https://t.me/DrAkramNadwi/2230
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
———-
ঈমান, ইসলাম, সৎকর্ম, তাকওয়া, ইহসান, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, সাধুতা, বিনয়, তুষ্টি, সত্যবাদিতা, আমানতদারি, সহানুভূতি ও সৎকর্মে পারস্পরিক সহযোগিতা—এগুলোই প্রকৃত মূল্যবোধ, যেগুলো সম্পর্কে কিয়ামতে প্রশ্ন করা হবে। এসব গুণাবলির ভিত্তিতেই জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা হবে। আমাদের দুনিয়ার জীবন কেবল এই জন্যই দেওয়া হয়েছে, যাতে আমরা এসব গুণ নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারি এবং এগুলোতে উন্নতি লাভ করতে পারি।
এই গুণাবলির সঠিক দিশা কুরআন ও সুন্নাহে রয়েছে। এসবের জ্ঞান অর্জনের জন্য আমরা দারুল উলূম দেওবন্দ, মাযাহিরুল উলূম সহারানপুর, নদওয়াতুল উলামা লখনউ, মাদরাসাতুল ইসলাহ স্যারায়ে মীর, জামিয়া তুল ফালাহ আজমগড়, জামিয়া সালাফিয়া বানারস ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই এবং কিছু সময় অধ্যয়ন করে আলিম, ফাযিল প্রভৃতি সনদ অর্জন করি।
মাদরাসায় গিয়ে আলিম ও ফাযিলের সনদ অর্জন করা একটি মাধ্যম, আর উপরোক্ত গুণাবলির অর্জন করা মূল লক্ষ্য। মাধ্যমের গুরুত্ব তখনই থাকে, যখন এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়। যদি কেউ দোকান খোলে কিন্তু কিছুই উপার্জন না করে, ব্যায়াম শুরু করে কিন্তু স্বাস্থ্য ঠিক না রাখে, পথে চলতে থাকে কিন্তু গন্তব্যের পরোয়া না করে—তাহলে কেউই তার এই কাজকে প্রশংসনীয় মনে করবে না।
যদি কেউ কাসেমি, মাযাহিরি, নদভী, ইসলাহী, ফালাহি বা সালাফি পরিচয় ধারণ করেও তাকওয়া, ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার গুণ অর্জন না করে এবং তার ভাষা দ্বারা মানুষ কষ্ট পায়, তাহলে কিয়ামতের দিন তার এসব পরিচয় কোনো কাজে আসবে না। তার কাসেমি বা নদভী হওয়া তার জন্য মোটেও উপকারী হবে না।
অপরদিকে, যদি কেউ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সনদপ্রাপ্ত না হয়, কিন্তু তার অন্তরে আল্লাহভীতি থাকে, সুন্নাহর অনুসরণ করে, সৎ কাজে অগ্রগামী হয় এবং সবার সঙ্গে বিনয়ের সাথে আচরণ করে, তাহলে কিয়ামতের দিনে তার জন্য প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া সহজ হবে। তার রব তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাবেন।
সুতরাং আমাদের উচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসার পরিচয় নিয়ে অতিরঞ্জিত গর্ব না করা, মাধ্যম ও লক্ষ্যনের পার্থক্য বোঝা এবং সমস্ত মনোযোগ সেই গুণাবলির অর্জনে নিবিষ্ট করা, যেগুলো কিয়ামতের দিন আমাদের কাজে আসবে। এসব গুণাবলির শিক্ষা দানের জন্যই আসমানি কিতাবসমূহ নাযিল হয়েছে, নবীগণ প্রেরিত হয়েছেন এবং আমাদের জীবন দান করা হয়েছে।
মাদরাসার পরিচয় ঠিক জন্মভূমি ও বংশগত পরিচয়ের মতো। এগুলো শুধু পরিচিতি ও চেনার মাধ্যম মাত্র, এর মাধ্যমে কেউ কোনো শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে না, কেউ আল্লাহর দরবারে অধিক ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় না, কিংবা এর মাধ্যমে জান্নাতের উপযুক্ত হয়ে যায় না।
বাস্তবতা হলো, এসব পরিচয়ের ওপর গর্ব করা জাহেলি মানসিকতার লক্ষণ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বংশগত গর্বের নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন: “এটি পরিত্যাগ করো, কেননা এটি এক অপবিত্র স্বভাব।”
সুবিবেচক তারাই, যারা মাধ্যম ও লক্ষ্যনের পার্থক্য বোঝে এবং তা জীবনে বাস্তবায়ন করে। তারা মাদরাসা থেকে জ্ঞান অর্জন করে, কিন্তু এটাকেই যথেষ্ট মনে করে না; বরং প্রকৃত গুণাবলির অর্জনকেই জীবনের লক্ষ্য বানায়।
আল্লাহ আমাদের সৎ ও পরহেজগার বানান।
(আমিন)
——————–
মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।