বলেন— “তার পবিত্র ভূমির নিকটে আসার আবেদন এর মর্যাদার কারণে ছিল, এবং কারণ সেখানে অনেক নবী ও নেককার ব্যক্তির কবর রয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, মর্যাদাপূর্ণ স্থানগুলোতে এবং নেককার ব্যক্তিদের পাশে দাফন করা মুস্তাহাব।”
কিছু বর্ণনায় এসেছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—
“তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে সৎ ব্যক্তিদের মাঝে দাফন করো, কারণ মৃত ব্যক্তি খারাপ প্রতিবেশীর কারণে কষ্ট পায়, যেমন জীবিত ব্যক্তি খারাপ প্রতিবেশীর কারণে কষ্ট পায়।”
এই হাদিসটি আবু নুয়াইম বর্ণনা করেছেন, তবে আল-মুনাওয়ী এটিকে দুর্বল বলেছেন। আল-কারতুবী তার গ্রন্থ আত-তাযকিরা-তে এ সম্পর্কে কয়েকটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, আলেমগণ এটি পছন্দনীয় মনে করেন।
সঠিক কথা হলো, যা একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর উপকার করে, তা হলো তার নেক কাজ, তার পরিবারের ও ভালোবাসার মানুষদের দোয়া, কবরের অবস্থান যেখানেই হোক না কেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—
“যখন আদম সন্তানের মৃত্যু হয়, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ছাড়া—এক. সদকায়ে জারিয়াহ্, দুই. এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায়, তিন. নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।”
এছাড়া, সাহাবা, তাবেয়ীন এবং সাধারণ নেককার ব্যক্তিদের কবরসমূহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে, যার অনেকগুলো অজানা অবস্থায় আছে। আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং আমাদের প্রতি রহম করুন।
—————————
# প্রশ্নোত্তর # আলোচনা
মূল :
ড. মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।