এরপর কথার ধারা ঘুরে গেল বুদ্ধির শ্রেষ্ঠত্ব ও তার গুণাবলির দিকে। মুফতি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন:
“বলো তো, তোমার কাছে বুদ্ধির কোন দিকটি সবচেয়ে ভালো লাগে?”
আমি আরজ করলাম:
“মুফতি সাহেব! এই প্রশ্নটি থাক। ঘরের পরিবেশ এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে। আমি যদি সোজাসাপ্টা উত্তর দিই, আবার নতুন বিপদ তৈরি হবে। বরং ভালো হবে যদি আপনি যে রাগ নিয়ে ঘরে ঢুকেছিলেন, তার বিপরীতে হাসিখুশি মেজাজে বেরিয়ে যান।”
তিনি বললেন:
“ভয় করো না। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। তুমি মাওলানা থানভীকে হাকিমুল উম্মত বলে আমাকে খুশি করেছো। এখন আমি নিশ্চিত হয়েছি যে তুমি আমাদেরই লোক।”
আমি বললাম:
“এটাই কি যথেষ্ট নয় যে আমি মুসলমান?”
তিনি খোলাখুলি বললেন:
“আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি—যে হাকিমুল উম্মতের নাম নেয় না, তার ইসলাম-ইমান আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়।”
এরপর তিনি কথার সূত্র ধরে বললেন:
“নির্ভয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”
আমি আরজ করলাম:
“বুদ্ধির সবচেয়ে ভালো দিক হলো—এটি মানুষকে পরিণতির জ্ঞান দেয়।”
তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন:
“কিন্তু পরিণতি তো গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। তুমি কি তবে বুদ্ধির ওপর ভিত্তি করে গায়েব জানার দাবি করছো?”
আমি বললাম:
“না, গোটা গায়েবের দাবি করছি না। তবে বুদ্ধি এতটুকু শিখিয়েছে যে, কোনো মুফতির প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত নয়। কারণ, তিনি তোমার উত্তরে সন্তুষ্ট হবেন না, আবার নতুন প্রশ্ন করবেন। যদি সেই নতুন প্রশ্নের উত্তর দাও, তবে তিনি প্রমাণ করবেন তোমার মাসলাক ভুল। আর যদি তারও উত্তর দাও, তবে তিনি তোমাকে দ্বীন ও মিল্লাত থেকে বহিষ্কার করবেন। তাই বুদ্ধি শেখায়—যদি দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা চাও, তবে মুফতির প্রশ্নের উত্তর দিও না।”
এই কথা বলে আমি সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়ালাম এবং বাইরে বেরিয়ে গেলাম। পিছন থেকে মুফতি সাহেব চিৎকার করে বলতে লাগলেন:
“হে দুশমনে দ্বীন! আমার কথা শোনো!”
কিন্তু আমি থামা উপযুক্ত মনে করলাম না। আর সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত মুফতি সাহেবের মুখোমুখি হওয়ার সাহস আর হয়নি।
———-
ক্যাটাগরি : আখলাক/নৈতিকতা, ইসলামি আলোচনা।
—-
✍️ মূল রচনা: ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভী, অক্সফোর্ড
✍️ অনুবাদ, যাচাই ও সম্পাদনা: মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ
—-
🔗 অনূদিত মূল প্রবন্ধের লিংক: 👇
https://t.me/DrAkramNadwi/6839