AkramNadwi

কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করা ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/5763

بسم الله الرحمن الرحيم.

|| প্রশ্ন:
মাওলানা জামাল আহমদ নদভী, রুকনে শূরা, দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামা, নিম্নোক্ত প্রশ্ন পাঠিয়েছেন:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
আশা করি হুজুরের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়ে আপনার মতামত কী ? আহলে হাদিসের আলেমগণ তো অনুমতি দিয়ে থাকেন। যদি কাপড়ের মোজা মোটা হয়, তবে কি মাসাহ করার সুযোগ আছে, নাকি নেই? বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আশা করি আপনি এ বিষয়ে কষ্ট স্বীকার করবেন।
আপনার ছাত্র, জামাল আহমদ নদভী, মউ।

|| উত্তর:
মোজাকে আরবিতে “জাওরব” বলা হয়, যা ফারসি ভাষা থেকে আরবিতে এসেছে। ফারসিতে এর মূল ছিল “গোরে পা,” অর্থাৎ পায়ের কবর। পা ঢাকতে এটি সুতো বা পশম দিয়ে তৈরি করা হতো। অর্থাৎ মোজা মূলত কাপড়েরই হতো, চামড়ার নয়। কিছু প্রাচীন সভ্যতায় চামড়া দিয়ে পা ঢাকার প্রচলন দেখা যায়, কিন্তু চামড়ার মোজা কখনো জনপ্রিয়তা পায়নি।
আরবদের মধ্যে মোজার প্রচলনই ছিল না। এ কারণেই এর জন্য আরবিতে কোনো শব্দ ছিল না। “জাওরব,” যেমনটি বলা হয়েছে, ফারসি থেকে নেওয়া হয়েছে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ জীবনের সময় এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের যুগে জাওরব ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
উপমহাদেশে সাধারণত ধারণা করা হয়, আরবদের মধ্যে চামড়ার মোজা প্রচলিত ছিল, যাকে “খুফ,” বহুবচনে “খুফাইন” বলা হয়। এ ধারণা ভুল। “খুফ” হলো একধরনের জুতা, যা গোড়ালি ঢেকে দিত। এ বিষয়ে আমার একটি প্রবন্ধে বিস্তারিত গবেষণা রয়েছে, যার
এই ফতোয়ায় মোজা শব্দটি কেবল কাপড়ের মোজা, অর্থাৎ জাওরবের জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে। উপমহাদেশে চামড়ার মোজার প্রচলন মাসাহ করার অনুমতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। বলা হয়, প্রয়োজনীয়তা উদ্ভাবনের জন্ম দেয়। তেমনি, প্রয়োজন ও অভাব হুকুমের সহজীকরণের ভিত্তি। ভারতে প্রয়োজন ও অভাব ছাড়াই, শুধুমাত্র হুকুম সহজ করার উদ্দেশ্যে চামড়ার মোজা পরা হচ্ছে। অর্থাৎ মাসাহ করার অজুহাত না থাকলে মানুষ চামড়ার মোজা পরত না; বরং বুদ্ধিমান মানুষের মতো কাপড়ের মোজাই পরত।

এই ভূমিকার পর আপনার প্রশ্নের উত্তর নিম্নে প্রদান করা হলো:
যখন আমি ইংল্যান্ডে আসি, তখন শুরুতে মোজার (জাওরব) উপর মাসাহ করার ব্যাপারে মতামত দিইনি, বরং মানুষকে এটি থেকে বিরত রাখতাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, জনসমাগমস্থলে ওযু করার সময় মানুষদের জন্য পা ধোয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় ভ্রমণের সময় এমনকি স্থায়ী অবস্থানেও তাদের নামাজ ছুটে যায়। এরপর আমি এই বিষয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করলাম, বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করলাম এবং মোজার উপর মাসাহ করার বৈধতার ফতোয়া দিলাম। অনেক মানুষ স্বীকার করেছে যে আমার ফতোয়ার কারণে তাদের নামাজে নিয়মিত হওয়া সহজ হয়েছে, বিশেষত অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় ও জনসমাগমস্থলে অবস্থানকালীন সময়ে। তেমনি, যখন তারা ভ্রমণ করছে বা বিমানে রয়েছে, তখনও এটি তাদের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে।

আমার দলিল হলো সেই প্রসিদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য হাদিসসমূহ, যেগুলো খুফাইন (চামড়ার জুতা) এর উপর মাসাহ করার বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। এসব হাদিসের কিছু সহীহ বুখারি ও মুসলিমেও রয়েছে। যদি কেউ আপত্তি করে যে খুফ এবং জাওরবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, তবে এর উত্তরে আমি বলব: হ্যাঁ, পার্থক্য রয়েছে, তবে এই পার্থক্য হুকুমকে প্রভাবিত করে না। এই দাবি দুর্বল যে হুকুমের ভিত্তি খুফের চামড়ার উপরে। সঠিক হলো, হুকুমের ভিত্তি হলো এটি পা ঢেকে দেয় কি না। এবং এই বৈশিষ্ট্যে খুফ এবং জাওরব উভয়ই সমান। যেহেতু উভয় সমান, সেহেতু হুকুমেও সমান হবে। একজাতীয় বিষয়ে পার্থক্য করা এবং বিভিন্ন বিষয়কে এক মর্যাদায় রাখা বুদ্ধির বিপরীত।

সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর মধ্যে হযরত আলী ইবনে আবু তালিব, ইবনে মাসউদ, ইবনে উমর, বারা ইবনে আযিব, আনাস ইবনে মালিক, আবু উমামা, সাহল ইবনে সা’দ এবং আমর ইবনে হুরাইস রাদিয়াল্লাহু আনহুম মোজার উপর মাসাহ করেছেন। এবং এই বিষয়টি বর্ণিত আছে যে, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব ও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমও এটি করেছেন। সাহাবাদের মধ্যে কেউ এ বিষয়ে আপত্তি করেননি। একে “ইজমায়ে সুকুতি” বলা হয়, যা অনেক ফকিহদের নিকট প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

আলেমদের একদল সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেন। অপর একদল এই শব্দ ব্যবহার পছন্দ করেন না, বরং তারা বলেন, সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মানদণ্ডের উপর পূর্ণমাত্রায় ছিলেন। এই দ্বিতীয় মত আমার সম্মানিত শিক্ষক মাওলানা শাহবাজ রহ.

এর। কোনো এক সময় এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখব। যাই হোক, যে অভিব্যক্তিই গ্রহণ করা হোক না কেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যদি কুরআন ও সুন্নাতে কোনো হুকুম স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকে, তাহলে সাহাবায়ে কেরামের মতামত পরবর্তী প্রজন্মের মতামতের উপর প্রাধান্য পাবে, বিশেষত সেই সময়ে, যখন তাদের মধ্যে এই বিষয়ে কোনো মতভেদ বর্ণিত নেই।

সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর পরে তাবেয়ীন এবং ইমামদের মধ্যেও বহু আলেম মোজার (জাওরব) উপর মাসাহ করার পক্ষে ছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন:
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব, নাফি মাওলা ইবনে উমর, আতা ইবনে আবি রাবাহ, সাঈদ ইবনে জুবাইর, ইবরাহিম নাখাই, আ’মাশ, খুলাস ইবনে আমর, সুফিয়ান সাওরি, আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ ইবনে হাসান, হাসান ইবনে হাই, শাফেয়ী, আবু সাওর, আহমদ ইবনে হাম্বল, ইসহাক ইবনে রাহুওয়াইহ, দাউদ ইবনে আলি এবং অন্যান্য আলেমরা রাহিমাহুমুল্লাহ।

যদি বলা হয় যে তাদের মধ্যে কিছু আলেম শর্ত রেখেছেন যে মোজাগুলো পুরু হতে হবে, কিংবা পানি যেন এর মধ্য দিয়ে না চুইয়ে পড়ে, অথবা এগুলো যেন কোনো বাঁধা ছাড়াই নিজেদের স্থানে স্থির থাকতে পারে, তবে এর উত্তরে বলা হবে যে, এটি শুধুমাত্র একটি গৌণ পার্থক্য, যা হুকুমের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।

নকল করা হয়েছে যে ইমাম আবু হানিফা রহ. জীবনের শেষ দিকে মোজার উপর মাসাহ করার মতামতে পৌঁছেছিলেন। ইমাম তিরমিজি তার “জামে” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: সালেহ ইবনে মুহাম্মদ তিরমিজি বলেছেন, আমি আবু মোকাতিল সামারকন্দি থেকে শুনেছি, তিনি বলেন: “আমি সেই অসুস্থতার সময় ইমাম আবু হানিফার কাছে গিয়েছিলাম, যে অসুস্থতায় তিনি ইন্তেকাল করেন। আমি দেখলাম তিনি ওযু করলেন এবং জাওরবের উপর মাসাহ করলেন, এবং বললেন: আজ আমি এমন কাজ করলাম, যা আগে করিনি।” এই ঘটনাটি “বাদায়েউস সানায়ে” এবং হানাফি মাজহাবের অন্যান্য গ্রন্থেও বর্ণিত হয়েছে।

আমি মোজার উপর মাসাহ করার বৈধতা সম্পর্কে আরবি ভাষায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। এর সমর্থনে একজন প্রসিদ্ধ শাইখ, আলেম, ফকীহ এবং মুফাসসির মজদ ইবনে আহমদ মাক্কি আমাকে লিখলেন: “আমি আপনার সাথে একমত।” আরও লিখলেন: “আমি শাইখ আনাস ইবনে মুস্তাফা আজ-জারকার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তার সম্মানিত পিতা শাইখ মুস্তাফা আজ-জারকার রহ. (যিনি একজন প্রসিদ্ধ হানাফি ফকীহ ছিলেন) এর এই বিষয়ে কী মতামত ছিল? তখন তিনি জবাব দিলেন যে, তার পিতার মতামত ছিল যে, জাওরবের উপর মাসাহ বৈধ, তা পাতলা হলেও। তিনি এই বিষয়ে শাইখ কাসিমির লেখার ব্যাপক প্রশংসা করতেন। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, তিনি শাইখ ইউসুফ কারজাভির মতামত এবং তার দলিলের সাথে সম্পূর্ণ একমত ছিলেন।”

শিক্ষক মুহাম্মদ আদিল ফারিসও আমার প্রবন্ধ সম্পর্কে মন্তব্য করে আমাকে লিখেছিলেন: “আমি বলি যে আমাদের মহান শাইখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. জাওরবের উপর মাসাহ করার বৈধতার ফতোয়া দিতেন। আমি তার কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম এবং এই প্রশ্নটি সেই হোটেলের কক্ষে করেছিলাম, যেখানে তিনি অবস্থান করছিলেন। কক্ষে দুটি ধরনের পর্দা ছিল, একটি পুরু এবং অপরটি পাতলা। আমি পুরু পর্দার দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম: জাওরবের পুরুত্ব কি এর মতো হওয়া উচিত? তখন তিনি বললেন: না, অন্য পর্দার মতো পাতলা হলেও যথেষ্ট।”
—————-

# ফিকহ

> মূল :
ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য।
> অনুবাদ ও সম্পাদনা :
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *